রোমাঞ্চকর জয়ে ফাইনালে সাকিবের বরিশাল

ফাইনালে চলে গেলেন সাকিবছবি: প্রথম আলো

সংগ্রহ ১৪৩ রান, সেখানে প্রতিপক্ষের উদ্বোধনী জুটিই তুলে ফেলল ৬২ রান। তবে শক্তিমত্তার জায়গা যখন বোলিং, তখন ফরচুন বরিশাল ওই সংগ্রহ নিয়েই বের করে আনল তাদের সেরা খেলাটা। বোলারদের ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে দারুণভাবে ব্যবহার করলেন সাকিব আল হাসান, তাঁরাও অধিনায়ককে এনে দিলেন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট।

ডেথ বোলিংয়ের দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে সাকিবের বরিশাল ইমরুল কায়েসের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে থামিয়ে দিল ১৩৩ রানেই। এলিমিনেটরের পর প্রথম কোয়ালিফায়ারেও মিরপুর দেখল রোমাঞ্চকর লড়াই, এবারও জয়টা পরে বোলিং করা দলের। ১০ রানের জয়ে বরিশাল জিতল টানা সপ্তম ম্যাচ, বিপিএলের ফাইনালেও চলে গেল তারা।

বোলিং আক্রমণ জয় এনে দিল বরিশালকে
ছবি: প্রথম আলো

ব্যাটিংয়ে খেই হারানো কুমিল্লার জন্য অবশ্য এটিই শেষ নয়। ফাইনালে যাওয়ার আরেকটি সুযোগ পাবে তারা। ১৬ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বাধাটা পেরোতে হবে তাদের।

লক্ষ্যটা খুব বড় নয়, লিটন দাস ও মাহমুদুল হাসান কুমিল্লার রানতাড়ার শুরুটা করেছিলেন সতর্ক। দুজনের উদ্বোধনী জুটিতে রান এলেও খরচ হয়ে যায় ১০ ওভারের বেশি। ১১তম ওভারে বরিশালকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন মেহেদী হাসান রানা, ৩০ বলে ২০ রান করে বোল্ড হন মাহমুদুল। এরপর শফিকুল ইসলামের ৩ বলের মধ্যে লিটন ও ইমরুল কায়েস ফিরলে চাপে পড়ে কুমিল্লা। থিতু হয়েও রান তোলার গতি বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছেন লিটন, শফিকুলের কমিয়ে আনা গতির বলটা স্টাম্পে ডেকে এনে। ৩৫ বলে ৩৮ রান করেই ফিরেছেন। ইমরুল এরপর শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়েছেন গেইলের হাতে।

আজও ভালো করেছেন মুনিম
ছবি: প্রথম আলো

টপ অর্ডারের ধীরগতির ব্যাটিংয়ে প্রয়োজনীয় রানরেটটা বেড়েছে কুমিল্লার। শেষ ৪৮ বলে তাদের প্রয়োজন ছিল ৭৫ রান। মুজিব, সাকিব, নাজমুল ও ব্রাভো—এ চারজনের করা পরের চার ওভারে এরপর আসে ৪টি ছক্কা। মঈন মেরেছেন ৩টি, অন্যটি ফাফ ডু প্লেসির। কিন্তু ব্রাভোর বলে বোল্ড হয়ে ১৫ বলে ২২ রান করেই থামতে হয় মঈনকে।

কুমিল্লাকে পার করাতে পারেননি ডু প্লেসিও। শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২২ রান। তবে ১৯তম ওভারে এসে মাত্র ৪ রান দেন মেহেদী হাসান রানা, সঙ্গে ফেরান ডু প্লেসিকে। পেতে পারতেন সুনীল নারাইনের উইকেটও, তবে ব্রাভো সহজ ক্যাচ ফেলায় সেটি হয়নি।

এদিন মুজিব উর রহমানের ওভার রেখে দিয়েছিলেন সাকিব, শেষ দিকে সেটি কাজেও এসেছে দারুণ। তৃতীয় বলে ছয় মেরে কুমিল্লাকে শেষ আশা জুগিয়েছিলেন নারাইন, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। মুজিবের বলে কট-বিহাইন্ড হয়ে ফিরতে হয়েছে তাঁকে, পঞ্চম বলে। এক বল পর উল্লাসে মেতেছে বরিশাল।

রান আউট হয়েছেন সাকিব
ছবি: প্রথম আলো

এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বরিশালও শুরুটা করেছিল বেশ ভালো। প্রথম ওভারে নাহিদুল ইসলামের ওপর চড়াও হন দারুণ ফর্মে থাকা মুনিম শাহরিয়ার। স্লগ সুইপে দুটি ছয়ের সঙ্গে তাঁর কাট করে মারা চারে আসে ১৬ রান। পরের ওভারে মোস্তাফিজকেও ছয় মারেন মুনিম। পাওয়ারপ্লেতে এরপর নারাইন, মঈনকেও আনেন ইমরুল, তবে চতুর্থ ওভারে তানভীর ইসলামকে মারা ক্রিস গেইলের ৪ চারে পাওয়ারপ্লেতে ৫৭ রানের বড় স্কোর গড়ে বরিশাল।

কুমিল্লাকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন শহীদুল ইসলাম, টেনে মারতে গিয়ে মিড-অফে ক্যাচ দেন ১৯ বলে ২২ রান করা গেইল। মুনিম অবশ্য রানের গতি সেভাবে কমতে দেননি এরপরও। দশম ওভারে তানভীরকে স্লগ সুপের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে এলবিডব্লু হন ৩০ বলে ৪৪ রান করে, বরিশালের ইনিংসেও শুরু হয় ধস। সে ওভারেই নাজমুল হোসেনের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝিতে রানআউট হন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাকিব।

ম্যাচসেরা মেহেদী হাসান রানা
ছবি: প্রথম আলো

মিড-অনে খেলে সিঙ্গেল নিতে চেয়েছিলেন সাকিব, তবে ডাইভ দেওয়া বোলার তানভীরকে দেখতে গিয়ে সেদিকে ঠিক যেন খেয়াল ছিল না নাজমুলের। কুমিল্লার দুই ব্যাটসম্যানই হাজির হন নন-স্ট্রাইক প্রান্তে, স্ট্রাইক প্রান্তে করা ইমরুলের থ্রো-তে বিদায় নিতে হয় সাকিবকে। ১ উইকেটে ৮৪ থেকে ৩ উইকেটে ৮৬ রান বরিশালের। মঈনের পরের দুই ওভারে নাজমুল ও তৌহিদ হৃদয় ফিরলে ১৭ বল ও ১০ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারায় বরিশাল। সে চাপটা আর সামাল দিতে পারেনি তারা। ১২ বলে ১৭ রান করা জিয়াউর রহমান স্টাম্পিং হন সুনীল নারাইনের বলে, ডোয়াইন ব্রাভো ও নুরুল হাসান শিকার শহীদুল ইসলামের।