শামসিকে সামলাতে পারল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ

শামসিকে খেলতেই পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ।ছবি: এএফপি

সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সহজ জয়ের পথে ছিল। ১৬৮ রানের লক্ষ্যে ৫৫ রান তুলে ফেলেছিল বিনা উইকেটে। সে ম্যাচটাই কঠিন করে তুলল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্বাগতিকদের জন্য কাজটা আসলে কঠিন করে তুলেছিলেন একজনই-তাবরিজ শামসি।
 
দক্ষিণ আফ্রিকান বাঁহাতি লেগ স্পিনারের বল সামাল দিতেই পারছিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগের ম্যাচে ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান দেওয়া শামসি আজ আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেছিলেন। শামসিকে সামলাতে না পেরে রান তোলা থামিয়ে দিয়েছিল উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা। শেষ পর্যন্ত মাত্র ১ রানে হেরে তার প্রায়শ্চিত্য করেছে দলটি। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে আজ ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।

৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়েছেন শামসি।
ছবি: এএফপি

পাওয়ার প্লেতে ৪৮ রান তুলেছিল ওয়েসস্ট ইন্ডিজ। স্বাগতিকদের প্রথম ধাক্কা দিয়েছেন অবশ্য আরেক বাঁহাতি, জর্জ লিন্ড। সপ্তম ওভারে লেন্ডল সিমন্সকে (২২) ফিরিয়ে দিয়েছেন এই বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার। শামসি–শো শুরু হলো পরের ওভারে। শামসিকে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ধরা পড়লেন ফর্মে থাকা এভিন লুইস (২৭)। প্রথম ওভারে মাত্র ২ রান দিয়ে ১ উইকেট শামসির।

পরের দুই ওভারে মার্করাম ও লিন্ডের ওভার থেকে ৩০ রান তুলে ফেলেন জেসন হোল্ডার ও শিমরন হেটমেয়ার। ১১তম ওভারে প্রোটিয়াদের আশা ফেরান লুঙ্গি এনগিডি। হোল্ডারকে (১৬) তুলে নেন এনগিডি। রান-বন্যা আটকাতে আবার ফেরানো হয় শামসিকে। প্রথম তিন বলে মাত্র এক রান দিয়ে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন শামসি। চতুর্থ বলেই তাঁকে মারতে গিয়ে আউট হেটমায়ার(১৭)। দ্বিতীয় ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে আবার ১ উইকেট পেলেন শামসি।

পরের ওভার করতে এলেন কাগিসো রাবাদা। টানা তৃতীয় ওভারে উইকেট হারাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবার ফিরলেন পোলার্ড (১)। পরের ওভার শামসি করতে এলেন। এবার শিক্ষা নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের রাসেল ও পুরান। এই ওভারে মাত্র ৪ রান খরচ করলেন শামসি।

শেষ ওভারে স্নায়ুরচাপের মুখে ভালো বল করেছেন রাবাদা।
ছবি: এএফপি

৬ ওভারে ৫৮ রান দরকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ইনিংসের এ পর্যায়ে উইকেট ও রানের দিক থেকে প্রোটিয়ারাই এগিয়েছিল। কিন্তু ইনিংসের শেষ দিকে যে কাজটা করতে পারেনি সফরকারীরা, সেটা করার লোকের তো অভাব নেই উইন্ডিজ দলে। পরের ওভারেই রাবাদাকে ছক্কা মেরে সে ওভার থেকে ১০ রান তুলে নিলেন রাসেল। আবার শামসি বল হাতে তুলে নিতেই শান্ত হয়ে গেলেন। মাত্র ৪ রান এলো। ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে স্পেল শেষ হলো শামসির।

শামসির স্পেল শেষ হতেই বুনো মেজাজ রাসেলদের। আনরিখ নর্কিয়ার প্রথম দুই বলে ছক্কা মারলেন রাসেল। শেষ বলে রাসেল (২৫) আউট হলেও সে ওভার থেকে ১৬ রান এনে দিয়ে সমীকরণটা একদম সহজ করে দিয়েছিলেন। এনগিডির পরের ওভারে আরও ৯ রান।

শেষ ২ ওভারে ১৮ রান দরকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। নর্কিয়া দিনের সেরা বোলিং তখনই করলেন। আগের ৩ ওভারে ২৫ রান দেওয়া এই ফাস্ট বোলার পুরানকে (২৭) এলবিডব্লু করেছেন, রানও দিয়েছেন মাত্র ৪টি।

শেষ ওভারে ১৫ রান দরকার ছিল উইন্ডিজের। আগের তিন ওভারে ২৮ রান দেওয়া রাবাদা শুরু করলেন ওয়াইড দিয়ে। পরের বলে কোনো রান এল না। কিন্তু দ্বিতীয় বলে দিলেন ফুলটস। লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের সে বল চার মারলেন ফাবিয়ান অ্যালেন। পরের বলে আবার ডট!

ডি ককের ইনিংসই দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভরসা দিয়েছে।
ছবি: এএফপি

৩ বলে দরকার ১০ রান। রাবাদার পরিকল্পনা স্পষ্ট টের পাওয়া যাচ্ছিল। অ্যালেনকে হাত খোলার জায়গা না দেওয়ার জন্য ক্রমাগত লেগ স্টাম্পের বাইরে বল করছিলেন। ইনসুইং হয়ে বেড়িয়ে যাওয়া চতুর্থ বলে ২ রান এল। পঞ্চম বলটি প্রথম ও তৃতীয় বলের কার্বন কপি। স্টাম্পে পিচ করে লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে যাওয়া বল। কিন্তু ইয়র্কার লেংথের বল মারতে গিয়ে তৃতীয়বারের মতো মিস করলেন অ্যালেন।

শেষ বলে ৮ রান দরকার ছিল উইন্ডিজের। রাবাদা তাই কোনো ঝুঁকি না নিয়ে শুধু নিয়ম মেনে বল করলেন। পায়ের ওপর ফুলটস, ছক্কা! কিন্তু এতেও লাভ হয়নি, ১ রানে জিতে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

এর আগে আগের দুই ম্যাচের মতোই ইনিংস এগিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার। প্রথমে দুই ওপেনার রিজা হেনড্রিকস ও কুইন্টন ডি কক ঝোরো শুরু এনে দিয়েছেন। ৪ ওভারে ৪২ রান তোলার পর হেনড্রিকস (১৭)আউট হয়েছেন পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে।

কিন্তু আজ আর কুইন্টন ডি কক হাল ছাড়েননি। ৫১ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৭২ রান করেছেন সাবেক অধিনায়ক। সে সঙ্গে এইডান মার্করাম (২৩) ও রাসি ফন ডার ডুসেনের (৩২) ইনিংস দুটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৬ ওভারে ১৪০ রানে পৌছে দিয়েছিল। কিন্তু শেষ ৩ ওভারে ২২ রান তুলতে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে সফরকারীরা। শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য ওটাই যথেষ্ট বনেছে।