সাইমন্ডসের শেষ বার্তায়ও হাসি ছিল, আশা ছিল

না ফেরার দেশে চলে গেছেন সাইমন্ডসছবি: এএফপি

মৃত্যুর খবরগুলোই হয়তো বারবার মনে করিয়ে দেয়, জীবন কত ঠুনকো! অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের হঠাৎ চলে যাওয়ার খবরে যা আরেকবার মনে হতে বাধ্য।

নর্থ কুইন্সল্যান্ডে কাল স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় অস্ট্রেলিয়ান সাবেক অলরাউন্ডারের। মাত্র ৪৬ বছর বয়সে চলে গেলেন না ফেরার দেশে! অথচ মৃত্যুর আগে তাঁর সর্বশেষ খুদে বার্তায়ও স্বভাবসুলভ হাসিখুশিই ছিলেন সাইমন্ডস, কত আশাও ছিল তাঁর সেই খুদে বার্তায়।

ইংলিশ দৈনিক ডেইলি মেইল জানাচ্ছে, মৃত্যুর ঘণ্টা দুয়েক আগে অস্ট্রেলিয়ার টিভি চ্যানেল ফক্স স্পোর্টসে তাঁর বসকে খুদে বার্তাটা পাঠিয়েছিলেন সাইমন্ডস। তখন কে জানত, যমদূত অপেক্ষায়!

যখন খেলতেন অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে
ছবি: এএফপি

সাধারণ রীতিতে সব সময়ই বীতশ্রদ্ধ সাইমন্ডসের স্বচ্ছ হৃদয় আর হাসিখুশি জীবনের কথা তো সবারই জানা। মৃত্যুর আগে তাঁর শেষ খুদে বার্তায়ও সেটিরই ছাপ। ডেইলি মেইল জানাচ্ছে, স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে ফক্স স্পোর্টসে যাঁর অধীনে তিনি কাজ করতেন, সেই স্টিভ ক্রলিকে একটা খুদে বার্তা পাঠিয়েছেন খেলা ছাড়ার পর ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করা সাইমন্ডস। যদিও ফক্স স্পোর্টসের সঙ্গে তাঁর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল।

কী নিয়ে খুদে বার্তা? আমেরিকান ফুটবল খেলাটার কিংবদন্তি টম ব্র্যাডিকে নিয়ে একটা খবরের চুম্বক অংশ ছিল সেখানে। ফক্স স্পোর্টসের যুক্তরাষ্ট্রের শাখায় ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করার জন্য আগামী ১০ বছরে ৫৪ কোটি ডলার পাবেন ব্র্যাডি—এ খবরটার কিছু অংশ তুলে ধরে ক্রলিকে সাইমন্ডস মেসেজ পাঠান, ‘ক্রলস, তোমার সঙ্গে কথা আছে, রয়।’ প্রসঙ্গত, সাইমন্ডসের ডাকনাম রয়।

কৌতুকটা পরিষ্কার, ব্র্যাডি সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে আমেরিকান ফুটবলে ধারাভাষ্যের বদলে এত টাকা পাবেন, সাইমন্ডসও তো ক্রিকেটের সাবেক খেলোয়াড়, ফক্স স্পোর্টসেই ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করেছেন!

সাইমন্ডসের জন্য শ্রদ্ধাঞ্জলি
ছবি: এএফপি

সাইমন্ডসের চরিত্রের আবেগপ্রবণ দিকটা তুলে ধরেছেন ক্রলিও। ফক্স স্পোর্টসে সাইমন্ডসের ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ শুরু করার সময়ের গল্প জানাতে গিয়ে ক্রলি বলছিলেন, ‘খেলোয়াড়ি জীবনের শেষ দিকে ও যখন একটু-আধটু ধারাভাষ্য দিচ্ছে, আমাকে বলেছিল, ও আমাদের হয়ে ধারাভাষ্য দেবে, যদি সে ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় আমাদের বাচ্চারা ওর সঙ্গে বসে থাকে। সেটা ও নিজের জন্য করেনি, ওদের দিনটাকে রাঙিয়ে দিয়েছিল।’

তাঁর মৃত্যুর খবরের পর সাবেক সতীর্থ, বন্ধু সবার মুখেই তো সাইমন্ডসের স্মৃতিচারণা চলছে, এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার নাথান লায়ন জানালেন আরেকটি হৃদয় ভেঙে দেওয়া স্মৃতি। ২০১১ সালে লায়নের টেস্ট অভিষেকের আরও আগেই সাইমন্ডসের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবু ওয়ার্ন ও সাইমন্ডসের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক লায়নের।

গত মাসে কিংবদন্তি অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নের মৃত্যুর পর তাঁর স্মরণসভায় গিয়েছিলেন সাইমন্ডস ও লায়ন। সেখানে লায়নকে সাইমন্ডস বলছিলেন, অনেক তাড়াতাড়িই চলে গেলেন ওয়ার্ন। সেই সাইমন্ডসেরই মাত্র ৪৬ বছর বয়সে অন্যলোকে চলে যাওয়া বুক ভেঙে দিচ্ছে লায়নের।

ইনস্টাগ্রামে লায়ন লিখেছেন, ‘ঘুম ভেঙেই এমন খবরে বুকটা ভেঙে গেছে। এই তো দুই মাস আগে ওয়ার্নির স্মরণসভায় রয় আর আমি কথা বলছিলাম। দুজনই বলছিলাম, (ওয়ার্ন) কত তাড়াতাড়িই না আমাদের ছেড়ে চলে গেল। আর এখন...! শান্তিতে থেকো, বন্ধু। আমাদের প্রিয় খেলাটার একজন কিংবদন্তি তুমি, অনেকের অনুপ্রেরণা। ওর পরিবার, সন্তান, বন্ধুদের সমবেদনা জানাই।’