রুদ্ধশ্বাস টাইয়ের পর সুপার ওভারে পাকিস্তানকে হারাল জিম্বাবুয়ে

অধিনায়ক বাবর আজমকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে ফিরছেন ওয়াহাব রিয়াজ। তাঁর দুর্ভাগ্য পাকিস্তান জিততে পারেনিছবি: এএফপি

৮ বলে দরকার ১৩ রান। উইকেটে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া বাবর আজম ও পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদি। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে হওয়ায় এখান থেকে যে কেউ পাকিস্তানের পক্ষে বাজি ধরতেন। বটে!

দলটা তো পাকিস্তান, দম আটকানো পরিস্থিতি সৃষ্টি না করলে চলে! ৪৯তম ওভারের শেষ দুই বলে তাই আউট শাহীন ও বাবর। খেলায় তখন তুমুল উত্তেজনা। শেষ ওভারে দরকার ১৩ রান, ক্রিজে শেষ উইকেট জুটি। ওয়ানডে ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য শেষ ওভারটাও হলো পোয়াবারো—ম্যাচ টাই!

হ্যাঁ, রাওয়ালপিন্ডিতে আজ জিম্বাবুয়ের জয়টা প্রায় কেড়েই নিয়েছিল পাকিস্তান। অধিনায়ক বাবর আজম রুখে না দাঁড়ালে ম্যাচ টাই পর্যন্ত গড়ায় না। আগে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ২৭৮ রানের লড়াকু সংগ্রহ পেয়েছিল জিম্বাবুয়ে। তাড়া করতে নেমে শনির দশা লেগেছিল পাকিস্তানের ইনিংসে। ৮৮ রান তুলতে নেই ৫ উইকেট!

পাকিস্তানের ইনিংসে শুরুতেই মড়ক লাগান জিম্বাবুয়ের বোলাররা
ছবি: এএফপি

১২৫ বলে ১২৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে শেষ ওভার পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন বাবর। জিম্বাবুয়ে পেসার রিচার্ড এনগারাভার করা শেষ ওভারের প্রথম ৫ বল থেকে ৮ রান নেন মুহাম্মদ মুসা ও মোহাম্মদ হাসনাইন। শেষ বলে মুসা চার না মারলে সিরিজের শেষ ম্যাচটা তখনই হারতে হতো পাকিস্তানকে। শেষ পর্যন্ত খেলা গড়ায় ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয় সুপার ওভারে।

এক ওভারের এ পরীক্ষায় প্রথম বলেই ক্যাচ দিয়ে আউট হন পাকিস্তানের ইফতেখার আহমেদ। মুজুরাবানির করা পরের বলেও ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন খুশদিল শাহ। চতুর্থ বলে মারতে গিয়ে বল স্টাম্পে টেনে নেন খুশদিল। মাত্র ২ রানে অলআউট পাকিস্তান! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুপার ওভারে এটাই সবচেয়ে কম রানের ইনিংস।

এত অল্প রান তাড়া করতে নেমে বেশি দেরি করেননি ব্রেন্ডন টেলর ও সিকান্দার রাজা। তৃতীয় বলের মাথায় জয় তুলে নেন দুজন। এ জয়ে পাকিস্তানের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ থেকে অন্তত কিছু পেল জিম্বাবুয়ে। আগের দুটি ম্যাচ হারলেও আজ দারুণ খেলেই জিতেছে তারা। পেয়েছে ওয়ানডে সুপার লিগে প্রথম পয়েন্টের দেখা। আর পাকিস্তান হেরেছে কষ্ট করে ম্যাচটা মুঠোয় নিয়ে আসার পর, মুঠো ফসকে দিয়ে!

সেঞ্চুরি করলেও দলকে জেতাতে পারেননি বাবর আজম
ছবি: এএফপি

এর আগে পাকিস্তানের ইনিংসে মড়ক লাগে শুরু থেকেই। দুই ওপেনার ইমাম-উল-হক ও ফখর প্রথম দুই ওভারেই ফিরে যান। মাঝে এক ওভার বিরতিতে হায়দার আলীও একই পথ ধরেন। যেভাবে আউট হয়েছেন, দেখে মনে হবে বাসায় তাঁরা খুব জরুরি কোনো কাজ ফেলে এসেছেন! প্রাপ্য প্রশংসা করতে হবে জিম্বাবুয়ের বোলারদেরও।

নিজেদের সীমাবদ্ধতা বুঝে নিয়ন্ত্রিত লাইন-লেংথে বোলিং করেছেন সফরকারী বোলাররা। মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতেখার আহমেদও বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি উইকেটে। সপ্তম উইকেটে পেসার ওয়াহাব রিয়াজকে সঙ্গে নিয়ে বাবর ১০০ রানের জুটি না গড়লে ম্যাচটা মোটেও এত দূর আসত না। ৫৬ বলে ৫২ রান করে অধিনায়ককে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন ওয়াহাব।

আগে ব্যাট করা জিম্বাবুয়ের ইনিংসের শুরুও যে খুব ভালো হয়েছে তা নয়। ৮ ওভারের মধ্যে ২২ রান তুলতে ৩ উইকেট হারায় তারা। কিন্তু শন উইলিয়ামসের দারুণ এক সেঞ্চুরিতে মাথা তুলে দাঁড়ায় জিম্বাবুয়ে। পাঁচে নামা উইলিয়ামস ১৩৫ বলে ১১৮ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেলেন।

২৬ রানে ৫ উইকেট নেন পাকিস্তানের পেসার হাসনাইন। এর আগে শাহীন ও ইফতেখারও এ সিরিজে ৫ উইকেট নেন। ওয়ানডেতে তিন ম্যাচের সিরিজে এই প্রথমবারের মতো এক দলের আলাদা তিন বোলার ইনিংসে ৫টি করে উইকেট পেলেন।