শর্ট বলে স্মিথকে কাবু করতে পারবে না ভারত

২০১৯ অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথ।ফাইল ছবি

ফাস্ট বোলারদের বিপক্ষে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কার। সেই গাভাস্কার পর্যন্ত বলছেন, ‘কেউ কখনো শর্ট বলের জন্য প্রস্তুত থাকে না! ভালো শর্ট বলে সেরা ব্যাটসম্যানেরও সমস্যা হয়। কেউ বলতে পারবে না ‘‘আমি তৈরি’’।’

প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ১০ হাজার রান করা গাভাস্কার কেন নতুন করে এই কথা বলছেন, প্রশ্নটা তুলতেই পারেন। গত শতকের সত্তরের দশকে ক্যারিবিয়ানে গিয়ে ভয়ংকর সব ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলারের বাউন্সার সামলানো গাভাস্কার আসলে মনস্তাত্ত্বিক খেলা খেলার চেষ্টা করছেন। চেষ্টা করছেন অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের, বিশেষ করে দলটির সেরা ব্যাটসম্যান স্টিভ স্মিথের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিতে।

গাভাস্কারদের ভারত এখন অস্ট্রেলিয়ায়। পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে সেখানে একঝাঁক পেসার নিয়ে গেছে বিরাট কোহলির দল। গত বছরের অ্যাশেজে জফরা আর্চারের বাউন্সারের আঘাতে কনকাশন (মস্তিষ্কে আঘাতজনিত জটিলতা) হয়েছিল স্মিথের। ভারতীয়রা সুযোগ পেলেই বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন সেই কথা।

জফরা আর্চারের বাউন্সারের আঘাতে লুটিয়ে পড়ার ঠিক আগে স্মিথ। ২০১৯ অ্যাশেজে।
ফাইল ছবি

অস্ট্রেলীয় শিবিরও অবশ্য বসে নেই। তাঁরাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন বাউন্সার সামলেই কীভাবে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন স্মিথ। স্মিথ নিজেও বলেছেন বাউন্সারে তাঁর কোনো সমস্যা নেই। বলেছেন, ‘আসুক না ভারতীয় পেসাররা।’ সপ্তাহখানেক আগে স্মিথ বলেছেন তাঁর ব্যাটিংয়ের সময়ে টানা শর্ট বল করে গেলে বরং বোলারদেরই সমস্যা। খুব দ্রুতই তখন ক্লান্ত হয়ে পড়বেন পেসাররা। আর এই সুযোগে ব্যাটসম্যানদের কাজটা সহজ হয়ে যাবে।

স্মিথের ওই জবাবের পর প্রায় প্রতিদিনই ভারতীয় পেসার আর স্টিভ স্মিথের লড়াই নিয়ে কথা হচ্ছে। আজই যেমন সুনীল গাভাস্কার বললেন। শুধু গাভাস্কারই নন, আজ স্মিথ আর শর্ট বল নিয়ে কথা বললেন অস্ট্রেলিয়ার সহকারী কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ডও। ম্যাকডোনাল্ড বললেন, ভারতীয়রা পারলে সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও স্মিথকে শর্ট বল করার চেষ্টা করে দেখতে পারে। তাতে তাঁর শিষ্যের কোনো সমস্যা হবে না বলেই বিশ্বাস ম্যাকডোনাল্ডের।

শর্ট বলে স্মিথের কোনো সমস্যা নেই বলেই মনে করেন অস্ট্রেলিয়ার সহকারী কোচ ম্যাকডোনাল্ড।
ফাইল ছবি

মাত্রই শেষ হওয়া আইপিএলে খুব ভালো করতে পারেননি স্মিথ। সেখানেও স্মিথের রাজস্থান রয়্যালসের কোচ ছিলেন ম্যাকডোনাল্ড। আইপিএলে ১৪ ইনিংসে দুবার অপরাজিত থেকে ৩১১ রান করেছেন স্মিথ। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক সেখানে ১০ বারই আউট হন পেসারদের বলে।

এই পরিসংখ্যান মনে রেখেই ম্যাকডোনাল্ড বলছেন, পেস বোলিংয়ের সামনে স্মিথের কোনো দুর্বলতা নেই, ‘আমার মনে হয় না এটি আসলে কোনো দুর্বলতা। আমি মনে করি, শুরুতে তাঁরা তাঁকে (স্মিথ) আউট করতে বিশেষ জায়গায় বল ফেলেছে। শুরুর ওই পরিকল্পনার পর তাঁরা (বোলাররা) কিন্তু আবার প্রথাগত পরিকল্পনায় ফিরে গিয়ে রান আটকানোর চেষ্টা করেছে। তাই বলছি, ওই পরিকল্পনা পুরোপুরি কাজে লাগেনি।’

স্মিথ কীভাবে প্রতিপক্ষের শর্ট বলের বিপক্ষে রান করেছেন, তার উদাহরণও দিয়েছেন ম্যাকডোনাল্ড। গত জানুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৯৮ ও ১৩১ রানের দুটি ইনিংস আছে স্মিথের।

স্মিথ কীভাবে প্রতিপক্ষের শর্ট বলের বিপক্ষে রান করেছেন, তার উদাহরণও দিয়েছেন ম্যাকডোনাল্ড। গত জানুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৯৮ ও ১৩১ রানের দুটি ইনিংস আছে স্মিথের। ম্যাকডোনাল্ড উদাহরণ টেনেছেন ওই সিরিজের, ‘শুরুতে তাঁদের পরিষ্কার পরিকল্পনা ছিল। তাঁরা লেগ গালি, ডিপ স্কয়ার ও স্কয়ারের সামনেও ফিল্ডার রেখেছিল, আর পাওয়ার প্লেতে অফসাইডে সবাই সামনে ছিল। স্মিথকে আউট করার সবচেয়ে ভালো উপায় ছিল এটিই। কিন্তু সে কী দারুণভাবেই না ভারতীয়দের খেলল! বেঙ্গালুরুতে সে ১৩১ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলল। রাজকোটেও তাঁর ভালো অবদান ছিল। সে অবশ্য আগেও এমন করেছে। আমি মনে করি, এই সিরিজেও তাঁর ব্যাটিংয়ে কোনো পরিবর্তন আসবে না।’

ভারতীয় পেসারদের সঙ্গে স্মিথের লড়াই দেখতে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। আগামী শুক্রবারই শুরু হচ্ছে ওয়ানডে সিরিজ।