সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেব কোথা

গাজী আশরাফ হোসেনফাইল ছবি

বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচটাই আমাদের জন্য যে প্রায় বাঁচা-মরার হয়ে উঠবে, টুর্নামেন্টের আগে বাংলাদেশ দল নিশ্চয়ই সেটা ভাবেনি। বিশ্বকাপের মতো দীর্ঘ টুর্নামেন্টের একপর্যায়ে গিয়ে চোট, ফর্মহীনতার কারণে যে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়, এখন দেখছি দ্বিতীয় ম্যাচেই সেটার মুখোমুখি বাংলাদেশ! ব্যাপারটা যেন ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেব কোথা’র মতো হয়ে গেল।

প্রথম সমস্যা দুজন ওপেনার ঠিক করা নিয়ে। তামিম ইকবালের পর সেরা তিনজনকেই দলে নেওয়া হলেও ফর্মের কারণে তিনজনই বাদ পড়ার মতো অবস্থায়। লিটন দাসও এখন এ পর্যায়ে চলে এসেছে। মোহাম্মদ নাঈম ফর্মের কারণে বাদ পড়ল, সৌম্য সরকার প্রস্তুতি ম্যাচে একটু ভালো খেলে দলে এল। তবে আপাতত তিনজনের কারোরই অবস্থা সুবিধার নয়। বিকল্প নেই বলে শরীরী ভাষা, অ্যাপ্রোচ, নেটে কেমন করছে, সেসব দেখেই দুজন বেছে নিতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে লিটনকে বাদ দিয়ে নাঈমের সঙ্গে সৌম্যকে বিবেচনা করা যায়। আমি ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশনের নীতিতে কখনোই বিশ্বাস করি না, যার ওপর আস্থা বেশি, তাকেই খেলানো উচিত।

মুশফিকের মানসিকভাবে বিশ্রাম দরকার বলে মনে হচ্ছে। বাজে সময় যেতেই পারে। এ ধরনের টুর্নামেন্টে একেক দিন একেক দলের সঙ্গে খেলতে হয়। নতুন নতুন প্রতিপক্ষ থাকে বলে কৌশল ভিন্ন হয়। চাপটাও অন্য রকম। সাহস করে মুশফিককে বলতে হবে, ‘তোমার বিরতি নেওয়া উচিত।’ চার নম্বরে আমি নতুন কাউকে দেখতে চাই। আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান বিকল্প হতে পারে, তবে আমার ব্যক্তিগত পছন্দ আফিফ। যদি কোনো কারণে পাওয়ার প্লেতে নামতে হয়, তাহলে সে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে পারবে। তবে মুশফিকের ক্ষেত্রে সবাই জানে, সে ফর্মে নেই, ঝুঁকি নেবে না। প্রতিপক্ষ তখন এগিয়ে থাকবে।

তবে সাকিব ফিরে আসবে বলে আমার বিশ্বাস। আইপিএলে শুরুতে সুযোগ না পেলেও শেষের দিকে খেলেছে। যে সুযোগ-সুবিধার মধ্যে অনুশীলন করে সে নিজেকে প্রস্তুত করেছে ম্যাচের জন্য, সেটাই যথেষ্ট। বাংলাদেশের জন্য সাকিবের ফর্মে ফেরাটা জরুরি। আমার বিশ্বাস, এ ক্ষেত্রে পেশাদারির পরিচয় দেবে সে। বিশ্বকাপে ভালো করতে হলে আইপিএল খেলা দরকার—এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েই সে শ্রীলঙ্কা সফর থেকে নাম প্রত্যাহার করেছিল। আশা করি সাকিব সেটা ভুলে যায়নি।

বাংলাদেশ দলের বোলিং আক্রমণটা কীভাবে সাজানো উচিত, সেটাও একটা প্রশ্ন। ওমান ‘এ’ দলের বিপক্ষে ম্যাচটি বাদ দিলে প্রস্তুতি ম্যাচসহ তিন ম্যাচেই বোলাররা একটা সময় প্রতিপক্ষকে চেপে ধরেও পরে তা বজায় রাখতে পারেনি। শেষের দিকে আমাদের বোলারদের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা, এমনকি ম্যাচের পরিস্থিতি তাদের পক্ষে না থাকলেও। কাজেই আজ তিন পেসার না খেলিয়ে নাসুম আহমেদের মতো একজন স্পিনার খেলানো হবে কি না, সেটা প্রশ্ন। আবার মুশফিকের জায়গায় বাড়তি ব্যাটসম্যান না খেলিয়েও নাসুমকে খেলানো যায়। ওমানের খেলোয়াড়দের তালিকায় যা দেখলাম, বেশির ভাগই ভারত-পাকিস্তান থেকে আসা। তারা মূলত ‘বটম হ্যান্ডেড’ ব্যাটসম্যান। সে হিসেবে নাসুমকে নতুন বলে ব্যবহার করার সুযোগটা আমরা নিতে পারি। তার আগে স্কটল্যান্ডের সঙ্গে হারটা ভুলে যেতে হবে। ওমান প্রথম ম্যাচে বড় ব্যবধানে জিতেছে। রান রেটের হিসাব ঠিক রাখতে তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের ব্যবধানটাও বড় করা দরকার।

আর একটা ব্যাপার, আমার মনে হয় অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে দলের নেতৃত্বে সাকিবের সম্পৃক্ততা বাড়ানো উচিত, যাতে মাহমুদউল্লাহ খাপছাড়া না থাকে, কোচের গৎবাঁধা কথা না শোনে। মাহমুদউল্লাহর মাথায় রাখতে হবে, মাঠে সে-ই ‘বস’। ছকবাঁধা পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হবে। একই সঙ্গে ব্যাটসম্যানদের উইকেট বোঝাটা জরুরি। একাদশে পরিবর্তনও জরুরি। যাদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি আছে, তাদের জায়গায় নতুন কাউকে আনা উচিত।