রোহিতের মুম্বাইয়ের সামনে ফাইনালে দিল্লি

ম্যাচ শেষে দুই দলের খেলোয়াড়দের হাসিঠাট্টা।ছবি: আইপিএল

জিতেই চলছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। লিগ পর্বে একটা সময়ে বাদ পড়ার অবস্থা থেকে একের পর এক জয় হায়দরাবাদকে দ্বিতীয় এলিমিনেটর পর্যন্ত নিয়ে আসে। কিন্তু ডেভিড ওয়ার্নার, কেন উইলিয়ামসন, রশিদ খান, জেসন হোল্ডার, থাঙ্গারাসু নটরাজন, ঋদ্ধিমান সাহা—আইপিএলজুড়ে বহু নায়কের দল হায়দরাবাদকে আজ ফাইনালে ওঠার ম্যাচটি জিততে দেয়নি দিল্লি ক্যাপিটালস।

১৭ রানে দ্বিতীয় এলিমিনেটর ম্যাচ জিতে প্রথমবারের মতো ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে দিল্লি। ১০ নভেম্বর মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে শিরোপার লড়াইয়ে নামবে রিকি পন্টিংয়ের অধীন দিল্লি।

আগে ব্যাট করা দিল্লির ১৯০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই দুঃস্বপ্ন দেখতে হয় হায়দরাবাদকে। ৪৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বড় রান তাড়া করার পথটাই হারিয়ে ফেলেন ওয়ার্নাররা। কাগিসো রাবাদার ভয়ংকর ইয়র্কারে দ্রুতই বোল্ড হন ওয়ার্নার। প্রিয়ম গার্গ, মনিষ পান্ডে আউট হন অনিয়মিত বোলার মার্কাস স্টইনিসের বলে দ্রুত রান তুলতে গিয়ে।

এরপর প্রথম এলিমিনেটরের মতো আজও হায়দরাবাদের বিপদে ক্রিজে দাঁড়িয়ে যান উইলিয়ামসন ও হোল্ডার। চতুর্থ উইকেটে ৪৬ রানের জুটিতে আশাও জাগান এই দুই আন্তর্জাতিক অধিনায়ক। কিন্তু রান রেটের চাপের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া কঠিন ছিল। হোল্ডার বড় শট খেলতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ১২তম ওভারে এসে।

পরের গল্পটা শুধুই উইলিয়ামসনের। বোলার ধরে ধরে ঝুঁকি নিয়ে কী দারুণ ইনিংসটাই না খেললেন কিউই অধিনায়ক! ৪৫ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় করেছেন ৬৭ রান। শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলে হয়তো ম্যাচটা বেরও করে নিতেন। সঙ্গে আব্দুল সামাদের (১৬ বলে ৩৩) ভালোই সঙ্গ পাচ্ছিলেন। কিন্তু আবার সেই স্টইনিস এসে উইলিয়ামসনকে কাভারে থাকা রাবাদার ক্যাচ বানিয়ে আউট করেন। ম্যাচ ঘুরে যায় সেখানেই। উইলিয়ামসন-সামাদের জুটিতে ৫৭ রান এসেছিল ৩১ বলে। উইলিয়ামসন যখন ফেরেন, তখনো হায়দরাবাদের দরকার ১৯ বলে ৪৩ রান।

উইলিয়ামসন যতক্ষণ ছিলেন, টিকে ছিল হায়দরাবাদের আশা।
ছবি: আইপিএল

উইলিয়ামসন আউট হওয়ার পর রশিদ খান এসে অশ্বিনের ওভারে এক ছক্কা ও এক চার মারেন। রাবাদার করা পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মারেন সামাদ। ১০ বলে তখন আর দরকার ২৩ রান। কিন্তু পরের বলেই লং অফে ক্যাচ দিয়ে সামাদ আউট হতেই সব শেষ! ওই ওভারে পরের তিন বলে আরও দুই উইকেট নিয়েছেন রাবাদা! শেষ ওভারে বাকিটা দাঁড়ায় শুধুই আনুষ্ঠানিকতায়। হায়দরাবাদের ইনিংস থামে ১৭২ রানে।

নকআউট ম্যাচে স্কোর বোর্ডে বড় রান মানেই বাড়তি সুবিধা। আগে ব্যাট করে সেই সুবিধাটা দুই হাত ভরে নিয়েছে দিল্লি। সে জন্য ধন্যবাদ দিতে হয় স্টইনিসকে। দিল্লির হয়ে এত দিন ওপেনিংয়ে একাই লড়ছিলেন শিখর ধাওয়ান। পৃথ্বী শ-র কাছ থেকে দিল্লি কিছুই পাচ্ছিল না। তবু পুরো টুর্নামেন্ট পৃথ্বীকে সুযোগ দিয়ে যান কোচ রিকি পন্টিং। বাঁচামরার ম্যাচে এসে শেষ পর্যন্ত ওপেনিং জুটি বদলালেন। পুরো আইপিএল ফিনিশার হিসেবে খেলে আসা স্টইনিসকে সুযোগ দিলেন ওপেনিংয়ে।

বিগ ব্যাশে আবার ওপেনার হিসেবেই খেলেন স্টইনিস। রেকর্ডও দুর্দান্ত। আজ হায়দরাবাদের ফিল্ডারদের ৩০ গজের মধ্যে দেখেই যেন লোভী হয়ে উঠলেন এই অস্ট্রেলিয়ান। বাউন্ডারির পর বাউন্ডারি মেরে দিল্লির স্কোরবোর্ডে ঝড় তোলেন। স্টইনিসের পথ ধরেন ধাওয়ানও। দুজন মিলে ওপেনিং জুটিতে যোগ করেন ৮৬ রান, মাত্র ৮.২ ওভারে।

দারুণ শুরুর পাওয়া দিল্লি চোখ রাঙানি দিচ্ছিল বড় রানের। ডেভিড ওয়ার্নার, সন্দীপ শর্মা, শাহবাজ নাদিম, জেসন হোল্ডারদের ব্যবহার করে রান থামাতে পারছিলেন না।

শেষ পর্যন্ত রশিদ খানই ছিলেন হায়দরাবাদের একমাত্র ভরসা। তিনিই নবম ওভারে এসে স্টইনিসকে (২৭ বলে ৩৮) আউট করলেন। রানও থামালেন। রান কমে আসার চাপে আলগা শট খেলে হোল্ডারকে উইকেট দেন দিল্লির অধিনায়ক শ্রেয়াশ আইয়ার।

শিমরন হেটমায়ার নেমে আবার রানের গতি বাড়ান। ধাওয়ান আরেক প্রান্ত ধরে রেখে খেলে যান, যেভাবে খেলেছেন পুরো টুর্নামেন্টে। ঝুঁকিহীন ব্যাটিংয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন। প্রথমবারের মতো আইপিএলে এক টুর্নামেন্টে ৬০০ রান পূর্ণ করেন। ৫০ বলে ৭৮ রানের ইনিংস খেলে ১৯তম ওভারে আউট হন সন্দীপের বলে।

হেটমায়ার হতে পারতেন হায়দরাবাদের ক্ষতির কারণ। কিন্তু শেষের দিকে টি নটরাজনের দুর্দান্ত ইয়র্কার মেশানো বোলিংয়ে বাউন্ডারিই খুঁজে পাননি এই ক্যারিবিয়ান তরুণ। যেখানে দিল্লির রান নিশ্চিত ২০০ হয়, সেখানে দিল্লির ইনিংসে থামে ৩ উইকেটে ১৮৯ রানে। ২২ বলে ৪২ রান আসে হেটমায়ারের ব্যাট থেকে।

অতটুকুই যথেষ্ট প্রমাণিত হলো।