রাহুল দ্রাবিড়ের কারণেই অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন কোহলি?

কোহলির অধিনায়কত্ব ছাড়ার একটা কারণ রাহুল দ্রাবিড়ছবি: এএফপি

হঠাৎ করেই টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিলেন বিরাট কোহলি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেপটাউন টেস্টে জিতে সিরিজ নিশ্চিত করতে পারলে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিতেন কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সাবেক তারকা সঞ্জয় মাঞ্জরেকার তো সোজাসুজিই মন্তব্য করেছেন ব্যাপারটা নিয়ে। মাঞ্জরেকার মনে করেন, আগামীতে সরিয়ে দেওয়া হবে—এটা ভেবেই কোহলি নাকি নিজে থেকেই টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। রাহুল দ্রাবিড়কেও একটা বড় কারণ মনে করেন তিনি।

কোহলির মনে যদি ‘সরিয়ে দেওয়া’ আতঙ্ক থেকে থাকে, সেটা একেবারেই অমূলক নয়। গত সেপ্টেম্বরে ঘোষণা দিয়েছিলেন টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ২০ ওভারের ক্রিকেটে আর অধিনায়কত্ব করবেন না। এর আগে ছেড়েছিলেন আইপিএলে নিজ দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অধিনায়কত্ব। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর রোহিত শর্মা টি–টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব নিলেন। কোহলি ভেবেছিলেন, এবার নির্ভার হয়ে ওয়ানডে আর টেস্টের অধিনায়কত্ব করবেন।

শাস্ত্রীর অধীনে অনেক স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করতে পারতেন কোহলি
ফাইল ছবি: এএফপি

কিন্তু বিধিবাম, কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁকে ৫০ ওভারের ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো। সেটা নিয়েও কত জলঘোলা! ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড নাকি চায়নি কোহলি ওয়ানডের অধিনায়ক থাকুন। বোর্ড সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী তো জানিয়ে দিলেন, কোহলি টি–টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব ছাড়ুক এটাই তাঁরা চাননি, ছেড়েই যখন দিয়েছেন, তখন তাঁকে সাদা বলের ক্রিকেটেই আর অধিনায়ক না রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তবে ব্যাপারটি নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগেই মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন কোহলি, বোর্ডের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, বোর্ড নাকি তাঁকে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছাড়তে মাত্র দুই দিন সময় দিয়েছিল।

এবার টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়লেন। এমনিতেই খুব একটা ভালো ফর্মে নেই। ২০১৯ সালের পর থেকে হন্য হয়ে একটা শতক খুঁজছেন। তার ওপর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ের সূবর্ণ সুযোগ হারিয়েছেন। সেঞ্চুরিয়নে প্রথম টেস্ট জিতেও জোহানেসবার্গ আর কেপটাউনে পরের দুটি টেস্টে হেরে সিরিজ হেরেছে ভারত। কোহলি কেপটাউনে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন লড়ার। কিন্তু তাতে কিছু হয়নি। কোহলি কি আসলেই ভেবেছিলেন, তাঁকে টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে? ওয়ানডে অধিনায়কত্বটা যেভাবে হারিয়েছেন, তাতে মনে সন্দেহ জাগাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কেপটাউনে টেস্ট হেরে ড্রেসিংরুমে ফিরেই নাকি কোহলি সতীর্থদের জানিয়ে দেন, তিনি আর সাদা পোশাকে দলকে নেতৃত্ব দেবেন না।

কোহলি ভেবেছিলেন, তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হবে!
ছবি: এএফপি

মাঞ্জরেকার কোহলির অধিনায়কত্ব ছাড়ার পেছনে কয়েকটি কারণের কথা বলেছেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, আগে থেকে অধিনায়কত্ব হারানোর শঙ্কা। তবে সাবেক এই ভারতীয় তারকা, আরও একটি বড় কারণের কথা উল্লেখ করেছেন এর বাইরে। সেটি হচ্ছে, নতুন কোচ রাহুল দ্রাবিড়। মাঞ্জরেকারের মতে, রবি শাস্ত্রীর অধীনে যতটা স্বাধীনতা নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে অধিনায়কত্ব করতেন কোহলি, দ্রাবিড় নতুন কোচ হয়ে আসার পর সেটি করতে পারছেন না। দ্রাবিড়ের মতো ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ও ব্যক্তিত্ব ড্রেসিংরুমে থাকায় কোহলির জায়গাটা ছোট হয়ে আসছে।

মাঞ্জরেকার এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমার তো মনে হয়, কোহলি আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিল, টেস্টেও ওর অধিনায়কত্ব সুরক্ষিত নয়। বিশেষ করে ওয়ানডে অধিনায়কত্বটা সে যেভাবে হারিয়েছে, তাতে সন্দেহ তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।’

অন্য কারণগুলো প্রসঙ্গে মাঞ্জরেকারের মন্তব্য, ‘রাহুল দ্রাবিড়ের উপস্থিতিও একটা কারণ হতে পারে। রবি শাস্ত্রীর অধীনে অধিনায়ক হিসেবে কোহলি পুরোপুরি স্বাধীনতা উপভোগ করেছে। দ্রাবিড়ের অধীনে সেটি পাচ্ছে না হয়তো। ফর্মের ব্যাপারটিও মাথায় রেখেছে সে। এখন নিজের ফর্ম নিয়ে কাজ করার সময় এসেছে বলে হয়তো সে মনে করছে। ফর্মের দিক দিয়েও তো সে খুব ভালো অবস্থানে নেই।’

দ্রাবিড়ের অধীনে অধিনায়কত্ব করতে কেন স্বচ্ছন্দ নয় কোহলি, সেটির ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মাঞ্জরেকার, ‘মনে করে দেখুন, অনিল কুম্বলে যখন কোচ ছিল, তার অধীনে একেবারেই স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে কাজ করতে পারেনি কোহলি। রবি শাস্ত্রীর অধীনেই সে মুক্ত বিহঙ্গ ছিল। দ্রাবিড়ের অধীনে কুম্বলে জমানার ব্যাপার–স্যাপার ঘটতে পারে বলেই হয়তো শঙ্কা ছিল কোহলির মনে।’