রুটের ইতিহাসে পিষ্ট ভারত

ইতিহাসে নাম লিখিয়েই যাচ্ছেন রুট।
ছবি: বিসিসিআই

ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ শুরুর আগেই ইংলিশ শিবির বিরাট কোহলিকে সমীহ করে অনেক কথাই বলা শুরু করেছিল। যথারীতি কোহলিই ইংল্যান্ডের যন্ত্রণার কারণ হবেন, সেটাই মনে করা হচ্ছিল। এসব আলাপ বোধ হয় জো রুটের তেমন পছন্দ হয়নি। কোহলি এখনো ব্যাট করতে নামেননি, নামলে কী কী করেন, এখন থেকে সেটা বলা যাচ্ছে না, কিন্তু তার আগেই রুট দেখিয়ে দিলেন, এই সিরিজি শুধু কোহলির ব্যাটিং নৈপুণ্যের সিরিজ হতে যাচ্ছে না। আছেন তিনিও। নিজের শততম টেস্টে ভারতের মাটিতে ডাবল সেঞ্চুরি করে নিজের জাতটা আরেকবার চেনালেন এই ইংলিশ তারকা।
আর এই এক ডাবল সেঞ্চুরিতেই ঝাঁকে ঝাঁকে রেকর্ড লুটিয়েছে এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের পায়ের তলায়। ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের শততম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করার বিরল কৃতিত্ব গড়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক। আর তাতেই চেন্নাইয়ে সিরিজের প্রথম টেস্টে ভারতীয় বোলারদের ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়া সফরের চেয়ে ভালো পেস আক্রমণ নিয়েও দুই দিনে ইংল্যান্ডকে অলআউট করতে পারেনি ভারত। ৮ উইকেটে ৫৫৫ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে ইংল্যান্ড।

দুর্দান্ত ফর্মে আছেন রুট।
ছবি: বিসিসিআই

রুটের ডাবল সেঞ্চুরিটা এলই-বা কী রাজকীয়ভাবে। আত্মবিশ্বাসের বিন্দুমাত্র ঘাটতিও যে নেই এই রুটের মধ্যে, সেটাই প্রমাণ করার জন্য যেন ছক্কা মেরে ডাবল সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন রুট। এর আগে কোনো ইংলিশ ক্রিকেটারের এই কৃতিত্ব ছিল না। তবে সব মিলিয়ে মোট ১৯ জন এই কাজ করেছেন। সর্বশেষ স্মৃতিটায় জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নামও। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নেমে ছক্কা মেরে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন ভারতীয় ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়াল।

ছক্কা মেরে ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তিটার কথা আগে বলা হলেও রুটের অনন্য দুই কীর্তি আগেই হয়ে গেছে। প্রথম কোনো ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করায় শততম টেস্টে সর্বোচ্চ ইনিংসটির মালিক এখন তিনিই। আগে যেটা ছিল ইনজামাম-উল-হকের (১৮৪) দখলে। তবে রুটের সবচেয়ে বড় কীর্তিটা দেড় শ রানের পরই হয়ে গেছে। সেই কবে ১৯৩৭ সালে স্যার ডন ব্র্যাডম্যান টানা তিন টেস্টে দেড়শোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছিলেন। এরপর আরও চারজন সেটা করেছেন। কিন্তু তারা কেউই দলের অধিনায়ক ছিলেন না। টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে টানা তিন টেস্টে দেড় শ রানের ইনিংস খেলা একমাত্র অধিনায়কের গৌরবে এখন ব্র্যাডম্যানের পাশে থাকবেন রুটও।

স্পিনারদের পাত্তা দেননি স্টোকস।
ছবি: বিসিসিআই

স্পিনার শাহবাজ নাদিমের বলে অবশেষে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়ার আগে ২১৮ রান তুলেছেন এই ব্যাটসম্যান, ভারতের মাটিতে এত বেশি রান এক ইনিংসে কোনো ইংলিশ ব্যাটসম্যান করতে পারেননি আগে। এই এক ডাবল সেঞ্চুরির মাধ্যমে ১১ বছর আগের এক স্মৃতিও মনে করিয়ে দিয়েছেন রুট। এর আগে সফরকারী দলের ব্যাটসম্যান হিসেবে ভারতের মাটিতে ডাবল সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব ছিল নিউজিল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন ম্যাককালামের। ২০১০ সালে হায়দরাবাদে ২২৫ রান করেছিলেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। আর অধিনায়ক হিসেবে সর্বশেষ কারও ডাবল সেঞ্চুরি ক্লাইভ লয়েডের। ১৯৭৫ সালের পর রুট-ই প্রথম।

বর্তমান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ডাবল সেঞ্চুরি করার দিক দিয়ে নিজেকে কোহলির ঠিক পেছনে নিয়ে এলেন রুট। সাতটি ডাবল সেঞ্চুরি করে তালিকার সবার ওপরে আছেন কোহলি। পাঁচটা নিয়ে এর ঠিক পরেই রুট। এই ডাবল সেঞ্চুরি করে পেছনে ফেলেছেন নিউজিল্যান্ডের কেইন উইলিয়ামসনকে, যার ডাবল সেঞ্চুরি চারটি।

রুট-স্টোকসের জুটি দিনের শুরুতেই ভারতকে পিছিয়ে দিয়েছে।
ছবি: বিসিসিআই

ইংল্যান্ডের হয়ে এখন রুটের চেয়ে ডাবল সেঞ্চুরি বেশি আছে শুধু সাবেক ব্যাটসম্যান ওয়ালি হ্যামন্ডের। হ্যামন্ডের ডাবল সেঞ্চুরি কোহলির সমান, সাতটি। ওপেনার ডমিনিক সিবলির মতো সেঞ্চুরি মিস করেছেন বেন স্টোকসও। গতকাল দিনের শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে সিবলি করেছিলেন ৮৭ রান। ইনিংস গড়ার দিক থেকে সিবলির ঠিক উল্টো ছিলেন স্টোকস। ১১৮ বলে ১০ চার ও ৩ ছক্কায় ৮২ রান করে ফিরেছেন এই অলরাউন্ডার।

স্টোকসের বিদায়ের পর রুট ও ওলি পোপ দলকে সাড়ে চার শ পার করে দিয়েছেন। এরপর ৫২ রানের মধ্যে ইংল্যান্ডের চার উইকেট ফেলে দিয়ে আজ ব্যাটিংয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল ভারত। কিন্তু স্পিন জুটি ডম বেস ও জ্যাক লিচ দিনটা কাটিয়ে দিয়েছেন অপরাজিত ৩০ রানের জুটিতে।

ভারতের হয়ে ইশান্ত শর্মা, যশপ্রীত বুমরা, শাহবাজ নাদিম ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন—প্রত্যেকে দুটি উইকেট নিয়েছেন।