সাকিব একা এবং কয়েকজন

সাকিব লড়েছেন একাই । ছবি: প্রথম আলো
সাকিব লড়েছেন একাই । ছবি: প্রথম আলো
>আগের দিন ব্যাটিং অনুশীলন করতে গিয়ে ব্যথা পেয়েছিলেন পায়ের আঙুলে। অবশ্য এই চোট সামলেই সাকিব আজ খেলতে নেমেছেন। ব্যাটিং বিপর্যয়ে অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন। কিন্তু তাঁকে সমর্থন দিতে পারেননি সতীর্থরা। বাংলাদেশের স্কোরটাও তাই বড় হয়নি।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাসের নামটা আজ ভীষণ কাজে লেগে যাচ্ছে। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের ইনিংস দেখে যদি কোনো লেখা লিখতে হয়, সেটির নাম হবে এটাই, ‘একা এবং কয়েকজন’!
সকাল থেকে সিলেটের আকাশ মেঘলা। সাকিব যখন টস করে গেলেন কার্লোস ব্রাফেটের সঙ্গে, তার একটু পরই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। কিন্তু সেই বৃষ্টি আর অঝোরে ঝরেনি। ম্যাচটা হবে কি না, এমন সংশয় তাই কেটে গেল মুহূর্তেই। ম্যাচ নিয়ে সংশয় দূর হওয়ার আগেই কেটেছে সাকিবের খেলা না–খেলা নিয়ে শঙ্কা। কাল ব্যাটিং অনুশীলনে পায়ের আঙুলে পেয়েছেন চোট। কাল সন্ধ্যায় টিম হোটেলে গিয়ে জানা গেল, আঙুলের আগায় রক্ত জমেছে। একটু ব্যথাও আছে। তবে এ ‘সামান্য’ ব্যথাট্যথা তাঁকে খেলা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
সংশয়ের মেঘ সরিয়ে সাকিব নামলেন। যেহেতু দিনের আলোয় খেলায় শিশির-তত্ত্ব নেই, উইকেটটাও ভালো। আগে ব্যাটিং করলে বড় স্কোর গড়তে হবে। স্কোয়াড সেভাবেই সাজিয়েছেন, আবু হায়দার ও মোস্তাফিজুর রহমান বাদে বাকি সবারই ঝড় তোলার সামর্থ্য আছে। সাকিবের টস–ভাগ্য যে ভীষণ ভালো, আজও সেটির প্রমাণ মিলল। টস জিতে নিলেন ব্যাটিং।
যে আশায় অধিনায়ক আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগ করে দিলেন সতীর্থ ব্যাটসম্যানদের, তাঁরা বেশির ভাগই যোগ দিলেন আত্মহননের মিছিলে। শেলডন কটরেল আর ওশান টমাস দ্রুত বুঝে গেলেন, আজ আবার বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পুরোনো রোগে পেয়ে বসেছে। শর্ট বল মারলেই ধরাশায়ী—সেই সূত্র মেনে তামিম ইকবাল, লিটন দাস ও সৌম্য সরকারকে ফিরিয়ে দিলেন দুই ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলার। ঘণ্টায় ধারাবাহিক ১৪০ কিলোমিটার কিংবা তারও বেশি গতিতে কটরেল ও টমাস যখন আগুন ঝরাচ্ছিলেন, সেটির জবাব একমাত্র সাকিবই দিতে পারলেন। বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক শেষ পর্যন্ত কটরেলের শর্ট বলেই আউট হয়েছেন। তবুও নিজের কাজটা তো করে গেছেন।
তিনি আক্রমণাত্মক খেলতে পছন্দ করেন, ঝুঁকি নিতে ভালোবাসেন। আজও সাকিব নিজের সহজাত খেলা থেকে বের হননি। ব্যাটিং বিপর্যয়ে করে গেছেন ইতিবাচক ব্যাটিং। ফিফটিও করেছেন ছক্কা মেরে। কিন্তু আশা করেছিলেন, এক-দুইটা ভালো সঙ্গী অন্তত পাবেন, যাঁদের নিয়ে মোটামুটি এক-দুটি জুটি গড়তে পারলেই লড়াইয়ের পুঁজি পাওয়া যাবে। কিন্তু সাকিবের চাওয়াটা বুঝলে তো! মাহমুদউল্লাহ-আরিফুল হক একটু সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু পর্যাপ্ত নয়। সাকিব-মাহমুদউল্লাহর জুটি ২৫ আর সাকিব-আরিফুলের ৩০ রানের জুটিই আজ বাংলাদেশের হতদরিদ্র স্কোরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক।
সাকিব তাঁর অধিনায়কত্বের দর্শন নিয়ে একবার বলেছিলেন, ‘সতীর্থদের উজ্জীবিত করার মন্ত্র হচ্ছে আমার পারফরম্যান্স। আমি যদি ভালো খেলতে পারি, সতীর্থরা সেটি দেখে অনুপ্রাণিত হবে।’ আজ তাঁরা অনুপ্রাণিত হতে পারলেন কোথায়? সাকিব একদিকে মেরে খেলছেন, তাঁকেই মঞ্চটা ছেড়ে দিন। তা না করে বাকিরাও মারতে গেলেন। সাকিব উইকেটে থাকতে থাকতেই দেখলেন ৫ ব্যাটসম্যানদের আসা আর যাওয়া।
বাকিরা মেরে খেলেও যদি মারার মতো মারতে পারতেন! ৬১ রানের ইনিংসে সাকিব একাই চার মারলেন ৮টি, ছক্কা দুটি; বাকিরা সবাই মিলে ছক্কা তো মারতে পারেননি, চারের সংখ্যা সাকিবের সমানও নয়, ৭টি। দলের প্রায় ৪৮ শতাংশ রানের জোগানদাতা সাকিব! তিনি একাই আজ যা একটু খেলেছেন। বাকিদের নাম মনে পড়ছে না। মনে পড়ছে সাকিবের সঙ্গে আজ আরও ১০ জন খেলতে নেমেছিলেন। আজকের ম্যাচ একা এবং কয়েকজনেরই