যে কারণে ভিভ রিচার্ডসকে এত পছন্দ করতেন ওয়ার্ন

শেন ওয়ার্ন ভিভ রিচার্ডসকে অনেক পছন্দ করতেনফাইল ছবি

ব্যাপারটা একটু হলেও চমক জাগায়। ইয়ান চ্যাপেল, গ্রেগ চ্যাপেল, অ্যালান বোর্ডার—ছোটবেলায় নিজ দেশেরই কত কিংবদন্তির খেলা দেখে বড় হয়েছেন শেন ওয়ার্ন। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে ওয়ার্নের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন একজন—ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস। তাই বলে চ্যাপেল–বোর্ডারদের যে ওয়ার্ন পছন্দ করতেন না, তা নয়। তবে ওয়ার্নের কাছে ভিভ ছিলেন সবার ওপরে।

এ কথা নানা উপলক্ষে বলেছেন ওয়ার্ন। বলেছেন তাঁর আত্মজীবনী ‘নো স্পিন’–এও, ‘ভিভ ছিলেন আমার প্রথম নায়ক। আমার চোখে শ্রেষ্ঠতম ক্রিকেটার। একজন খেলোয়াড়ের মধ্যে আমি যা যা দেখতে চাইতাম, সবই ছিল তাঁর—খেলোয়াড়ি অহম, প্রতিপক্ষের মনে ভীতি জাগানোর ক্ষমতা, আক্রমণাত্মক মানসিকতা। যখন দলের প্রয়োজন, তখন পারফর্ম করার ক্ষমতা। এমসিজিতে আমরা তাঁর খেলা দেখতে যেতাম। ভিভের কিছু শট ছিল স্রেফ অবিশ্বাস্য, বলতে পারেন অবাস্তব।’

মেলবোর্ন স্টারসে দুজন একসঙ্গে দারুণ সময় কাটিয়েছেন
ছবি: টুইটার

নিজ শহরের ফ্র্যাঞ্চাইজি মেলবোর্ন স্টারসের হয়ে যখন বিগ ব্যাশ লিগ খেলার সময় ভিভ রিচার্ডসের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পেয়েছেন ওয়ার্ন। নিজের আইডলকে পাশে পেয়ে শুধু ক্রিকেট নয়, মাঠের বাইরের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন, শিখেছেন অনেক কিছু। আত্মজীবনী থেকেই তুলে দেওয়া যাক, ‘ভিভকে মেলবোর্ন স্টারসের মেন্টর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তখন আমি তাঁর সঙ্গে সময় কাটাতে খুব পছন্দ করতাম। একদিন ড্রেসিংরুমে টিম স্পিরিট আর একে অন্যের জন্য আরও উজাড় করে দেওয়া নিয়ে তুমুল বিতর্ক হলো। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, আশির দশকের সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তর্কযোগ্যভাবে যারা সর্বকালের সেরা দল, তাদের কি গলায়–গলায় ভাব ছিল, নাকি তাদের মধ্যেও ঝামেলা ছিল?’

এমসিজিতে শেন ওয়ার্নকে শ্রদ্ধা জানাতে যাচ্ছেন সমর্থকেরা
ছবি: এএফপি

উত্তরটা একটু চমকেই দিয়েছিল ওয়ার্নকে, ‘তিনি বলেছিলেন, “বন্ধু, আমরা কখনোই সেভাবে মিলেমিশে চলতে পারিনি। হ্যাঁ, মাঠের খেলায় আমরা দেশের জন্য সবাই এক ছিলাম। তখন সবাই ছিলাম সবার বন্ধু। কিন্তু মাঠের বাইরে? এ ওকে পছন্দ করে না, ও আবার তাকে পছন্দ করে না—এসব ছিলই। আমিও দলে এমন দুজন ছিল, যাদের সহ্য করতে পারতাম না। তাই বলে ব্যক্তিগত অপছন্দের বিষয়টাকে আমরা খেলার মধ্যে আসতে দিইনি কখনো। আমরা জয়ের জন্য অনেক পরিশ্রম করতাম। জেতার জন্য আমরা সর্বস্ব উজাড় করে দিতাম। আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দিতাম না, সে হিসেবে আমরা ছিলাম একতাবদ্ধ।”’

রিচার্ডসের এই কথার সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতাও মিলিয়ে নিয়েছেন ওয়ার্ন। নিজের দলেও তো তিনি একই জিনিস দেখে এসেছেন! আত্মজীবনীতে খোলামেলাই বলেছেন তা, ‘বিষয়টা কৌতূহল জাগানোর মতো। অস্ট্রেলিয়ার যে দলের হয়ে আমি খেলা শুরু করি, তাদের সঙ্গে আমি মিলেমিশেই চলতে পেরেছি। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে বেশ কিছু খেলোয়াড় এসেছে, যাদের সবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক এক রকম ছিল না। তার মানে এই নয় যে মাঠে আমরা একতাবদ্ধ ছিলাম না। আমাদের মতের অমিল নিয়ে আমরা কখনো প্রকাশ্যে কথা বলিনি। ভিভও সেটাই বলেছিলেন আমাকে—সংবাদ সম্মেলনে আমাদের কাউকে কোনো সতীর্থের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে আমরা ভালো ভালো কথাই বলেছি। আমাদের দলেও ওই নীতি ছিল, আমরা যে কথাটাই বাইরে বলেছি, তা ছিল ইতিবাচক। ওই সাদা দাগটা পেরিয়ে মাঠে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সব ভেদাভেদ ভুলে সতীর্থের জন্য দরকার হলে জীবন বাজি রাখার মানসিকতা থাকতে হবে।’

শেন ওয়ার্ন নিজেই এর প্রমাণ রেখে গেছেন। খেলা ছাড়ার পর অনেক বিষয়েই স্টিভ ওয়াহর সমালোচনা করেছেন। কিন্তু যত দিন এক দলে খেলেছেন, স্টিভ ওয়াহ সম্পর্কে কোনো বিরূপ কথা তাঁর মুখ থেকে বের করা যায়নি।