যেভাবে পন্টিংয়ের মুখ বন্ধ করেছিলেন লারা

খেলার মাঠে দুজনের দ্বৈরথের মাত্রা কম ছিল না।ছবি : রয়টার্স

দুজন খেলোয়াড়ি জীবন শেষ করেছেন বহু আগে। এখন ধারাভাষ্যকক্ষেই দেখা যায় তাঁদের। চলতে থাকা অস্ট্রেলিয়ার ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ বিগ ব্যাশ টি-টোয়েন্টিই যেমন, এককালের প্রবল এই দুই প্রতিপক্ষকে মিলিয়ে দিয়েছে ধারাভাষ্যকক্ষে। এখন তাঁরা পরম বন্ধু, একসঙ্গে হাসতে হাসতে স্মরণ করেন অতীত দিনের স্মৃতি। আর টিভি দর্শকেরা পান অমূল্য কিছু অভিজ্ঞতার ছোঁয়া।

বলা হচ্ছিল রিকি পন্টিং ও ব্রায়ান লারার কথা। দুজনই নিজ নিজ দলের সেরা তারকা ছিলেন, পন্টিং অস্ট্রেলিয়ার, লারা ওয়েস্ট ইন্ডিজের। মাঠের লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেননি। পন্টিং এমনিতেই অধিনায়ক হিসেবে বেশ আগ্রাসী ছিলেন। লারা সে তুলনায় চুপচাপ, নিজের কাজটা ঠিকই করে যেতেন, তা যত বাধাবিপত্তিই আসুক না কেন। এখন দুজনই ব্যাট-প্যাড তুলে ধারাভাষ্যকক্ষে প্রবেশ করেছেন। ক্যারিয়ারের পাশাপাশি আগ্রাসন বা শত্রুতার বিষয়টাও রেখে এসেছেন মাঠেই।

এখন একসঙ্গে হেসেখেলে অতীত দিনের স্মৃতিচারণা করেন। সেদিনই যেমন, সেভেন ক্রিকেটের হয়ে বিগ ব্যাশ লিগে ধারাভাষ্য দিতে দিতে মজার এক ঘটনা বলেছেন দুই কিংবদন্তি। ঘটনাটা পন্টিংয়ের লারাকে ‘স্লেজিং’ করা নিয়ে।

প্রথমে ঠেকিয়ে ঠেকিয়ে খেললেও পরে সে যুগের তুলনায় রীতিমতো ওয়ানডে স্টাইলেই ব্যাট চালিয়েছিলেন লারা।
ছবি : রয়টার্স

সে ম্যাচে যদিও পন্টিংয়ের হাতে অধিনায়কত্ব ছিল না। অধিনায়ক হিসেবে সে টেস্টে দায়িত্ব পালন করেছিলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। তাতে পন্টিংয়ের কী আসে যায়? স্লেজিং তো চলবেই!

পন্টিংয়ের মুখেই শোনা যাক ঘটনাটা, ‘আমরা অ্যাডিলেডে একটা টেস্ট ম্যাচ খেলছিলাম। লারা একদম কোনো শটই খেলছিল না। ও এসে ৩০-৪০টা বলে কিছুই করল না। তখন আমি গিয়ে ওকে বললাম, ‘ব্রায়ান, দুর্দান্ত খেলছ তুমি। ব্যাটিং করে ফাটিয়ে দিচ্ছ একদম! সবাই ঘুমিয়ে যাচ্ছে তোমার দুর্দান্ত ব্যাটিং দেখে।’

পন্টিং যে খেলার কথা বলছিলেন তা দুই দশক আগের এক টেস্ট। ২০০০ সালের ডিসেম্বরে সেই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথমে ব্যাট করতে নেমেছিল।

স্লেজ করে সেদিন সুবিধা করতে পারেননি পন্টিং।
ছবি : রয়টার্স

একপর্যায়ে পেসার জেসন গিলেস্পির তোপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ একে একে শেরউইন ক্যাম্পবেল, ড্যারেন গঙ্গা ও ওয়াভেল হাইন্ডসের উইকেট তিনটি হারিয়ে বসে ৮৬ রানের মাথায়। অধিনায়ক জিমি অ্যাডামসকে নিয়ে তখন ইনিংস মেরামতের কাজে লেগে যান দলের সেরা ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারা।

আস্তে আস্তে শুরু করলেও পরে ঠিকই রান তোলেন দ্রুতলয়ে। পন্টিংয়ের হাজারো স্লেজিং সেদিন দমিয়ে রাখতে পারেনি লারাকে। চতুর্থ উইকেটে অ্যাডামসের সঙ্গে ১৮৩ রানের জুটি গড়েন লারা।

২৩৫ বলে নিজে খেলেন ১৮২ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস। প্রথমে ঠেকিয়ে ঠেকিয়ে খেললেও পরে সে যুগের তুলনায় রীতিমতো ওয়ানডে স্টাইলেই ব্যাট চালিয়েছিলেন লারা। ২৯টি চারের পাশাপাশি মেরেছিলেন একটা ছক্কা।

এরপর পন্টিংয়ের অবস্থা কেমন হয়েছিল? জেনে নিন তাঁর মুখ থেকেই, ‘দেড় ঘণ্টা পর দেখা গেল, ও ১৮০ রানের মতো করেছে। খেলা শেষ হওয়ার পর শার্টে অটোগ্রাফ দিয়ে ও লিখেছিল, অনুপ্রেরণার জন্য ধন্যবাদ। শুভকামনা, ব্রায়ান লারা।’

বড় ব্যাটসম্যানরা বুঝি এমনই হন। কোনো কিছুই আটকে রাখতে পারে না তাঁদের।