যে 'রোগ' সাকিবকে ভাবাচ্ছে

ইমরুল-লিটনের ওপেনিং জুটিটাও দাঁড়ায়নি।
ইমরুল-লিটনের ওপেনিং জুটিটাও দাঁড়ায়নি।
>ধারাবাহিক সাফল্য পাচ্ছে বাংলাদেশ। এই ভালো খবরে অস্বস্তি হয়ে বিঁধছে ওপেনিং জুটির ধারাবাহিক ব্যর্থতা। কাল সাদমান ইসলামের অভিষেক হলে ১১ টেস্টে বাংলাদেশের নয়টি ওপেনিং জুটি দেখা যাবে।

বাংলাদেশ দলের যিনিই সংবাদমাধ্যমের সামনে আসছেন, গত কিছু দিন তাঁকেই শুনতে হচ্ছে প্রশ্নটা, ‘ওপেনিং জুটি নিয়ে কী ভাবছেন?' কিংবা ‘ওপেনিং জুটি নিয়ে কতটা উদ্বিগ্ন?’ বাংলাদেশ ভালো কিংবা খারাপ যে ফলই করুক, ওপেনিং জুটির কোনো উন্নতি নেই। প্রশ্ন তো উঠবেই।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে জেতার দিনেও সাকিব আল হাসানকে যেমন বলতে হলো ওপেনিং জুটি নিয়ে, ‘প্রতিদিন ১০ রানে ২ উইকেট থাকা খুবই দুঃখজনক বিষয়। সব ম্যাচে তিন-চার-পাঁচ-ছয়ের ব্যাটসম্যান গিয়েই রান করবে, সে নিশ্চয়তা নেই। যদি এমন না হয় তাহলে একটু স্বস্তির জায়গা পাওয়া যায়। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য সতর্কবার্তা।’

সাকিব আশা করেছিলেন তামিম ইকবাল ফিরলে ওপেনিং জুটি নিয়ে দুশ্চিন্তা কমবে। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খানও দুদিন আগে সাকিবের কথারই পুনরাবৃত্তি করেছিলেন, ‘আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তামিম এখনো চোট কাটিয়ে উঠতে পারেনি।’ চোট থেকে পুরোপুরি সেরে না ওঠায় তামিম ফিরছেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টেও। চোটে পড়ে নেই ইমরুল কায়েসও। মিরপুর টেস্টে সাদমান ইসলামের টেস্ট অভিষেক হওয়ার তাই জোর সম্ভাবনা। সাদমান যদি সৌম্য সরকারের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামেন, সবশেষ তিন টেস্টে তিনবার ওপেনিং জুটিতে বদল আনতে হবে বাংলাদেশ। সবশেষ ১০ টেস্টে দেখা গেছে আটটি ওপেনিং জুটি। সাদমানের অভিষেক হলে সেটি পৌঁছাবে নয়ে। গত বছর সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুই তিন টেস্টে তিনবার ওপেনিং জুটি বদলেছে। এর মধ্যে একটি অবশ্য ক্রিকেটীয় আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে পচেফস্ট্রুম টেস্টে তামিমকে নামতে হয় পাঁচে। চোটে পড়ার আগে গত জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর পর্যন্ত তামিমই ছিলেন ওপেনিং জুটিতে নিয়মিত ব্যাটসম্যান। বদলেছেন শুধু অন্যপ্রান্তের সঙ্গী। তামিমের সঙ্গে ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, লিটন দাসই এসেছেন ঘুরেফিরে। কেউ প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে পারেননি। তামিম চোটে পড়ায় সুযোগ ছিল দায়িত্বটা নিজেদের কাঁধে নেওয়ার। সেটিতেও তাঁরা ব্যর্থ।

ওপেনিং জুটি ঘনঘন বদলের অর্থই বাংলাদেশের নড়বড়ে শুরু। গত ৬ টেস্টে মাত্র একবারই বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি ৫০ পেরিয়েছে, সেটিও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে। বাকি ১১ ইনিংসে সর্বোচ্চ ২০ রান এসেছে উদ্বোধনী জুটি থেকে। ওপেনাররা ভালো শুরু না এনে দিতে পারলে স্বাভাবিকভাবে চাপ পড়ে তিন কিংবা চার নম্বর পজিশনে নামা ব্যাটসম্যানদের। দ্রুত উন্মুক্ত হয়ে যায় মিডল অর্ডার। দলকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর এনে দিতে গলদঘর্ম অবস্থা হয় মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের। শুরুটা ভালো না হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ড্রেসিংরুমে, অনেক সময় আত্মবিশ্বাসও টলে যায় খেলোয়াড়দের।

বাংলাদেশের ওপেনিং জুটির ধারাবাহিক ব্যর্থতায় যাঁকে বেশির ভাগ সময় ইনিংসের মেরামতের কাজটা করতে হচ্ছে তিনি মুমিনুল হক। এ বছর যে চারটি সেঞ্চুরি পেয়েছেন দুটিই বিপর্যয় সামলে। আরও একটি ওপেনিং জুটি দেখার সম্ভাবনা যখন জোরালো, নিয়মিত তিনে নামা মুমিনুল সেটি অবশ্য দেখছেন ইতিবাচকভাবেই, ‘যদি শুরুতে বিপর্যয় হয় আমার চাপ হবে কি না? আপনি ক্রিকেট খেলবেন চাপ তো আসবেই। চাপটা সামলানোও জানতে হবে। সব সময়ই চেষ্টা করি, চাপ কাটিয়ে উঠতে। আপনারা যেভাবে চিন্তা করছেন ওটা অনেক জটিল। এমন জটিল চিন্তা না করার চেষ্টা করি।’ তবে তিনি আশাবাদী, সাদমান সুযোগ পেলে তিনি হতাশ করবেন না।

ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ধবলধোলাইয়ের অভিযানে নামার আগে সাকিবকে বেশ ভাবাচ্ছে ওপেনিং জুটির রোগটা। ওপেনিং জুটি কেন বারবার বদলাতে হচ্ছে, আজ সেটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক, ‘শুরুটা আসলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সব সংস্করণেই শুরুটা গুরুত্বপূর্ণ। ওপেনাররা বলটা যেন পুরোনো করে দিয়ে আসতে পারে বা একটা ভালো জুটি গড়ে দিয়ে আসতে পারে। তাহলে খেলাটা অনেক সহজ হয়। এই জায়গায় আমরা বেশি সফল হয়নি। বোলিংয়ে হয়েছি, ব্যাটিংয়ে হইনি। এ কারণে অনেকগুলো ওপেনিং জুটি দেখা গেছে। আমাদের মনে হয়েছে, বারবার বদল এলে একটা না সময় এসে ওরকম কাউকে আমরা পাব। ওই ভরসার জায়গাটা তৈরি করা খুব জরুরি। আশা করব আমরা ওরকম কাউকে পেয়ে যা যাতে আমাদের ভিতটা গড়ে উঠবে। ওপেনিংয়ে একটা ভালো জুটি হলে পরের ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা সহজ হয়, দলের ভেতর একটা স্বস্তি তৈরি হয়। খুব ভালো একটা অবস্থানে আসতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওপেনিং জুটি। মুমিনুল এ বছর চারটা সেঞ্চুরি করেছে, খুবই ভালো। আমাদের ওপেনারদের কাছ থেকে যদি এ রকম এক-দুইটা সেঞ্চুরি বা বড় রান আসে বা জুটিটা যদি ৫০ পেরিয়ে যায় তাহলেও আমাদের জন্য বড় স্বস্তির।’

কথায় বলে মাছের পচন মাথা থেকে, অনেক সময় একটা ইনিংসের ‘পচন’ও হয় ওপেনিং জুটি থেকে। মিডল কিংবা লোয়ার মিডল অর্ডারের দৃঢ়তায় প্রায়ই উদ্ধার হচ্ছে বাংলাদেশ। সাকিব যেট বললেন, প্রতিদিন মিডল, লোয়ার মিডল অর্ডার বাঁচাবে না। ওপেনিং জুটির অসুখটা সারানো তাই অনিবার্য হয়ে পড়েছে।