রোহিতের মনে হচ্ছে তাঁরই আউট হওয়া উচিত ছিল

সূর্যকুমার যাদব আউট হয়ে ফিরছেন, কম হতাশ নন রোহিত শর্মাও (বাঁয়ে)ছবি: আইপিএল

এবারে এসে ধারাটা ভাঙল!

আইপিএলে বিজোড় বছরগুলোতে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস শিরোপা জিতবে, এটা বুঝি-বা ‘নিয়ম’ হয়ে গিয়েছিল। ২০১৩ সালে নিজেদের প্রথম আইপিএল শিরোপা দিয়ে শুরু, এরপর ২০১৫, ২০১৭ কিংবা ২০১৯—প্রতিটি বিজোড় বছরের আইপিএলই জিতেছে মুম্বাই।

করোনার কারণে অনেক পিছিয়ে, ভারত থেকে দূরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দর্শকহীন মাঠে এবার ঘুচল মুম্বাইয়ের ‘বিজোড়-যোগ।’ চেন্নাই সুপার কিংসের পর টানা দুবার আইপিএল জেতার রেকর্ডও গড়েছে রোহিত শর্মার দল।

দুবাইয়ে আইপিএল ফাইনালে দিল্লি ক্যাপিট্যালসকে ৫ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা উচ্ছ্বাস করেছেন রোহিতরা, ৫১ বলে ৬৮ রানের দারুণ ইনিংসে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক রোহিতই।

তবে ম্যাচে মুম্বাই সমর্থকদের তো বটেই, ক্রিকেটপ্রেমীদেরও মন কেড়েছে সূর্যকুমার যাদবের আত্মত্যাগ। রোহিতকে রানআউট থেকে বাঁচাতে নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন যাদব। ম্যাচের পর রোহিতের অবশ্য মনে হয়েছে, যাদবকে ক্রিজে রেখে তাঁরই আউট হওয়া উচিত ছিল!

বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে দুর্দান্ত এক ইনিংসে দলকে জিতিয়েছেন যাদব
ছবি: আইপিএল

মুম্বাইয়ের ইনিংসের ১১তম ওভারের পঞ্চম বলের কথা। দিল্লির ১৫৬ রানের জবাবে ততক্ষণে কুইন্টন ডি ককের (২০ রান) উইকেট হারিয়ে মুম্বাইয়ের রান ৯০। ক্রিজে রোহিত অপরাজিত ৩২ বলে ৪৭ রানে, তাঁর সঙ্গী যাদবের রান তখন ২০ বলে ১৯। একটা রান নিতে গিয়ে হলো ভুল বোঝাবুঝি।

রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে ফিল্ডারের দিকে ঠেলে দিয়ে একটা রান নিতে চেয়েছিলেন রোহিত, কিন্তু যাদব সেদিকে খেয়াল করেননি। রানটা নিতেও তাঁর আগ্রহ ছিল না। রোহিতেরই ভুল ছিল। কিন্তু অধিনায়কের উইকেট বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত আউট হবেন জেনেও ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন যাদব।

রোহিত পরে ভুল শুধরেছেন। ৫ চার ৪ ছক্কায় ৬৮ রানের ইনিংসটি খেলে যখন আউট হচ্ছেন মুম্বাই অধিনায়ক, মুম্বাইয়ের তখন আর ২২ বলে ২০ রান দরকার। হাতে তখনো ৭ উইকেট। কিন্তু দলকে জেতালেও যাদবের আউট নিয়ে একটু খচখচানি রয়েই গেছে রোহিতের।

এবারের আইপিএলে ৪ ফিফটিসহ ৪৮০ রান করা যাদবের আউট নিয়ে ম্যাচের পর রোহিত বললেন, ‘সূর্য অনেক পরিপক্ব একজন খেলোয়াড়। ও যেরকম ফর্মে আছে, তাতে আমার উচিত ছিল সূর্যর জন্য আমিই আউট হওয়া।’

শুধু রোহিতেরই নয়, মুম্বাই ভক্তদেরও প্রশংসায় ভাসছেন সূর্যকুমার যাদব। টুইটারে এক ভক্ত লিখেছেন, ‘মুম্বাই ম্যাচটা জিতেছে ঠিকই, তবে আমাদের মন জিতেছে সূর্যকুমার যাদব।’ শ্রেয়াস পাঠক নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘সূর্যকুমার যাদব আমাদের মন জিতে নিয়েছে। তিনি আরেকবার প্রমাণ করলেন কেন তাঁর ভারতীয় দলে থাকা উচিত।’

অবশ্য শুধু এই ভক্তই নন, দিন কয়েক আগে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের কাইরন পোলার্ডও বলছিলেন, ‘ভারতের নীল জার্সিটা এখনো গায়ে জড়াতে না পারায় মনে মনে অনেক কষ্ট হয়তো পাচ্ছে ও। তবে আমি নিশ্চিত ও সেটার খুব খুব কাছে চলে এসেছে।’

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ৪৩ বলে ৭৯ রানের ইনিংসে মুম্বাইকে জেতানোর পর যাদবকে নিয়ে টুইট করেছিলেন ভারতের কোচ রবি শাস্ত্রীও।

ফাইনালের একদিন আগে ভারতীয় দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসে যাদবকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং কিংবদন্তি ব্রায়ান লারাও, ‘সূর্যকুমার যাদব আমার ফেবারিটদের একজন হয়ে গেছে। আপনার দলের সেরা খেলোয়াড় যদি ওপেনার না হয়, সে ক্ষেত্রে তাকে তিনে নামানো উচিত। মুম্বাই দ্রুত উইকেট হারালে ও ইনিংস মেরামতও করতে পারে, আবার দরকার হলে আগ্রাসী হয়েও খেলতে পারে। আইপিএলে ওর খেলা অনেক উপভোগ করেছি।’

কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর) হয়তো এখন আফসোসে পুড়ছে। এই সূর্যকুমার যাদবকেই যে ২০১৮ সালে ছেড়ে দিয়েছিল তারা। সে বছর মুম্বাইয়ে আসার আগে চার মৌসুম কলকাতায় ছিলেন যাদব। কাল ফাইনাল শেষে তাই কলকাতা নাইট রাইডার্সকে দুবার আইপিএল জেতানো অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর বলছিলেন, ‘(আইপিএলের) ১৩ বছরে এটাই সম্ভবত কেকেআরের সবচেয়ে বড় ক্ষতি।’

কলকাতার যা ক্ষতি, মুম্বাইয়ের তাতে লাভ।