যে কারণে সাকিবের এক ওভারে ৫ ছক্কা ক্রিস্টিয়ানের

Shamsul Haque Tanku

এর আগে তিন ম্যাচ মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া মেরেছিল ৭টি ছয়। আজ সাকিব আল হাসানের এক ওভারেই ড্যান ক্রিস্টিয়ান মারলেন পাঁচটি। আজও ক্রিস্টিয়ানের ওই পাঁচটি বাদে ছক্কা এসেছে আর মাত্র একটি। এর আগে সাকিবের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা থাকলেও ক্রিস্টিয়ান বলছেন, সাকিবের ওপর আক্রমণের আলাদা পরিকল্পনা ছিল না তাঁর। পরের ব্যাটসম্যানদের কাজটা সহজ করতেই অমন ব্যাটিং করেছেন তিনি।

একটি বলেই শুধু মারতে পারেননি ক্রিস্টিয়ান
ছবি: প্রথম আলো

ইনিংসেএ চতুর্থ ওভারে সাকিবের কাছ থেকে ক্রিস্টিয়ান তুলেছেন ৩০ রান। পরে অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েডও বলেছেন, ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে সেটি। তবে ক্রিস্টিয়ান বলছেন, সে ওভারে ভাগ্যকে পাশে পেয়েছেন তিনি, ‘সাকিবের বিপক্ষে বিগব্যাশে খেলেছি। আইপিএলেও কয়েকবার খেলেছি। ওই ওভারে আসলে আমি আমার ভূমিকা পালন করেছি। পরে আসা ব্যাটসম্যানের জন্য যাতে কাজ সহজ হয়ে যায়। আমার মনে হয় ভাগ্য ভালো যে কয়েকটা বল ব্যাটের মাঝে লেগে গেছে, পাওয়ারপ্লে-তে ব্যাটিং করার সৌন্দর্য এটাই। বৃত্তের বাইরে যখন দুজন ফিল্ডার থাকে।’

এর আগে ক্যারিয়ারে এমন কঠিন কন্ডিশন দেখেননি ক্রিস্টিয়ান, ‘আমার ক্যারিয়ারে এমন কন্ডিশন আর কোনোটির সঙ্গেই তুলনা চলে না। কঠিন যত কন্ডিশন দেখেছি, বাংলাদেশ ওপরের দিকেই থাকবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য। ১২০ রান এখানে ১৯০-এর মতো। স্পিনাররা বোলিংয়ে এলে, পেসাররা স্লোয়ার করা শুরু করলেই খেলা কঠিন হয়ে যায়। বল থেমে আসে, টার্ন করে। তার ওপর বিশাল মাঠ। একেবারেই ভিন্ন রকম ক্রিকেট।’

এ নিয়ে দ্বিতীয়বার এক ওভারে ৩০ রান দিলেন সাকিব
ছবি: প্রথম আলো

১৩১ রান, ১২৭ রান করেও সিরিজে দুটি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। আজ ১০৪ রান করলেও বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়ে গিয়েছিল শেষ ওভার পর্যন্ত। সংস্করণ টি-টোয়েন্টি বলে যদি চার-ছয়ের হইরই ভাবেন, তাহলে এ সিরিজ ভিন্ন রকম। অস্ট্রেলিয়া এ কন্ডিশনে যেন নিজেদের আবিষ্কার করেছে ভিনগ্রহের প্রাণী হিসেবে। ঘুরেফিরে সবার কথাতেই এসেছে এমন কন্ডিশনে এ স্কোয়াডের অনেক সদস্যের খেলার অভিজ্ঞতা না থাকার কথা। এবার ড্যান ক্রিস্টিয়ান বলছেন, এ কন্ডিশনে খেলাটা ‘রোমাঞ্চকর’ হলেও যে কারণে টি-টোয়েন্টির আবির্ভাব, সেটির সঙ্গে যায় না এটি।

ভিন্ন রকম ক্রিকেট হলেও টি-টোয়েন্টির ‘মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক’ বলেই মনে করেন ক্রিস্টিয়ান, ‘রোমাঞ্চকর তো অবশ্যই। তবে টি-টোয়েন্টি তো এমন কিছুর জন্য আবিষ্কার হয়নি। টি-টোয়েন্টি এসেছে চার-ছক্কা আর অনেক রানের জন্য। এখানে এমন হয়নি। তবে ক্রিকেটীয় দিক দিয়ে চমকপ্রদ ছিল। প্রতি বলই এখানে গুরুত্বপূর্ণ, প্রতিটি বাউন্ডারিরই মূল্য আছে।’

ক্রিস্টিয়ানের ছক্কায় বল বদলাতে হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে। তবে সেখানকার কন্ডিশন এতটা কঠিন হবে বলে মনে করেন না ক্রিস্টিয়ান, ‘আমার মনে হয় না, আরব আমিরাতে এমন হবে। সেখানে কিছু ম্যাচ খেলেছি আমি। বলতে পারেন শারজার মতো কিছুটা, সেখানে রাতে শিশির থাকে। তবে ২২০ সেখানে জেতার মতো স্কোর। আবুধাবি একটু ধীর গতির, তবে সেখানেও ১৭০-১৮০ রান উঠে থাকে। বিশ্বকাপের আগে আইপিএল আছে, উইকেট একটু বিধ্বস্ত থাকবে। তবে ব্যাটিংয়ের দিক দিয়ে দেখলে আপনাকে খুবই সূক্ষ্ম হতে হবে এখানে। পরিকল্পনায়, স্কিলের দিক দিয়ে। তবে স্পিনারদের জন্য দারুণ, তাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। পেসারদের স্লোয়ার বল নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। তবে আমার মনে হয় না আরব আমিরাতে এমন উইকেট পাওয়া যাবে যেখানে ১২০ রানই জেতার মতো স্কোর।’

ক্রিস্টিয়ানের ব্যাটিংয়ের আগে অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ে মূল ভূমিকাটা পালন করেছেন মিচেল সোয়েপসন। আজই প্রথম সিরিজ খেলা লেগ স্পিনার বলছেন, এ উইকেটে বল সোজা রাখাটাই কঠিন ছিল তাঁর জন্য, ‘সুযোগ পেয়ে ভালো লাগছে। বোলিংয়ের জন্য দারুণ কন্ডিশন। এর আগে এমন কন্ডিশনে খেলিনি কখনো। উপভোগ করেছি। আশা করি আরেকটা সুযোগ পাব। এমন ঘূর্ণি উইকেটে আসলে বল সোজা রাখাই কঠিন হয়ে যাচ্ছিল আমার জন্য।’

এমন কন্ডিশনে পরের ম্যাচ তিন স্পিনার খেলানোরও ইঙ্গিত দিয়েছেন অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড, ‘এমন না যে আমরা বাজে ব্যাটিং করেছি। বাংলাদেশও ভুগেছে এখানে। তবে পরের ম্যাচে আরেকবার সুযোগ পাব। ব্যক্তিগত বা দলীয় দিক দিয়ে। অবশ্যই বোলারদের আধিপত্য ছিল এ সিরিজে। আপনি দ্রুত ত্রিশ চল্লিশ করতে চাইবেন। আমরা মনে হয় পরের ম্যাচে তিন স্পিনার খেলাব।’