ভয় দূর করতে আগুনের ওপর হেঁটেছি

তাসকিন আহমেদ

প্রায় চার বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরেই দুর্দান্ত গতি, আগ্রাসন আর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে যেন মৃতপ্রায় ক্যারিয়ারে প্রাণ আনলেন তাসকিন আহমেদ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৮ উইকেট নেওয়া এই পেসার কাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন নিজের প্রত্যাবর্তন নিয়ে—

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: জাতীয় দল থেকে তো প্রায় হারিয়েই যাচ্ছিলেন। আবার ঘুরে দাঁড়ালেন কীভাবে?

তাসকিন আহমেদ: অফ ফর্ম, চোট নিয়ে খুব কষ্টে ছিলাম। আমার নিয়মশৃঙ্খলা, জীবনের প্রক্রিয়া ভালো ছিল না। গতবার ওমরাহ হজ থেকে ফেরার পর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দুটি ম্যাচ খেলতেই লকডাউন চলে আসে। ভাবলাম টিকে থাকতে হলে আমাকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হবে। কাজ না করলে আরও পিছিয়ে যাব। সবাই তো বলছিলই আমি শেষ। আমার ট্রেনার তাঁর বন্ধ জিম খুলে দেয় আমার জন্য। সাবিত রায়হান নামের এক মাইন্ড ট্রেনারের সঙ্গেও কাজ শুরু করি। নেতিবাচক ভাবনা বাদ দিয়ে কীভাবে নিজেকে অনুপ্রাণিত করা যায় সেগুলো নিয়ে কাজ শুরু করলাম। এক মাস অনুশীলনের পর যখন মনে হলো আমার দক্ষতা নিয়েও কাজ করতে হবে, তখন জাকি স্যারের (বিসিবির পেস বোলিং কোচ মাহবুব আলী) সঙ্গে কাজ শুরু করি। চার মাস এভাবে কাজ করার পর প্রেসিডেন্টস কাপ এল। সেখান থেকেই আবার শুরু।

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: এবার কি ফাস্ট বোলিংয়ের সঠিক প্রক্রিয়াটা খুঁজে পেলেন?

তাসকিন: হ্যাঁ, আমি এখন মাঠের বাইরের প্রক্রিয়া ও শৃঙ্খলায় কোনো ছাড় দিতে চাই না। আমি দেখেছি শরীর ঠিক থাকলেও মন ঠিক না থাকলে কিছুই হয় না। আবার মন ঠিক থাকল কিন্তু শরীর ঠিক থাকল না, তখনো হবে না। দুইটাই লাগবে।

সুশৃঙ্খল জীবনযাপন না করলে চোটে পড়তে হবেই। চোট থেকে সেরে ওঠাও কঠিন হয়ে যায়। বাজে চিন্তা ও বাজে খাবারের অভ্যাস বাদ দেওয়া এবং সিরিয়াস থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।
তাসকিন আহমেদ
প্রশ্ন:

প্রশ্ন: মনোবিদের সঙ্গে কী নিয়ে কাজ করেছেন?

তাসকিন: আপনি যদি নেতিবাচক চিন্তার মানুষ হন, তাহলে আপনার শরীরে ইতিবাচক শক্তি আসবে না। হয়তো আপনি অতিরিক্ত অনুশীলনের কারণে এক-দুই ম্যাচ ভালো খেলবেন, কিন্তু সব সময় নয়। মাইন্ড ট্রেনারের সঙ্গে এসব নিয়ে কাজ করেছি। মাঝে মাঝে মেডিটেশন করতে হয়, বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে মনের ভয় দূর করতে হয়। আমি যেমন আগুনের ওপর হেঁটে ভয় দূর করতে চেয়েছি। নিউজিল্যান্ডে বাঙ্গি জাম্পও ট্রেনারই করতে বলেছিলেন। ফিটনেস আর দক্ষতা বাড়ানোর সঙ্গে মাইন্ড ট্রেনিংও সঠিক প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকার একটা অংশ।

শ্রীলঙ্কা সিরিজটা তাসকিনের জন্য নিজেকে ফিরে পাওয়া
ছবি: এএফপি
প্রশ্ন:

প্রশ্ন: জীবনযাপনের ধরন কীভাবে বদলালেন?

তাসকিন: এটা একজন ফাস্ট বোলারের জন্য অনেক বড় বিষয়। সুশৃঙ্খল জীবনযাপন না করলে চোটে পড়তে হবেই। চোট থেকে সেরে ওঠাও কঠিন হয়ে যায়। বাজে চিন্তা ও বাজে খাবারের অভ্যাস বাদ দেওয়া এবং সিরিয়াস থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: নতুন পেসারদের মধ্যে কি তরুণ তাসকিনকে দেখতে পান?

তাসকিন: ক্যারিয়ারের শুরুতে ভালো খেলার পর নাম, খ্যাতি, জনপ্রিয়তা, বিজ্ঞাপনী চুক্তি—সবই খুব সহজে আসছিল। তখন মনেই হয়নি যে কখনো আমার খারাপ সময় আসতে পারে। মনে হচ্ছিল সবকিছু এমনিতেই হয়ে যাবে। হাসান, শরিফুলরা এই চিন্তাগুলো এখনই ঠিক করে নিলে ভালো হবে। ওই সময় সিনিয়ররা কিন্তু আমাকে বলেছেন, ‘সিরিয়াস হও। লাইফ স্টাইল ভালো থাকলে খারাপ সময় এলেও দ্রুত ফিরতে পারবি।’ তাঁরা ভালো কথা বললেও আমার মাথায় কিছু আসেনি। সুজন স্যার (খালেদ মাহমুদ) প্রায়ই বোঝানোর চেষ্টা করতেন। পরে যখন সব নাগালের বাইরে চলে গেল, তখন মনে হলো আমি যেন সবই হারিয়ে ফেলছি।

শ্রীলঙ্কা সফরের লক্ষ্যই ছিল তাঁর নিজেকে ফিরে পাওয়া।
ছবি: শামসুল হক
প্রশ্ন:

প্রশ্ন: নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় খুব ভালো বোলিং করেছেন। নিয়মিত ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারে বল করেছেন। ক্যাচ না ফেললে যা উইকেট পেয়েছেন তার চেয়েও বেশি পেতে পারতেন। এ নিয়ে আফসোস আছে?

তাসকিন: যা করেছি ভালোই করেছি। ক্যাচ ফেলা নিয়ে আমি কখনো প্রতিক্রিয়া দেখাই না। এটা হতেই পারে। আর আমার লক্ষ্য অনেক বড়। আমার বলের ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে হবে। আরও নিখুঁত হতে হবে। আরও ধারাবাহিক হতে হবে। আমাকে আরও ফিট হতে হবে। ফিল্ডিং, ব্যাটিংয়ে ভালো করতে হবে। ব্যাটিংয়ে ভালো টেলএন্ডার হওয়ার সম্ভাবনা আছে আমার। এসব নিয়ে কাজ করতে চাই।

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: বোলিং কোচ ওটিস গিবসন কেমন সাহায্য করেছেন?

তাসকিন: ওটিসের সঙ্গে রানআপ আর কবজির অবস্থান নিয়ে কাজ করছি। রানআপ ঠিক থাকলে নিয়ন্ত্রণ ভালো থাকে। কবজির অবস্থান ভালো থাকলে সিমের অবস্থান ভালো থাকে। ‘নো’ বল নিয়ে কাজ করেছি। মাঝে অনুশীলনে অনেক বড় বড় ‘নো’ বল করতাম। এখন কমে এসেছে। এই শ্রীলঙ্কা সিরিজে একটা নো বলও করিনি।

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ সামনে। বিশেষ কিছু করতে চাইবেন?

তাসকিন: তেমন কিছু না। আগের সিরিজ থেকে ২-১ পারসেন্ট উন্নতি করতে চাইব।