‘শামুক’গতির সমালোচনা, জবাব দিলেন পূজারা

ইনিংস টানতে না পেরে সমালোচনার মুখে পূজারা।ছবি: এএফপি

এ যেন বাংলা চলচ্চিত্রের সেই বিখ্যাত ডায়ালগ, ‘গরিব হওয়া অপরাধ নয়, কিন্তু…’

প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে মাত্র ৫ ওভার কম খেলেছে ভারত। কিন্তু রানের দিক থেকে সফরকারীরা পিছিয়ে ছিল ৯৪ রানে। টেস্টে রান রেট খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু ১০০ ওভার খেলেও ভারতের মাত্র ২৪৪ রান তোলাটা সাবেকদের বড্ড পীড়া দিচ্ছে। সবাই মিলে ভারতের ব্যাটিংয়ের ধরনের সমালোচনা করছেন। আর সমালোচনার সব তির ছুটছে চেতেশ্বর পূজারার দিকে।

কোহলি না থাকায় ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের নেতৃত্ব এখন অজিঙ্কা রাহানে ও পূজারার কাঁধে। সে দায়িত্ব পালন করে মেলবোর্ন টেস্ট জিতিয়েছেনও দুজন। সিডনি টেস্টেই তাই সবার এভাবে তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়াকে পাত্তা দিচ্ছেন না পূজারা। বলছেন, তিনি বরাবরই এমন ব্যাটিং করেন।

টেস্টে পূজারার স্ট্রাইক রেট পঞ্চাশের নিচে। প্রতিপক্ষের মাঠে সেটা চল্লিশে নেমে আসে। অস্ট্রেলিয়াতে সেটা কমে দাঁড়ায় ৩৮-এ। কিন্তু ২০১৮ সালে এভাবে খেলেই দলকে সিরিজ জিতিয়েছেন পূজারা। তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরনই হলো ধৈর্যের পরীক্ষা। নিজে পরীক্ষা দেন, বোলারদের পরীক্ষা নেন। একপর্যায়ে সে লড়াইয়ে জিতে রানের গতি বাড়ান।

সিডনিতেও সে লক্ষ্যে নেমেছিলেন। কিন্তু একটু বেশিই ধীরগতিতে এগিয়েছেন। নিজের ক্যারিয়ারের ধীরতম ফিফটির রেকর্ড গড়েছেন আজ। ১৭৪তম বলে ফিফটি করার পর পরিশ্রমের ফলটা বুঝে নিলে হয়তো অত কথা হতো না। কিন্তু এক বল বিরতি দিয়েই আউট হয়ে গেছেন প্যাট কামিন্সের বলে।

সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক রিকি পন্টিং যেমন পূজারার ব্যাটিংয়ে দোষ খুঁজে পেয়েছেন। বলছেন ভারতকে উল্টো চাপে ফেলে দিয়েছেন পূজারা, ‘আমার মনে হয় না এটা সঠিক ছিল। আমার ধারণা, ওর আরেকটু সচেতন হওয়া উচিত ছিল রান তোলা নিয়ে। কারণ, মনে হয়েছে ওর ব্যাটিং সঙ্গীদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছিল।’

কামিন্সের বলে বারবার আউট হচ্ছেন পূজারা।
ছবি: এএফপি

পন্টিংয়ের টুইটের সুরেই কথা বলতে দেখা গেছে প্রজ্ঞান ওঝাকে। স্পোর্টস টুডেকে সাবেক স্পিনার বলেছেন, ‘দ্বিতীয় দিনে বিনা উইকেটে ৭০ রানের সময় রোহিত শর্মা, শুবমান গিল ভালোই খেলছিল। বিকেলের সেশনে গিয়ে আমরা গতি হারিয়েছি। এরপর আজ অস্ট্রেলীয়রা খুব ভালো পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছে। তারা আমাদের অস্বস্তিতে ফেলেছে বাউন্সার দিয়ে। ওরা সফলভাবেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে।’

এরপরই পূজারার দোষ দেখিয়েছেন ওঝা, ‘দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়, ওকেই চেষ্টা দেখাতে হবে। সেই ২০১৮ সিরিজ জিতিয়েছে কিন্তু এখন সবাই ওকে নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এত ধীরে খেললে চলবে না, ক্রিকেট বদলে গেছে। টেস্ট ম্যাচেও নির্দিষ্ট গতিতে রান করতে হয়। এর নিচে যাওয়া যাবে না। সেটা করলে দলকে ভুগতে হবে। আজ ভারতকে এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।’

দীপ দাসগুপ্ত অবশ্য অধিনায়ক রাহানের দোষও খুঁজে পেয়েছেন, ‘এটা পূজারা, হনুমা ও অজিঙ্কা করেছে। ৩৫ ওভারে ওরা মাত্র ৫৭ রান তুলেছে। কুকাবুরা বল পুরোনো হলে, সুযোগ নেওয়া উচিত। কারণ, নতুন বল একটু পরেই নেবে প্রতিপক্ষ। শুধু সময় নষ্ট করলে চলবে না। এটা হতাশাজনক ছিল। আমরা সবাই জানি, পূজারা এভাবেই খেলে। কিন্তু ওর মতো অভিজ্ঞ একজন ও অজিঙ্কার উচিত ম্যাচের পরিস্থিতি বোঝা। বিশেষ করে তৃতীয় দিনের প্রথম ৩০ মিনিটের পরই।’

রাহানের ইনিংস নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
ছবি: এএফপি

পূজারার ১৭৬ বলে ৫০ রানের ইনিংসের পাশে রাহানে ৭০ বলে ২২ রান করেছেন। ৩৮ বলে ৪ রান করেছেন হনুমা বিহারী। এই স্লথগতির ফলেই অস্ট্রেলিয়া চেপে বসতে পেরেছিল আজ। ২১.৪ ওভারে ২৯ রানে ৪ উইকেট নেওয়া কামিন্সও বলেছেন, পূজারাদের রান নেওয়ার অনীহা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে।

পূজার অবশ্য নিজের দোষ দেখছেন না কোনো, ‘আমরা সেরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু মাঝেমধ্যে প্যাট কামিন্সের পরিকল্পনা একটু বেশি ভালো হয়। মাঝেমধ্যে সে খেলা যায় না এমন বল করে। যেমন আজ আমি যেটায় আউট হয়েছি। আমার কাছে সিরিজের সেরা বল মনে হয়েছে এটা। মাঝেমধ্যে ব্যাটিং দল হিসেবে মেনে নেওয়া ভালো (বোলিং ভালো হচ্ছে)। আমরা সেরা চেষ্টাই করছি।’

সিরিজে পাঁচবার মুখোমুখি হয়ে চারবারই কামিন্সের বলে আউট হয়েছেন পূজারা। এই পেসারের বলে এখনো ২০ রান করা হয়নি তাঁর। তবে পূজারা নিজের ব্যাটিং ধরন পাল্টাবেন না বলেই জানিয়েছেন, ‘ওর বলে চারবার আউট হয়েছি, কিন্তু কিছু ভালো বল ছিল। আমাদের সেটা সম্মান করতে হবে। আমি নিজের ব্যাটিং নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। আজ যেভাবে আউট হয়েছি, সেটা মেনে নিতে হবে। এর চেয়ে ভালো কিছু করা সম্ভব ছিল না। আমাকে সেভাবেই ব্যাট করতে হবে, যেভাবে আমি ব্যাট করতে জানি (ধীরগতিতে)। দল হিসেবে আমাদের জুটি বাঁধতে হবে এবং ভালো করতে হবে।’