শঙ্কার নাম ‘উদ্বোধনী ব্যাটিং’

ঢাকা টেস্টে উদ্বোধনী ব্যাটিং নিয়ে শঙ্কাছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি ছিল ব্যর্থ। সাদমান ইসলাম আর সাইফ হাসান নতুন বলে পাকিস্তানি বোলারদের সঙ্গে লড়াইয়ের ধারেকাছেও ছিলেন না। নড়বড়ে ব্যাটিংয়ে দলের বিপদ বাড়িয়েছেন তাঁরা। দুই ইনিংসেই দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের আউট হওয়ার ধরন শঙ্কিত করেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শনিবার শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টের আগে এই উদ্বোধনী জুটিই সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে।

সাদমানের সঙ্গী হবে কে
ছবি: এএফপি

এই টেস্টে অবশ্য সাইফ খেলতে পারবেন না। চট্টগ্রাম টেস্ট শেষ হওয়ার পরপরই টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে দল ছেড়েছেন তিনি। মিরপুরে তাই সাদমানের সঙ্গী হিসেবে কে খেলবেন, সেটি নিয়ে চলছে চিন্তাভাবনা। দলে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের তরুণ ব্যাটসম্যান মাহমুদুল হাসান আছেন। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের বাইরে থাকা টি-টোয়েন্টি দলের ওপেনার মোহাম্মদ নাঈমকে দলে ডাকা হয়েছে। বেশ কয়েকটি টেস্টে তিন নম্বরে ব্যাটিং করা নাজমুল হোসেনকেও সাদমানের সঙ্গী হিসেবে ভেবে রাখা হয়েছে। সাদমানের সঙ্গে নাজমুলকেই ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

মাত্র ৬টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা নাঈমকে কেন টেস্ট দলে ডাকা হয়েছে, সেটি নিয়ে বিস্তর প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনকে। যে ব্যাটসম্যানের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ব্যাটিং গড় ১৫, তাঁকে কেন, কোন হিসেবে টেস্ট স্কোয়াডে ডাকা হলো, সেটিই ভেবে পাচ্ছেন না কেউ। মিনহাজুল অবশ্য সাইফের না থাকার কথা বলেছেন। আর বলেছেন নাঈমের ‘অনুশীলন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা’র কথা। তবে হঠাৎই নাঈমকে দলে ডাকা বাংলাদেশের ক্রিকেটের সার্বিক ক্রিকেটীয় প্রক্রিয়ার দুর্বলতাকেই আবার সামনে নিয়ে এসেছে।

স্কােয়াডে আছেন তরুণ মাহমুদুল হাসান
Shamsul Haque Tanku

গতকাল মিরপুরের অনুশীলন নেটে নাঈমকে দেখেই মনে হয়েছে, কতটা অপ্রস্তুত অবস্থায় তিনি টেস্ট দলের অংশ হয়েছেন। কোভিড পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ’ হয়ে দ্রুত নেটে যোগ দিয়েই বিপদে পড়েন নাঈম। স্কোয়াডে থাকা পেসার খালেদ আহমেদ, রেজাউর রহমানদের বলেও ঠিকমতো ব্যাটে-বলে করতে পারছিলেন না তিনি। দূর থেকেও লাল বলে তাঁর দুর্বলতা ধরা পড়ছিল। নাঈমের অসহায়ত্ব দেখে ব্যাটিং পরামর্শক অ্যাশওয়েল প্রিন্স আলাদা করেই নাঈমকে সময় দিয়েছেন অনেকক্ষণ। নেটে নাঈমের ব্যাটিংয়ের সময় প্রিন্সের অভিব্যক্তিতেও হতাশা ফুটে উঠছিল।

জাতীয় দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেললেও এখনো টেস্ট খেলা হয়নি নাঈমের। সে প্রশ্নও ওঠেনি। কারণ, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মাত্র ৬ ম্যাচ খেলা নাঈম কখনোই টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়ার মতো কিছু করতে পারেননি। তাঁর ব্যাটিং গড়ও বেশ হতাশাজনক—মাত্র ১৬.৬৩। ১৮ মাস আগে প্রথম শ্রেণির ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) একটি ম্যাচে তিনি দুই ইনিংসেই শূন্য রানে ফিরেছিলেন।

নাঈমের নেট ব্যাটিং হতাশাজনক
ছবি: শামসুল হক

ঢাকা টেস্টে সাদমানের বিকল্প খুঁজতে গিয়ে যদি নাজমুলকে উদ্বোধনী ব্যাটিংয়ে পাঠানো হয়, তাহলে সেটি হবে নাজমুলের জন্যও বড় পরীক্ষা। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে হঠাৎই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চে অভিষেক হওয়ার পর কখনোই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেননি নাজমুল। এখন পর্যন্ত ১০ টেস্ট খেলে ৩১.২৭ গড়ে ৫৬৩ রান করা নাজমুলের যা কিছু অর্জন, সেটি তিন নম্বরে ব্যাটিং করেই। পাল্লেকেলেতে এ বছরের এপ্রিলে তাঁর ব্যাট থেকে ১৬৩ রানের একটা ইনিংস এসেছিল। জুলাইতে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেছেন আরও একটি শতরান। সবই তিন নম্বরে ব্যাটিং করে। এখন দলের প্রয়োজনে যদি তাঁকে শুরুতে নামতে হয়, তাতে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটিই কঠিন হয়ে যেতে পারে নাজমুলের জন্য। কিন্তু যেখানে বিকল্প নেই, সেখানে ঝুঁকি তো তাঁকে নিতেই হবে, সেটি দলের প্রয়োজনেই।

নাঈম বা মাহমুদুল–দুজনেরই খেলার সম্ভাবনা কম
ছবি: শামসুল হক

যার ‘সঙ্গী’ খুঁজতে নির্বাচকদের গলদঘর্ম, সেই সাদমানের অবস্থাটা কেমন! ৭৬ রানের ইনিংস দিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করা সাদমান এত দিন তামিম ইকবালের ছায়ায় বেড়ে উঠেছেন। কিন্তু কয়েক মাস ধরেই তামিমের অনুপস্থিতি সাদমানকে সেই ছায়া থেকে বের হতে বাধ্য করেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে এক ইনিংসে ১৪ করেছেন, পরের ইনিংসে ১। যদিও জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে টেস্টে পেয়ে গিয়েছিলেন প্রথম টেস্টে শতক। ছোট্ট ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাওয়া সাদমানের জন্য ঢাকা টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ। তিনি ঘুরে দাঁড়ালেই উদ্বোধনী জুটি নিয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় থাকা বাংলাদেশ দল কিছুটা হলেও নির্ভরতা পায়।

ঢাকা টেস্টে সাকিব ফিরবেন, হয়তো ফিরতে পারেন তাসকিনও। ফর্মে আছেন লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম। মোটামুটি ভালো একটা অভিষেক হওয়া ইয়াসিরের ব্যাটিং আশা জাগাচ্ছে। সাকিবের উপস্থিতি বোলিংকেও বাড়তি শক্তি জোগাচ্ছে। কিন্তু উদ্বোধনী ব্যাটিংয়ের করুণচিত্র এরপরও ঢাকা টেস্ট বাংলাদেশকে শুরু করতে হবে শঙ্কা নিয়েই।