শুরুর চাপ ধরে রাখতে পারলেন না বোলাররা

বোলারদের নিয়ে হতাশা থাকবে সাকিবের। ম্যাচের একটি মুহূর্তে বাংলাদেশ অধিনায়ক। ছবি: শামসুল হক।
বোলারদের নিয়ে হতাশা থাকবে সাকিবের। ম্যাচের একটি মুহূর্তে বাংলাদেশ অধিনায়ক। ছবি: শামসুল হক।
>ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশের বিপক্ষে আগে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ১৬৪ রান তুলেছে আফগানিস্তান। ভালো শুরু পেলেও শেষের ঝড় সামলাতে পারেননি বোলাররা

স্বপ্নের মতো শুরু করেছিলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। আফগানিস্তানের ইনিংসে প্রথম বলেই উইকেট। তাও স্বপ্নের মতো এক ডেলিভারিতে। নিখুঁত আউট সুইং রহমানউল্লাহ গুরবাজের ব্যাট ফাঁকি দিয়ে উপড়ে দেয় অফ স্টাম্প। এরপর টানা দুই ওভারে এসেছে আরও দুই উইকেট। তখন আফগানিস্তানকে স্বল্প রানে গুটিয়ে দেওয়ার স্বপ্নই দেখেছে বাংলাদেশ। কিন্তু মোহাম্মদ নবী ও আসগার আফগানের দৃঢ়তায় তা আর হয়নি। শেষ দিকে তো দুর্দান্ত পাওয়ার ব্যাটিংয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন নবী। তাঁর অসাধারণ (৫৪ বলে ৮৪) ইনিংসে ভর করেই ৬ উইকেটে ১৬৪ রান তুলে থেমেছে আফগানিস্তানের ইনিংস।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা ছক্কা বাজি আজও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছে আফগানিস্তান। তাতে পুরোপুরি সফল হতে না পারলেও একেবারে অসফলও বলা যায় না। এর কারণ শুরুতে পাওয়ার প্লের প্রথম ৬ ওভারেই দলটিকে চেপে ধরেছিলেন স্বাগতিক বোলাররা। টানা তিন ওভারে ৩ উইকেট হারানোর পর ৬ ওভারের মধ্যে ৪ উইকেটে ৪০ রানে পরিণত হয়েছিল আফগানিস্তান। ঠিক এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেন নবী ও আফগান। পঞ্চম উইকেটে ৬২ বলে ৭৯ রানের জুটি গড়েন দুজন। তাঁরা ব্যাটিং করার সময় মনেই হয়নি আফগানিস্তান শুরুতে ভীষণ চাপে ছিল। আর বাংলাদেশের বোলাররাও শুরুর চাপটা ধরে রাখতে পারেননি।

আফগানিস্তানের ইনিংসে প্রথম ১০ ওভার শেষেও (৪ উইকেটে ৬০ রান) নাগালটা বাংলাদেশের বোলারদের হাতেই ছিল। পরের ওভার থেকে প্রতি আক্রমণ শুরু। প্রায় প্রতি ওভারেই চার-ছক্কা মেরেছেন নবী-আফগান জুটি। মোসাদ্দেক হোসেনের করা ১২তম ওভার থেকে ১২ রান ও তাইজুলের করা ১৫তম ওভার থেকে ১৬ রান তুলে নেন দুজন। এ সময় মোস্তাফিজুর রহমানকেও ভালোই পিটিয়েছেন তাঁরা। এ ম্যাচেও বল হাতে তেমন কিছু দেখাতে পারেননি মোস্তাফিজ। শেষ পর্যন্ত সাইফউদ্দিন এসে ভেঙেছেন নবী-আফগানের জুটি।

১৭তম ওভারে তাঁকে তুলতে মারতে গিয়ে সাব্বির রহমানকে ক্যাচ দেন আফগান। ২ ছক্কা ও ৩ চারে ৩৭ বলে ৪০ রান করেন তিনি। অবশ্য তাদের জুটি ১৫তম ওভারেই ভাঙতে পারতেন তাইজুল। ওই ওভারের প্রথম বলে তাঁকে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন নবী। কিন্তু তাইজুল ‘নো বল’ করায় উইকেট পতনের বদলে ফ্রি হিট পায় আফগানিস্তান। তাইজুলের নো বল ছাড়াও উইকেটের পেছনেও দিনটা ভালো যায়নি বাংলাদেশের। সাকিবের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেন মুশফিকুর রহিম। এ ছাড়াও গ্লাভস ফসকে রানও দিয়েছেন তিনি।

সাইফউদ্দিন ১৭ ওভারে আফগানকে তুলে নেওয়ার তিন বল পর গুলবদিন নঈবকেও ফিরিয়েছেন। কিন্তু অন্য প্রান্তে নবীর মারমুখী ব্যাটিং থামেনি। সৌম্য সরকারের করা ১৮তম ওভারে এসেছে ২২ রান, এর মধ্যে নবী একাই তুলেছেন ২১! সিঙ্গেলসের সঙ্গে ছিল দুই ছক্কা ও দুই চারের মার। সাকিব এ সময় সৌম্যকে কেন বোলিংয়ে আনলেন সে প্রশ্ন থাকবে।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সাইফউদ্দিন (৪-০-৩৩-৪) যদি সবচেয়ে উজ্জ্বল হন তবে আফগানিস্তানের হয়ে মোক্ষম প্রতি উত্তর দিয়েছেন নবী। ১৯তম ওভারে সাইফউদ্দিনকেও দুটি ছক্কা মারেন তিনি। এ ওভার থেকে ১৭ রান তুলে নেন নবী। নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে চোখ ধাঁধানো সব স্ট্রোক খেলেছেন তিনি। বাংলাদেশের বোলাররাও এ সময় নবীর মারমুখী ব্যাটিংয়ের চাপে লাইন-লেংথ হারিয়ে ফেলেছিলেন।

শেষ ওভারে ৩ রান দিয়ে অন্তত শেষটা ভালো করেছেন মোস্তাফিজ। তবে আফগানিস্তানের ইনিংসের শেষ ১০ ওভারে মোটেও ভালো করতে পারেননি বোলাররা। এই ৬০ বলে ১০৪ রান তুলেছে তারা। আর শেষ ৩০ বলে উঠেছে ৫৬ রান। সেঞ্চুরির সুবাস নিয়ে এক প্রান্ত ধরে রেখেছিলেন নবী। ৭ ছক্কা ও ৩ চারে ৮৪ রানের ইনিংসটি সাজান তিনি। ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন সাকিব।