‘লেকচার’ দেওয়া অস্ট্রেলিয়ানদের ধুয়ে দিলেন নাসের হুসেইন
ইংলিশদের কাছে অস্ট্রেলিয়ানদের কথাগুলোকে হয়তো ‘ঔদ্ধত্য’ই মনে হচ্ছে! একে তো ইংল্যান্ডের ক্রিকেট দল করোনার সময়ে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সিরিজ খেলতে কোয়ারেন্টিন করে চলেছে, সে তুলনায় অস্ট্রেলিয়ার দলকে সেভাবে কোয়ারেন্টিনই করতে হয়নি। অথচ সেই অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়েরাই কিনা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ডিসেম্বরে শুরু হতে যাওয়া অ্যাশেজে কোয়ারেন্টিন নিয়ে ইংলিশদের নীতিবাক্য শোনাচ্ছেন!
ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেইন এসব হজম করতে মোটেই রাজি নন। তাঁর চোখে, অস্ট্রেলিয়ানদের এসব বুলি আওড়ানো আসলে এক ধরনের ‘লেকচার’ দেওয়া। এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ানদের ধুয়েও দিয়েছেন হুসেইন। ইংলিশ দৈনিক ডেইলি মেইলে লেখা কলামে হুসেইন বলছেন, অস্ট্রেলিয়ানদের আসলে ‘সহমর্মিতার অভাব’ আছে।
ঘটনা জট পেকেছে এবারের অ্যাশেজের কোয়ারেন্টিনের নিয়ম নিয়ে। সূচি অনুযায়ী, আগামী ৮ ডিসেম্বর ব্রিসবেনের গ্যাবায় অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে নামার কথা ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কঠোর কোয়ারেন্টিন নীতি দেখে জো রুট ও তাঁর দলের এবার অ্যাশেজ খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া নিয়ে সংশয় জেগেছে।
একের পর এক সিরিজ ও টুর্নামেন্টে খেলছে ইংল্যান্ড। আর তা করতে গিয়ে জৈব সুরক্ষাবলয়ে থাকতে থাকতে মানসিক ক্লান্তি ধরে গেছে ইংলিশদের। অ্যাশেজের মতো একটা সিরিজ অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের কাছে কী, সে তো আর নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কঠোর কোয়ারেন্টিন নীতি দেখে রুটরা একটু দ্বিধায় আছেন।
গত সপ্তাহেই ইংল্যান্ড অধিনায়ক রুট অ্যাশেজে যেতে ‘উন্মুখ’ জানিয়েও বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ায় কোয়ারেন্টিন-সংক্রান্ত নিয়ম কেমন হয়, সেটা পুরোপুরি না জেনে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো কঠিন।
অস্ট্রেলিয়ায় কোয়ারেন্টিন নিয়ম নিয়ে এত কথা কেন? অ্যাশেজ খেলতে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পা রাখার পরই হোটেলে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে ইংলিশদের। অস্ট্রেলিয়ার নিয়ম অনুযায়ী, টিকার ডোজ পূর্ণ করা থাকলেও অস্ট্রেলিয়ায় ঢুকলে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন করতে হবে। তা একটা দেশে ঢোকার পরই কোয়ারেন্টিন করতে হওয়া না হয় স্বাভাবিক, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে গেলেও কোয়ারেন্টিনের নিয়ম আছে।
কদিন আগেই জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার সরকারের এক মন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, সূচি অনুযায়ী সিডনিতে অ্যাশেজের চতুর্থ টেস্টের পাঁচ দিন পর পার্থে পঞ্চম টেস্ট হওয়ার কথা থাকলেও সেই পরিকল্পনা বাদ দিতে হতে পারে। কারণ, সিডনি শহর যে রাজ্যের অধীন, সেই নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায় (পার্থ এই রাজ্যের শহর) ঢুকতে গেলে নতুন করে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন করতে হবে।
এর সঙ্গে যোগ করে নিন, সফরে খেলোয়াড়দের পরিবার নিয়ে যাওয়ায় সীমাবদ্ধতা আছে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ড অবশ্য বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষের সময়ে খেলোয়াড়দের পরিবারকে খেলোয়াড়দের পাশে থাকার ব্যবস্থা করার ব্যাপারে আলোচনা করছে।
কিন্তু কোয়ারেন্টিন নিয়ে রুটের এই কথার জবাবে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক টিম পেইন গত সপ্তাহে বলেছিলেন, রুটের মতো কেউ না গেলেও অ্যাশেজ থেমে থাকবে না! সেটি দেখেই খেপেছেন নাসের হুসেইন।
ডেইলি মেইলে নিজের কলামে হুসেইন লিখেছেন, ‘২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে ইংল্যান্ড ১৮টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে, যা অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে অন্তত ৫টি বেশি, আর অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ১৪টি বেশি। অস্ট্রেলিয়া তাদের ৪ টেস্টের সবগুলোই খেলেছে গত শীতে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে।’
এত টেস্ট খেলার মানে তো হচ্ছে দেশে কিংবা বিদেশে প্রতিটি সিরিজের আগে কোয়ারেন্টিন করা, ভ্রমণ, জৈব সুরক্ষাবলয়ের কড়াকড়ি...। সেসব সয়েও ইংল্যান্ডের এভাবে এত সিরিজ খেলা নিয়ে গর্বিত হুসেইন লিখেছেন, ‘এই কঠিন পরিস্থিতিতে ইংল্যান্ডের টেস্ট দল যেভাবে বিভিন্ন জায়গায় খেলাটাকে চালু রাখতে সাহায্য করেছে, জৈব সুরক্ষাবলয়ে ঢুকেছে, বেরিয়েছে, পরিবার থেকে দূরে থেকেছে, তাতে আমি গর্বিত। ব্যাপারটা মানসিকভাবে শুষে নেওয়ার মতো। খেলোয়াড়দের মানসিক স্বাস্থ্যে এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’
এত কিছুর পর জৈব সুরক্ষাবলয় ও কোয়ারেন্টিন নিয়ে অস্ট্রেলিয়ানদের নীতিকথা শুনতে ভালো লাগেনি হুসেইনের, ‘সে কারণেই, এত কিছুর পর অস্ট্রেলিয়ানরা যখন লেকচার দেওয়া শুরু করে, ওদের (ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের) বলতে শুরু করে যে ওদের উচিত সব মেনে নেওয়া...সেসব একটু বেশিই হয়ে যায়। আপনার নিজেরই যদি জৈব সুরক্ষাবলয়ে থাকার অভিজ্ঞতা বেশি না থাকে—যেটা কিনা এই (ইংল্যান্ডের) ছেলেদের অনেক আছে, আপনি তাহলে সুরক্ষাবলয়ে কীভাবে থাকতে হবে, এ নিয়ে লেকচার দিতে পারেন না।’
একদিকে খেলোয়াড়দের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিক দেখভাল করা, আবার একই সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করা যাতে মূল খেলোয়াড়দের কেউই সফর থেকে সরে না যান...ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ডের এই ভারসাম্য টানার দায়িত্বটাকে ‘অনেক কঠিন’ বলছেন হুসেইন।
সে কারণে অস্ট্রেলিয়ানদের কথাগুলোকে তাঁর কাছে অবিবেচকের মতো মনে হচ্ছে, ‘এসব কারণেই দুনিয়ার অন্য পাশ থেকে ওদের (অস্ট্রেলিয়ানদের) কিছু না ভেবেই একটা কিছু বলে ফেলা পছন্দ হচ্ছে না। গত ১৮ মাস আমাদের যদি কিছু শিখিয়ে থাকে, তবে সেটি এই যে, এই সময়ে সহমর্মিতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’