যে পাঁচ কারণে বিশ্বকাপে ব্যর্থ ভারত

বিশ্বকাপ থেকে হতাশা নিয়ে ফিরছে ভারতফাইল ছবি

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে ফেবারিট ছিল ভারত। বিশ্বকাপের আয়োজক তারা, দুর্দান্ত সব ক্রিকেটার দলে আর বিশ্বকাপের আগেই এক মাস সংযুক্ত আরব আমিরাতের উইকেটে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন দলের সবাই। বিশ্বকাপে ভারতই ছিল সবার জন্য মূল ভয়। সেই ভারত ২০১২ সালের পর এই প্রথম কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে।

কেন এই ব্যর্থতা? শুধু ঢালাওভাবে আইপিএল ও এর জৈব সুরক্ষাবলয়কে অনেকে দায়ী করতে চাইছেন। কিন্তু আইপিএল খেলে আসা ট্রেন্ট বোল্ট, জশ হ্যাজলউড, ডেভিড ওয়ার্নার ও কেইন উইলিয়ামসনরা ঠিকই বিশ্বকাপ মাতাচ্ছেন। তাহলে আর কী কী কারণে বিশ্বকাপে এভাবে ব্যর্থ হলো ভারত?

শাহিন শাহ আফ্রিদির স্পেল ভারতকে শেষ করে দিয়েছে
ছবি: এএফপি

প্রথমে ব্যাটিং করা

ভারতের বিখ্যাত ব্যাটিং লাইনআপ রান তাড়া করার জন্য বিখ্যাত। কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচেই প্রথমে ব্যাট করেছে ভারত। আর সে দুই ম্যাচেই পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের নিয়ন্ত্রিত পেস বোলিং ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। প্রথম দুই ম্যাচে ১০ ও ৮ উইকেটে হেরেছে ভারত।

আফগানিস্তানের বিপক্ষেও প্রথমে ব্যাট করেছে ভারত। সে ম্যাচে অবশেষে ফর্ম ফিরে পেয়েছেন রোহিত শর্মারা। রোহিতের ৪৭ বলে ৭৪ রানে ভারত ২১০ রান করলেও মূল সর্বনাশ তো আগেই হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে ভারতের বোলিং কোচ ভরত অরুণ জানান, ‘টস খুব মাত্রাহীন সুবিধা দিয়েছে। আর এ কারণেই প্রথমে ব্যাট করা ও দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করায় অনেক পার্থক্য। এত ছোট সংস্করণে এমনটা হওয়া উচিত নয়।’

শিশির

ভারতের বোলিং লাইনআপ এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা। দেশের বাইরে এত এত সাফল্য তারা উন্নত বোলিং লাইনআপের কারণেই পাচ্ছে। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জেতাতে ভারতের পেস বোলিং বড় ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু সে লাইনআপ প্রথম দুই ম্যাচে মাত্র দুই উইকেট পেয়েছে। যশপ্রীত বুমরা ছাড়া দাগ কাটতে পারেননি কেউ। এর পেছনে শিশির বড় ভূমিকা রেখেছে বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু সেই বোলিং লাইনআপই আফগানিস্তানকে ১৪৪ রানে আটকে দিয়েছিল তৃতীয় ম্যাচে। বোলিং কোচ অরুণ তাই শিশিরের ভূমিকা দেখলেও একে পুরো দায় দিচ্ছেন না, ‘আমাদের আরও ভালো করার পাশাপাশি ভালো ব্যাট করা উচিত ছিল। আর প্রথম ম্যাচে ওই রান রক্ষা করার চেষ্টার সুযোগ ছিল, কিন্তু আমরা নিজেদের মানে ছিলাম না।’

বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে আইপিএল ভারতের ক্ষতি করেছে
ছবি: বিসিসিআই

আইপিএল

১৫ অক্টোবর শেষ হয়েছে আইপিএল। ফলে বিশ্বকাপের জন্য ভারত দলের সবাইকে একত্রে পেয়েছে ১৭ অক্টোবর। তত দিনে বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব শুরু হয়ে গেছে। নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের পর আইপিএল ও এর আগে টানা সিরিজ খেলাকে দায়ী করেছিলেন পেসার বুমরা। বোলিং কোচও মানছেন বিশ্বকাপের পরিকল্পনায় খুঁত ছিল ভারতের, ‘টানা ছয় মাস এভাবে খেলা খুব কঠিন...এবং এটা অনেক বড় প্রভাব ফেলেছে।’

ধোনি

ভারত দলে এমনিতেই বিভক্তির কথা নিয়মিতই শোনা যায়। অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও সহ–অধিনায়ক রোহিত শর্মার মধ্যে দ্বন্দ্ব সুযোগ পেলেই তুলে আনার চেষ্টা করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। সময়ের সেরা দুই ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিত্বের এই ঠান্ডা লড়াইয়ে এ বিশ্বকাপে আবার যোগ হয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। দলের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল মাত্রই চতুর্থ আইপিএল জেতা ধোনিকে। একটি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা এ অধিনায়কের নিয়োগ ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু সাবেক ব্যাটসম্যান গৌতম গম্ভীর একজন প্রধান কোচ, সহকারী কোচ ও বোলিং কোচ থাকার পরও ধোনির ভূমিকা কী হবে—এ নিয়ে প্রশ্ন রেখেছিলেন।

আগেই বিদায় বলে ভুল করেছেন কোহলি?
ছবি: এএফপি

কোহলির বিদায়

টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে এ বিশ্বকাপই বিরাট কোহলির শেষ পরীক্ষা। আগেই সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাখায়, এটা দলকে কিছুটা হলেও অস্থিতিশীল করেছে। কেউ কেউ তো ধোনির জন্য হলেও বিশ্বকাপ জেতার আহ্বান জানিয়ে দলকে বাড়তি চাপের মধ্যেই ফেলে দিয়েছেন। গৌতম গম্ভীরের ধারণা, টুর্নামেন্টের আগে এমন ঘোষণা দলকে আবেগী করে তোলে এবং সেটা দলের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়।