রান শুকিয়ে দিন জিতল বাংলাদেশ

কিপটে বোলিং সাফল্য এনে দিয়েছে জায়েদকে।ছবি: প্রথম আলো

অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ বল করছিলেন লং অন ও মিড উইকেট বাউন্ডারিতে ফিল্ডার রেখে। বল একটু এদিক-ওদিক হলে ব্যাটসম্যান লং অনে ঠেলে রান নিচ্ছিলেন। পায়ের ওপর বল পেলে মিড উইকেটে ঠেলে দিচ্ছেন। দিনের শেষে নতুন বল নেওয়ার পর আরেকটি দৃশ্য যে কারও নজরে আসার কথা। আবু জায়েদের হাতে নতুন বল। স্লিপে তিনজন ফিল্ডার অপেক্ষা করছেন জায়েদের আউট সুইং থেকে ব্যাটসম্যান এনক্রুমা বোনারের ক্যাচ নেওয়ার জন্য। আর পয়েন্টের ফিল্ডার ঠিক বাউন্ডারি লাইনে। ওভারের দু-একটি বল এদিক-ওদিক হলেই কাট শট খেলার সুযোগ পান ব্যাটসম্যান। ফিল্ডার ৩০ গজে থাকলে বাউন্ডারি হতে পারে। সেই বাউন্ডারি এড়াতেই কিনা একজনকে সীমানায় রাখা।

খালি চোখে মনে হবে মুমিনুল হক নেতিবাচক অধিনায়কত্ব করছেন। কিন্তু আজ দিনের শুরুতে খেলা দেখলে আঁচ করা যায় যে কেন বাংলাদেশ বাউন্ডারিতে ফিল্ডার রেখে বল করেছে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সকালের দিকে ব্যাটিং করা এমনিতেই একটু কঠিন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের এক দিনের ম্যাচ হোক কিংবা টেস্ট ম্যাচ—সকালের দিকে ১০ রানের মধ্যে এক–দুইটা উইকেট পড়া তো ঢাকার মাঠে নিয়মিত চিত্র!

রান আতকানোতেই মন ছিল তাইজুলদের।
ছবি: প্রথম আলো

কিন্তু আজ ঘটল সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘটনা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমেই বাউন্ডারি মারা শুরু করে! স্পিনার কিংবা পেসার—কোনো বোলারকেই থিতু হতে না দিয়ে ব্যাট চালাতে থাকেন ক্যারিবীয় ওপেনার ক্রেইগ ব্রাফেট ও জন ক্যাম্পবেল। প্রথম দশ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান রেট ছিল ৩.৫০, পরের পাঁচ ওভারে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৩.৬৬। ৮টি চার ও ৬টি ছক্কা মারেন দুই ক্যারিবীয় ওপেনার। যেন চট্টগ্রাম টেস্টের পঞ্চম দিনের ব্যাটিংটা ঢাকাতেও করছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা।

মুমিনুলের তো তখন মাথায় হাত। এ কী হচ্ছে! এভাবে রান করলে তো প্রথম সেশনেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ নাগালের বাইরে চলে যাবে। প্রথম ঘণ্টার পানি পানের বিরতির পর গল্পটা পাল্টায়। বাংলাদেশ আটঘাট বেঁধে নামে রান শুকানোর মিশনে। পরের ঘণ্টায়ই ফল পায় বাংলাদেশ। রানরেট নেমে আসে ওভারপ্রতি ২.৯০ রানে। উপহার হিসেবে পায় ক্যাম্পবেলের উইকেট।

রক্ষণাত্মক হতে বাধ্য হয়েছেন মুমিনুল।
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকায় দ্বিতীয় সেশনে সাধারণত ব্যাটসম্যানরা দাপট দেখান। সূর্যের তাপ যত বাড়ে, উইকেটের বৈরী আচরণও কমে আসে। আজ যেন একটু অন্য রকমই হলো। আবু জায়েদ প্রথম স্পেলে একটু পেছনে বল করলেও দ্বিতীয় স্পেলে এসে খুঁজে পান নিজের সহজাত লাইন-লেংথ। রান শুকিয়ে ফেলার কাজটা সফলভাবে করেন এই পেসার। লাঞ্চের পর ৫ ওভারের এক স্পেলে মাত্র ৫ রান দিয়ে ১ উইকেট আদায় করেন। একই সেশনে সৌম্য ও জায়েদ আরও দুবার আঘাত হানেন। দ্বিতীয় সেশনে রানরেট ছিল মাত্র ২.১৪।

রান থামিয়ে যে উইকেট আদায় করা যায়, সেটি স্পষ্ট হয় ম্যাচের নায়ক কাইল মেয়ার্সের আউটে। জায়েদের বলে রান খুঁজে না পেয়ে প্রায় বিরক্ত হয়েই বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি। ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ ঠিক তখনই বলে ওঠেন, ‘রান শুকানো বোলিং করার আরেকটি উপহার পেল বাংলাদেশ।’ একই ধারা বজায় থাকে দিনের শেষ সেশনেও। পুরো সেশনে বাংলাদেশ মাত্র চারটি বাউন্ডারি খরচ করে। রানরেট ছিল ২.৪০, উপহার হিসেবে পায় আরেকটি উইকেট।

ঢাকা টেস্টের দিন শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে ২২৩ রান করে। অথচ প্রথম সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছিল ১ উইকেটে ৮৪ রান। দিন শেষে মুমিনুল একটু স্বস্তি অনুভব করতেই পারেন। উড়তে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সারা দিন পরিশ্রম করে মাটিতে নামিয়ে আনতে পেরেছে বাংলাদেশ।