‘লাল বলে বেশি মজা’

লাল বলটাও ভালো লাগতে শুরু করেছে তানভির ইসলামেরছবি: বিসিবি

সাদা বলের বোলিংটা ছিল প্রথম পছন্দ। কদিন হলো লাল বলটাও ভালো লাগতে শুরু করেছে বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলামের।

আয়ারল্যান্ড উলভসের বিপক্ষে একমাত্র চার দিনের ম্যাচেই দেখা গেল তানভিরের লাল বল প্রেম। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ ইমার্জিং দলের জয়ের নায়ক ২৪ বছর বয়সী এই স্পিনার।

আজ প্রথম আলোকে নিজের বোলিংয়ের খুঁটিনাটি কথা জানালেন তানভির।

প্রশ্ন:

প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ উইকেট। স্বপ্নের মতো পারফরম্যান্স মনে হচ্ছে কি?

তানভির: ভালো লাগছে অবশ্যই। মনে হয়নি এত ভালো হবে।

আয়ারল্যান্ড উলভসের বিপক্ষে ভালো বল করেন তানভির
ছবি: বিসিবি
প্রশ্ন:

এর আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একবারও ইনিংসে পাঁচ উইকেট পাননি। এবার এক ম্যাচেই দুইবার পেয়ে গেলেন।

তানভির: আমি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ অনেক কম খেলেছি। আর চার দিনের ম্যাচে আমি তেমন বোলিং পাইনি। আমি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও জোরের ওপর বল করতাম। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে যা করতাম, সেটাই প্রথম শ্রেণিতে করতাম। এ কারণে বোলিংয়ের সুযোগ তেমন মিলত না।

আর আমি প্রথম শ্রেণিতে খেলি বরিশালের হয়ে। সেখানে সোহাগ ভাই (সোহাগ গাজী), মনির ভাই (মনির হোসেন) একাদশে থাকেন। তাঁরাই মূল বোলারের কাজটা করতেন। আমি ওই দলে অনেকটা অনিয়মিত বোলারের মতো।

আমি দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৯-২০ ওভারের বেশি কখনই মনে হয় করিনি। এবার সুযোগ পেয়েছি। এ জন্য হয়তো ভালো হয়েছে। আর চম্পকা স্যার কিছু কথা বলে দিয়েছেন। উইকেট বরাবর বোলিং করে যেতে বলেছেন। উইকেটের বাইরে যেন বল না করি। আর গতিতে বৈচিত্র্য আনতে বলেছেন। আমি সেভাবেই চেষ্টা করেছি।

আয়ারল্যান্ড উলভসের বিপক্ষে তানভিরের উইকেট নেওয়ার উদযাপন
ছবি: বিসিবি
প্রশ্ন:

ফিটনেসে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে?

তানভির: অনেক। আগে যদি ফিটনেস ৫০ ভাগ থাকত, তাহলে এখন সেটা ৭০-৮০ ভাগে আছে। আমি গত তিন বছর হাই পারফরম্যান্স দলে আছি। ফিটনেসের উন্নতিটা এইচপির কারণেই হয়েছে। আমি আগে কখনো লম্বা বোলিং করিনি। এবারই এত লম্বা সময় ধরে বোলিং করেছি। রাজ ভাইরা যেমন এক ইনিংসেই দেখা যায় ৩০-৩৫ ওভার বোলিং করে ফেলেন, আমার সেভাবে বোলিং করতে হয়নি। আমার বোলিং ফিটনেস সম্পর্কে জানাশোনা শুরু হলো মাত্রই। তবে সাধারণত ফিটনেস ভালো না থাকলে ১০-১২ ওভার পর ক্লান্তি এসে যায়। আয়ারল্যান্ডের ম্যাচে সেটা হয়নি। আর উইকেট পেলে তো কষ্ট এমনিতেই কমে যায়।

প্রশ্ন:

বোলিংয়ের কোন দিকটায় মনে করেন উন্নতি করার সুযোগ আছে?

তানভির: আমি ফ্লাইটের ওপর গতির বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করব। আর লাইন-লেংথ সবকিছু। সেটায় আরও ধারাবাহিক হতে চাই।

প্রশ্ন:

কার বোলিং সবচেয়ে ভালো লাগে?

তানভির: ড্যানিয়েল ভেট্টোরির।

প্রশ্ন:

ভেট্টোরির সঙ্গে তো কাজ করার সুযোগ হয়েছে আপনার…

তানভির: হ্যাঁ, একবার কাজ করেছিলাম। তিনি আমার বল ছাড়া নিয়ে কাজ করেছেন। আমি একটু পেছন থেকে বল ছাড়তাম। আমি বোলিংয়ের সময় আঙুলের জোর ব্যবহার করতে পারতাম না। শরীরের জোরে বোলিং করতাম। এ কারণে মাঝেমধ্যে বল আঙুল ফসকে বেরিয়ে যেত। তিনি এ ব্যাপারে আমার সাহায্য করেছেন। তিনি আরেকটু সামনে থেকে বল ছাড়তে বলেন।

জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখেন তানভির
ছবি: বিসিবি
প্রশ্ন:

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলে এসেছেন নিয়মিত। গত কয়েক বছর বিপিএলে আপনাকে নিয়মিতই বলা যায়। ছোট সংস্করণের ক্রিকেটটাকে কীভাবে দেখেন?

তানভির: আমি টি-টোয়েন্টি খেলতে পছন্দ করতাম। আমি লাল বলে খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম না। লাল বলে খেলার যে মজা, আমি এই জিনিসটাই বুঝতাম না। এবার সেই মজাটা পেয়েছি। এখন সাদা বলের চেয়ে লাল বলেই বেশি মজা পাই। সাদা বলে অনেক চাপ থাকে, একটা চার খেয়ে গেলে ইকোনমি ঠিক করতে হয়। লাল বলে সেই চাপটা নেই। শুধু একটাই চাপ, জায়গায় বল করা।

প্রশ্ন:

ক্রিকেটের শুরুটা কীভাবে হলো?

তানভির: ঢাকা থেকেই সব শুরু। এসএসসি পরীক্ষা দিই। এরপর ঢাকা আসি। সিসিএস একাডেমিতে অনুশীলন শুরু করে সেখান থেকে ধাপে ধাপে এসেছি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। সেখান থেকে বিসিবি হাই পারফরম্যান্স দলে সুযোগ পাই। আমার খেলার হাতেখড়ি সাইফুল ইসলাম নামের এক বড় ভাইয়ের হাত ধরে। সবার যেমন গুরু থাকে, তিনি আমার গুরু।

প্রশ্ন:

জাতীয় দলের স্বপ্ন তো নিশ্চয়ই দেখেন…

তানভির: হ্যাঁ, বাকি সবার মতোই আমিও দেখি। এটা তো খুবই স্বাভাবিক। এক ধাপ থেকে আপনি পরের ধাপে যেতে চাইবেন। তবে মাত্র এক ম্যাচে ভালো খেলেছি বলেই যে অনেক কিছু ভেবে ফেলতে হবে তা কিন্তু না। সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে হলে ধারাবাহিকভাবে ভালো করে যেতে হবে।