রাজনীতিতে আসবেন না, বিজেপিকে জানিয়ে দিলেন সৌরভ

কানাঘুষার অবসান হলো অবশেষে
ছবি: এএফপি

সৌরভ গাঙ্গুলী রাজনীতিতে আসছেন? এমন জল্পনাকল্পনা চলছিল বেশ অনেক দিন ধরে। বিশেষ করে ২০১৯ সালের অক্টোবরে বিজেপি সরকারের হাত ধরে ভারতের সাবেক অধিনায়ক যখন ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হলেন, তখনই জল্পনাটা ডালপালা মেলেছিল। কিন্তু সৌরভ ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন, এখনই রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা নেই তাঁর।

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে সৌরভের সচিব জয় শাহ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পুত্র। দুজন জুটি বেঁধে ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ক্রিকেট প্রশাসন চালাচ্ছেন। সৌরভ যখন বিসিসিআইয়ের সভাপতি হলেন তখনই ভাবা হয়েছিল বিজেপিতে যোগ দিয়ে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে লড়বেন, এমন শর্তেই তাঁকে বোর্ডপ্রধান করা হয়েছে। কিছুদিন আগে সৌরভ–পত্নী ডোনা গাঙ্গুলীও রাজনীতির মাঠে সৌরভের ‘সফল’ হওয়া নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন এক সাক্ষাৎকারে। সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, সৌরভ মাঠে যেমনি সফল হয়েছে, দেশের অধিনায়কত্বে সফল হয়েছে, ক্রিকেট প্রশাসনেও সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে, ঠিক তেমনি সে রাজনীতিতে এলেও সফল হবে। ডোনার এই কথার পর সৌরভের রাজনীতির ময়দানে আগমনের অপেক্ষাতে ছিলেন সবাই। তবে কালকের পর নিশ্চিত হয়ে গেছে, সৌরভ রাজনীতিতে আসায় এখনই তেমন আগ্রহ বোধ করছেন না।

এখনই রাজনীতিতে নয়, জানিয়ে দিলেন সৌরভ
ছবি: এএফপি

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। এবার বিধানসভা নির্বাচনে মুখোমুখি রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস ও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলকে নেতৃত্ব দিলেও বিজেপির সে মাপের কোনো নেতৃত্ব পশ্চিমবঙ্গে সেই। তবে নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে নানা ধরনের চমক দিচ্ছে। তাদের লক্ষ্য তারকা ও মুখচেনা ব্যক্তিত্বরা। ইতিমধ্যেই সিনেমা জগতের বেশ কয়েকজন তারকা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কানাঘুষা ছিল মুখ্যমন্ত্রী হতেই সৌরভ বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন।

৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কলকাতায় এক সমাবেশে ভাষণ দেবেন। গুজব উঠেছিল সৌরভ সেদিনই মঞ্চে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দেবেন। বুধবারই বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে কলকাতার গণমাধ্যম জানিয়েছে, এমন সম্ভাবনা কার্যত শেষ হয়ে গেছে। সৌরভ এখনই রাজনীতিতে আসতে রাজি নন, এটা এরই মধ্যে বিজেপি হাই কমান্ডকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সৌরভ নিজে অবশ্য এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। সংবাদমাধ্যমের তরফ থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও করা হয়েছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যম সফল হয়নি।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও ভারতীয় লোকসভায় মেদিনীপুরের সংসদ সদস্য দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, সৌরভের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। তাঁদের কোনো বৈঠকেও সৌরভকে নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

গত জানুয়ারিতে হঠাৎ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন সৌরভ। হৃদ্‌যন্ত্রের ধমনিতে ধরা পড়ে ব্লক। এ জন্য স্টেন্টিংও করতে হয়েছে। প্রথম দফায় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যে আবারও তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। আপাতত শারীরিক পরিশ্রমের কাজ থেকে কিছুটা দূরেই আছেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজের একটি টেস্টেও তাঁকে মাঠে দেখা যায়নি।

গত বুধবার আহমেদবাদে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামে। দিবারাত্রির টেস্টের উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু সেখানে সৌরভ যাননি। এখনই রাজনীতিতে না আসার কারণ হিসেবে তাঁর শারীরিক অবস্থার কথাও বলেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে যে ধরনের নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করছেন তিনি, তাতে রাজনীতি বেশ কঠিনই হয়ে যায় সৌরভের জন্য।