লম্বা নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিতে সাব্বির

উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সাব্বিরের ক্যারিয়ার। প্রথম আলো ফাইল ছবি
উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সাব্বিরের ক্যারিয়ার। প্রথম আলো ফাইল ছবি
>ব্যক্তিগত জীবনে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ ওঠা ক্রিকেটারদের শুনানিতে ডেকেছে বিসিবি। সাব্বিরের কঠিন শাস্তির সম্ভাবনা।

‘কেউ যদি একাধিক বিয়ে করে সেটাতে আমাদের কিছু করার নেই। এখন তো আমরা বলতে পারি না ক্রিকেট যারা খেলে তারা একাধিক বিয়ে করতে পারবে না।’

চমকপ্রদ কথাটা বলেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। আর যাঁদের নিয়ে বলেছেন, তাঁরা জাতীয় দলের ক্রিকেটার। বিসিবি সভাপতিরই বা কী করার আছে! ‘সন্তান’ বেয়াড়া হয়ে গেলে কখনো কখনো অসহায় অবস্থায়ই পড়তে হয় অভিভাবককে।

তবে ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত জীবনের বিশৃঙ্খলা থেকে ফেরাতে বিসিবি আগের মতোই কঠোর। সাম্প্রতিক সময়ে যে তিন ক্রিকেটার ব্যক্তিগত জীবনে সৃষ্ট সমস্যার কারণে বিতর্কিত হয়েছেন, সেই সাব্বির রহমান, নাসির হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেনকে তলব করেছে বোর্ডের শৃঙ্খলা কমিটি। বোর্ড সভাপতি জানিয়েছেন, আগামীকাল শুনানিতে ডাকা হয়েছে তাঁদের।

তবে মোসাদ্দেকের বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ানোয় এখনই তাঁর ব্যাপারে বিসিবি কোনো সিদ্ধান্তে যাচ্ছে না বলে জানা গেছে। আদালতে দোষী প্রমাণিত হলেই কেবল তাঁর বিরুদ্ধে বোর্ড ব্যবস্থা নেবে। নাসিরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কতটা সত্যি, বিসিবি সে ব্যাপারেও নিশ্চিত নয়। একটি সূত্র এমনও জানিয়েছে, নাসিরকে শেষ পর্যন্ত শুনানিতে না-ও আসতে হতে পারে। তবে সাব্বিরের জন্য সম্ভবত কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে।

কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তা দিয়ে নাসিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন এক উঠতি মডেল। পরে নাসিরের সঙ্গে তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত ফোনালাপের অডিও ছড়িয়ে পড়ে ইউটিউবে। তরুণীর অভিযোগ, নাসির তাঁর সঙ্গে ভালোবাসার অভিনয় করেছেন।

সাব্বিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ একজন সমর্থকের। গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময় তাঁর দেওয়া একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে এর সূত্রপাত। ওই সমর্থকের দাবি, সাব্বির তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে ফেসবুক বার্তা পাঠিয়েছেন। সাব্বির পরে দাবি করেছেন, তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাকড’ হয়েছে। তবে সেটি বিসিবি খুব একটা আমলে নিচ্ছে না। কাল বিসিবি সভাপতির সঙ্গে কয়েকজন পরিচালকের অনানুষ্ঠানিক এক সভায় সাব্বিরকে ৩ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত বহিষ্কারের প্রস্তাব এসেছে।

সমর্থকদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ সাব্বিরের বিরুদ্ধে আগেও উঠেছে। গত ডিসেম্বরে রাজশাহীতে জাতীয় লিগের ম্যাচ চলাকালে এক কিশোরকে পিটিয়েছিলেন তিনি। ওই অপরাধে জানুয়ারিতে ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয় সাব্বিরকে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত জীবনে আরও অনেক বিশৃঙ্খল আচরণের অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

ব্যক্তিগত কারণে সর্বশেষ বিতর্কে জড়ানো ক্রিকেটার মোসাদ্দেক। ১০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবির অভিযোগে মোসাদ্দেকের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহে মামলা করেছেন তাঁর স্ত্রী সামিরা শারমীন। মামলার অভিযোগে সামিরা বলেছেন, বিয়ের পর তাঁকে ময়মনসিংহে রেখে মোসাদ্দেক বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকতেন। এ সময় তিনি অন্য মেয়েদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। স্ত্রীকে নাকি শারীরিকভাবেও নির্যাতন করতেন। যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় মোসাদ্দেক একপর্যায়ে সামিরাকে তাঁর বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন। তবে মোসাদ্দেকের দাবি, মামলার ৯ দিন আগেই তিনি সামিরাকে তালাক দিয়েছেন।

কিছু ক্রিকেটারের এমন আচরণে বিব্রত বিসিবি এবং অন্য ক্রিকেটাররা। তবে বিসিবি সভাপতি খেলোয়াড়দের খেলোয়াড়ি জীবন ও ব্যক্তিগত জীবনকে একসঙ্গে জড়াতে রাজি নন, ‘ব্যক্তিগত অনেক সমস্যাই আছে। সবকিছুর মধ্যে বিসিবিকে জড়ালে হবে না। সব বিসিবির পক্ষে করাও সম্ভব নয়। ডিভোর্স হয় না বাংলাদেশে? কেউ যদি কাউকে ডিভোর্স করতে চায়, এটা নিয়ে আমরা কী করব?’

কেউ এ রকম সমস্যার সৃষ্টি করে ফেললে আর কিছু করার থাকে না ঠিকই। তবে ভবিষ্যতে এসব সমস্যা যাতে আর না তৈরি হয়, সে জন্য শাসন-অনুশাসন দুই রকম ব্যবস্থাই নিচ্ছে বিসিবি। বারবার সতর্ক করার পরও কেউ যদি না শোধরায় তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানই নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নাজমুল হাসান, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমার কাছে একটাই-সে জাতীয় দলে খেলতে পারবে না।’

খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত জীবনে শৃঙ্খলা ফেরাতে দলে একজন মনোবিদ নিয়োগের কথা ভাবছে বিসিবি। সফরে থাকার সময় খেলোয়াড়দের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রস্তাবও আছে। এসবেও কাজ না হলে একটা উপায়ই দেখেন বিসিবি সভাপতি, ‘ওদের নিজেদেরই ভালো হতে হবে। জোর করে কাউকে ভালো করা যায় না। ওরা নিজেরা ভালো না হলে আমাদের কিছু করার নেই, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।’