শেবাগের প্রশ্ন, অস্ট্রেলিয়ানরা কান্নাকাটি করছে কেন?

‘কনকাশন’ বদলি হয়ে নেমে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন যুজবেন্দ্র চাহাল। তাঁর বদলির বৈধতা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন।
ছবি: টুইটার

অ্যারন ফিঞ্চ ও ডার্সি শর্ট ব্যাটিং করার সময় ম্যাচটা ভারতের মুঠো ফসকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু রবীন্দ্র জাদেজার ‘কনকাশন’ বা মাথায় আঘাতজনিত বদলি হয়ে মাঠে নামা যুজবেন্দ্র চাহাল বোলিংয়ে গিয়ে ঘুরিয়ে দেন ম্যাচের মোড়।

কাল শেষ পর্যন্ত ১১ রানে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতেছে ভারত। ফিঞ্চ, স্টিভেন স্মিথ ও ম্যাথু ওয়েডকে তুলে নেন চাহাল।

অর্থাৎ, মাথায় আঘাতজনিত বদলির নিয়মে খেলার সুযোগ পেয়ে বাজিমাত করেছেন এই লেগ স্পিনার। তাঁর এই বদলি নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন।

স্বয়ং ভারতের ক্রিকেট বিশ্লেষক থেকে সাবেকরাই বলছেন, আইনের ফাঁক খুঁজে বের করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ভারত।

সাবেক ভারতীয় স্পিনার প্রজ্ঞান ওঝা বলেছেন, সব নিয়মেরই ফাঁক আছে, ভারত তার ফায়দা লুটেছে। সঞ্জয় মাঞ্জরেকার বলেছেন, ‘আইনের ফাঁক খুঁজে বের করায় আমরা “ওস্তাদ”।’ তবে সবাই এই দলে নেই।

বীরেন্দর শেবাগ যেমন বরাবরই বিপরীত স্রোতে চলতে পছন্দ করেন। শেবাগের মতে, চাহালের বদলি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ানদের এত অভিযোগ-অনুযোগ সর্বোপরি কান্নাকাটির কিছু নেই। এর আগে স্টিভেন স্মিথের কনকাশন বদলি নেমে মারনাস লাবুশেনও তো রান করেছেন!

শেবাগের কথা সত্য। কিন্তু যৌক্তিক কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্নের অবকাশ আছে। ২৩ বলে ৫ চার ১ ছক্কায় ৪৪ রানে অপরাজিত ছিলেন জাদেজা।

ভারতের সাবেক ওপেনার বীরেন্দর শেবাগ
ছবি: টুইটার

শেষ ওভারে মিচেল স্টার্কের বল তাঁর হেলমেটে লাগে। এ নিয়ে মাঠে তখন খুব একটা গা করেননি ভারতীয় অলরাউন্ডার। কিন্তু ভারত ফিল্ডিংয়ে নামার পর হঠাৎ তাঁকে তুলে নামিয়ে দেওয়া হয় চাহালকে।

দলের ম্যানেজমেন্ট থেকে বলা হয়, মাথায় আঘাত পাওয়ায় অস্বস্তি বোধ করছেন জাদেজা। আর তাঁর বদলে নেমেছেন চাহাল। তবে জাদেজার চোটের ধরন নিয়ে তখনই প্রশ্ন উঠেছিল।

কিন্তু ম্যাচ রেফারি ডেভিড বুন গা করেননি। যথাযথ নিয়ম মেনে ম্যাচ রেফারির অনুমতি পেয়ে গেলে এ নিয়ে প্রশ্নের সুযোগও তো থাকে না!

জাদেজা আঘাত পাওয়ার পর তাঁকে কিন্তু মাঠে কোনো চিকিৎসক দেখতে যাননি। আর নিয়ম অনুযায়ী এই বদলি ‘লাইক ফর লাইক’ ছিল কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন মইজেস হেনরিকেস। জাদেজা বাঁহাতি অলরাউন্ডার ও স্পিনার। চাহাল বিশেষজ্ঞ লেগ স্পিনার।

মিচেল স্টার্কের বলে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা
ছবি: টুইটার

এর আগে গত অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ান দলও কনকাশন বদলি করে। মাথায় আঘাত পাওয়া স্টিভ স্মিথের বদলে নেমেছিলেন লাবুশেন। যদিও স্মিথের মতো তিনিও ছিলেন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান।

সে যা-ই হোক, অস্ট্রেলিয়ানদের সেই কনকাশন বদলির উদাহরণ টেনে শেবাগ মনে করেন, ভারত ঠিক কাজটিই করেছে। মাথায় আঘাত পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া টের পেতে অনেক সময় ২৪ ঘণ্টাও পার হয়ে যায়—এই উদাহরণ টেনেছেন ভারতের সাবেক ওপেনার।

সনি সিক্সকে শেবাগ বলেন, ‘আমাদের জায়গা থেকে সিদ্ধান্তটা সঠিক। জাদেজা খেলার মতো ফিট ছিল না, বল করতে পারত না।’

শেবাগ ব্যাখ্যা করেন, ‘ভারত সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। সে মাথায় আঘাত পেয়েছিল, কেউ বলতে পারে না আঘাতের পর “কনকাশন” হতে কতক্ষণ সময় লাগে। অনেক সময় ২৪ ঘণ্টা সময়ও লাগে। ভারত সুযোগের সদ্ব্যবহারটা সঠিকভাবেই করেছে।’

শেবাগ মনে করিয়ে দিয়েছেন, কনকাশন বদলি নিয়মের প্রথম সুবিধাভোগী দল অস্ট্রেলিয়া, ‘স্মিথ মাথায় আঘাত পাওয়ার পর তার বদলি হিসেবে লাবুশেন নেমে রান করেছে। তারা প্রথম সুবিধাভোগী। এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ানদের অভিযোগের কিছু নেই।’

অবশ্য অস্ট্রেলিয়ানদের অভিযোগের জায়গাও দেখিয়ে দেন শেবাগ। জাদেজা আঘাত পেয়েও ব্যাট করলেন কীভাবে?

উত্তরটা শেবাগ নিজেই দেন, ‘ড্রেসিংরুমে এসে হেলমেট খোলার পর বোঝা যায় অবস্থা কতটা গুরুতর। অনেক সময় মাথা ঘোরে। আমি অনেকবারই হেলমেটে আঘাত পেয়েছি। আমি জানি কেমন লাগে, তবে আমাদের সময় তো এমন নিয়ম ছিল না।’

চাহালের কনকাশন বদলি নামার প্রতিবাদ জানান অস্ট্রেলিয়ার কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার
ছবি: টুইটার

সনি স্পোর্টস নেটওয়ার্কের অনুষ্ঠান ‘এক্সট্রা ইনিংসে’ সঞ্জয় মাঞ্জরেকার অবশ্য বিরাট কোহলির দলকে ছেড়ে কথা বলেননি, ‘এখন এটার পর কনকাশন বদলির ক্ষেত্রে অনেক ভাবনাচিন্তা করা হবে। পুরো ধারণা নিয়েই চিন্তা করতে হবে। কারণ, আইন তৈরি হয় ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই কিন্তু আমরা সবাই নিজেদের সুবিধার জন্য সেটার ফাঁক বের করায় “ওস্তাদ”। ভারত আইনটার ফায়দা নিয়েছে কি না, আমরা জানি না। তবে এখানে আইসিসির আরও ভালোভাবে নজর দেওয়া উচিত, যাতে একটা দল খুব বড় সুবিধা পেয়ে না যায়।’