সততা ও অন্য এক পরিসংখ্যানে স্মরণীয় থাকবেন তিনি

৯৭ বছর বয়সে মারা গেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার ডন স্মিথ।
ছবি: টুইটার

তিন টেস্টের চার ইনিংসে ২৫ রান, বোলিংয়ে ১ উইকেট। ডন স্মিথের ক্রিকেট পরিসংখ্যান বড্ড সাদামাটা। কিন্তু ইংল্যান্ডের সাবেক ওপেনারকে মনে রাখতে হবে অন্য এক পরিসংখ্যানে। জীবনের উইকেটে যেসব খেলোয়াড় দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন, তাঁদের শীর্ষ পাঁচে যে আছে তাঁর নাম। ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) কাল জানিয়েছে গত রোববার অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে ৯৭ বছর বয়সে মারা গেছেন ১৯৫৭ সালে তিনটি টেস্ট খেলা স্মিথ।

১৯২৩ সালে সাসেক্সের ব্রডওয়াটারে জন্মগ্রহণ করা স্মিথ জীবনের উইকেটে কাটিয়েছেন ৯৭ বছর ২১০ দিন। তাঁর চেয়ে বেশি বয়সী টেস্ট ক্রিকেটার মাত্র চারজন। এঁদের মধ্যে শুধু ২০১৪ সালে মারা যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার নরমান গর্ডনই ‘সেঞ্চুরি’ পেয়েছেন। পাঁচটি টেস্ট খেলা গর্ডন মারা যান ১০৩ বছর ২৭ দিন বয়সে।

এরপর আছে প্রয়াত দুই ক্রিকেটার নিউজিল্যান্ডের এরিক টিনডিল (৯৯ বছর ২২৬ দিন) ও ইংল্যান্ডের ফ্র্যান্সিস ম্যাকিনন (৯৮ বছর ৩২৪ দিন)। তালিকার চারে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ব্যাটসম্যান জন ওয়াটকিনস (৯৭ বছর ২৭৮ দিন) এখনো বেঁচে আছেন।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা সাদামাটা হলেও ডোনাল্ড ভিক্টর স্মিথের পরিসংখ্যান বেশ ঝলমলে। ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে ১৭ হাজারের বেশি রান ও ৩৪০ উইকেট তাঁর। খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানার পর কোচিংয়ে যোগ দেন স্মিথ। পরে ১৯৮৪ সালে শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের কোচও হয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কার দায়িত্ব ছাড়ার পর অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে পাড়ি জমান স্মিথ।

ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা ঝলমলে না হলেও স্মিথের সংক্ষিপ্ত টেস্ট ক্যারিয়ারে বলার মতো একটা ঘটনা আছে। যে ঘটনা স্মিথের সততার দলিল হয়েই আছে।

১৯৫৭ সালের ঘটনা। ট্রেন্ট ব্রিজে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে মুখোমুখি ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচের প্রথম দিনের সাতসকালেই সবাইকে অবাক করে দিলেন মাত্রই দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা ইংল্যান্ড ওপেনার ডন স্মিথ। বোলার ক্রিকেট ইতিহাসের বিখ্যাত ‘থ্রি ডব্লু’র অন্যতম ফ্র্যাঙ্ক ওরেল তো অবাক। অবাক যার গ্লাভসে জমা হলো বলটি সেই উইকেটকিপার রোহান কানহাই। বোলার কোনো আবেদন না করলেও যে নিজেকে আউট ঘোষণা করে বেরিয়ে গেলেন ১ রান করা স্মিথ।

ডন স্মিথ: ১৯২৩–২০২১
ফাইল ছবি

‘ওয়াক’ করে ড্রেসিংরুমে ফেরার পর অবশ্য অধিনায়ক পিটার মের প্রশ্নের মুখে পড়লেন স্মিথ। ‘টেস্ট ম্যাচ ওয়াক করার জায়গা না’—বিরক্ত মুখেই বললেন অধিনায়ক। অধিনায়কের কথা মানেননি স্মিথ, মাথা উঁচু রেখেই উত্তর দিয়েছিলেন, ‘দুঃখিত পিটার, তবে এটা তো ক্রিকেট ম্যাচই। আউট হয়েছি বুঝলে আমি বেরিয়ে যাবই। আমার বিবেক আমাকে থাকতে দেবে না।’

পিটার মে লাঞ্চের সময়ও আবার উঠিয়েছিলেন প্রসঙ্গটা। অধিনায়ক এবার বলেন, ‘আম্পায়াররা তো আউট নাও দিতে পারতেন, তাই উচিত ছিল থেকে যাওয়া।’ এবারও স্মিথ একই উত্তর দেন, ‘আমি তো আপনাকে বলেছিই, আমার ব্যাটে লেগেছিল।’
এরপর আর একটি মাত্র টেস্ট খেলতে পেরেছিলেন স্মিথ।