‘যার আপনজন মৃত্যুশয্যায়, ক্রিকেট নিয়ে তাঁর কিছুই যায় আসে না’

আইপিএল ছেড়েছেন অ্যাডাম জাম্পা
ছবি: বিসিসিআই

অ্যাডাম জাম্পা দেশে ফিরে যাচ্ছেন। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর এই অস্ট্রেলীয় লেগ স্পিনারের দেশে ফেরার কারণ ভারতে করোনার ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউ। ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে স্বদেশি কেন রিচার্ডসনকে সঙ্গে নিয়ে আইপিএলে না খেলার সিদ্ধান্ত নিলেও আসল কারণটা জাম্পা জানিয়েছেন অস্ট্রেলীয় পত্রিকা সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে। তাঁর মতে, আইপিএলে জৈব সুরক্ষার কথা বলা হলেও সেটা নাকি নিরাপদ ও স্বস্তিকর তো নয়-ই, বরং অনেক বেশি ‘ভঙ্গুর’। ভারতে না হয়ে দুবাইয়ে আইপিএল হলেই বেশি ভালো হতো বলে মত জাম্পার।

জাম্পা মনে করেন, ‘আমি মনে করি আইপিএলের জৈব সুরক্ষা ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি ভঙ্গুর। এটা আমার মনে হওয়ার কারণ দেশটা ভারত। আমি সব সময়ই শুনে আসছি, ভারতে আসলে আলাদা করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সতর্ক হতে হয়। তাই আমার মনে হয়, এখানকার জৈব সুরক্ষা সবচেয়ে বেশি ভঙ্গুর।’

মঙ্গলবারই ভারত ছেড়েছেন জাম্পা আর রিচার্ডসন। সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে অস্ট্রেলীয় লেগ স্পিনার গত বছর সেপ্টেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আয়োজিত আইপিএলের জৈব সুরক্ষা ব্যবস্থাকে অনেকটাই নিরাপদ মনে করেন। করোনার এ পরিস্থিতিতে আইপিএলের আয়োজনটা আমিরাতেই করা যেত বলে মত তাঁর, ‘গত বছর সেপ্টেম্বরে আমিরাতে আয়োজিত আইপিএল আমার কাছে অনেক বেশি নিরাপদ মনে হয়েছিল। এবার ভারতে আইপিএল খেলতে এসে জৈব সুরক্ষা বলয় নিয়ে আমার মনের মধ্যে যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে, আরব আমিরাতে সেটি ছিল না। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, করোনার এই সময় আইপিএলের জন্য আরব আমিরাতই সবচেয়ে ভালো জায়গা।’

এ বছরের আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু জাম্পাকে কিনেছিল দেড় কোটি রুপি দিয়ে। যদিও বিদায় নেওয়ার আগপর্যন্ত কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি। তিনি সাক্ষাৎকারটিতে আইপিএল ছাড়ার বেশ কিছু কারণ তুলে ধরেছেন, ‘যেকোনো বিচারেই কোভিড পরিস্থিতি ভারতে অনেক খারাপ। রীতিমতো ভয়ংকর। আমি আইপিএলে একটি ম্যাচও খেলার সুযোগ পাইনি। খালি অনুশীলন করেই সময় কেটেছে। অনুশীলনে কেবল যেতামই। আমি কোনো প্রেরণাই খুঁজে পাইনি।’

জৈব সুরক্ষা বলয়ে বেশি দিন থাকার মানসিক ক্লান্তিও তাঁর সিদ্ধান্তের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে, ‘জৈব সুরক্ষা বলয় নিয়ে মানসিক ক্লান্তিও একটা বড় ব্যাপার ছিল। করোনা পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে আকাশ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এমন খবরগুলোও আমাকে চিন্তিত করে তুলেছিল। শঙ্কা জাগছিল মনে এখনই যদি ফিরে না যাই, তাহলে আটকে যেতে হবে।’

ভারতে করোনার এ পরিস্থিতিতে আইপিএলের আয়োজনের যৌক্তিকতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। আবার অনেকেই এটিকে খারাপ সময় মানুষের একটু স্বস্তির অনুষঙ্গ বলছেন। জাম্পা মনে করেন, এসব কথাবার্তা তাদের ব্যক্তিগত, ‘অনেকেই বলছেন আইপিএল হলে সেটি মানুষের মানসিক শক্তি ফেরাতে কাজে লাগবে। কিন্তু যারা এটা বলছে, সেটা পুরোপুরি তাদের ব্যক্তিগত অভিমত। যার পরিবারের একজন সদস্য মৃত্যুশয্যায় আছে, ক্রিকেট নিয়ে তাঁর কিছুই যায় আসে না!’

মাঝপথে আইপিএল ছাড়ার অর্থই হচ্ছে আর্থিক ক্ষতি। বেঙ্গালুরুর ফ্র্যাঞ্চাইজি নিশ্চয়ই জাম্পাকে দেড় কোটি রুপির পুরোটা দেবে না। কিন্তু তাতে জাম্পার কিছুই যায় আসে না, ‘হ্যাঁ, এটা খুব বড় আর্থিক ক্ষতি। কিন্তু আমি সব সময়ই নিজের মানসিক শান্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি।’