সাকিবকে নিয়ে নেহরার ‘জ্যোতিষবিদ্যা’ খাটল না

সাকিবের দাম যতটা উঠবে ভাবা হয়েছিল, ততটা ওঠেনি।ফাইল ছবি

প্রীতি জিনতার পাঞ্জাব কিংস অনেক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শাহরুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্সই (কেকেআর) শেষ পর্যন্ত বাজিতে জিতে গেল। ফিরে পেল সাকিব আল হাসানকে। আইপিএলের নিলামে আজ ৩ কোটি ২০ লাখ রুপিতে বাঁহাতি বাংলাদেশি অলরাউন্ডারকে কিনে নিয়েছে কেকেআর।

সাকিবের ভিত্তিমূল্য ছিল দুই কোটি রুপি। সেখান থেকে মাত্র ১ কোটি ২০ লাখ রুপিই বেশি হলো। সেটির ব্যাখ্যাও আছে। তবে ব্যাখ্যা যা-ই হোক, আপাতত এটা নিশ্চিত হয়ে গেল, ভারতের সাবেক বাঁহাতি পেসার আশিস নেহরার ভবিষ্যদ্বাণী ঠিক হলো না। ছোট পরিসরে হওয়া আইপিএলের এবারের নিলামে সাকিবই সবচেয়ে বেশি দামি খেলোয়াড় হতে পারেন বলে নিজের অনুমানের কথা জানিয়েছিলেন নেহরা।

সাকিবের যে আর সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হওয়ার সম্ভাবনা নেই, সেটা পাঞ্জাব ও অন্য দলগুলোর হাল ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিশ্চিত হয়ে গেছে। একটু আগেই সাকিবের সমান ২ কোটি রুপি ভিত্তিমূল্য থেকেই অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ১৪ কোটি ২৫ লাখ রুপি দাম দিয়ে কিনেছে বিরাট কোহলির দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। সে জায়গায় সাকিবের দাম তো বলতে গেলে ওঠেইনি!

সাকিবের জন্য প্রথম বিডের জন্যই অপেক্ষা করতে হয়েছে অনেকক্ষণ। হয়তো নিলামের কৌশল এটি, নিজে দর হাঁকার আগে অন্যদের দেখে নিতে চাওয়া আরকি। কিন্তু ভিত্তিমূল্যে সাকিবকে কেনার জন্য প্রথমে বিড করে কলকাতা। সেখান থেকে লড়াই জমে ওঠে। কলকাতা দর হাঁকানোর পরপরই বলিউড অভিনেত্রী প্রীতি জিনতার দল পাঞ্জাব কিংস (আগের কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব) দর হাঁকে ২ কোটি ২০ লাখ রুপি। কলকাতা আবার দর হাঁকে ২ কোটি ৪০ লাখ।

নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পর মাঠে যতক্ষণ ছিলেন, আলো ছড়িয়েছেন সাকিব।
ফাইল ছবি

এরপর অবশ্য কিছু মুহূর্তের নীরবতা। সেটিও হয়তো নিলামেরই কৌশল। নিজের ইচ্ছার কথা প্রতিপক্ষকে বুঝতে না দেওয়া। অন্য কোনো দল সাকিবকে নিতে আগ্রহ দেখায়নি, পাঞ্জাব আর কলকাতাও তখন চুপ। সাকিব ২ কোটি ৪০ লাখেই কলকাতায় চলে যাবেন, এমনটা যখন ধরে নেওয়ার সময় চলে এসেছে, ঠিক তখনই নড়েচড়ে বসে পাঞ্জাব। দর হাঁকে ২ কোটি ৬০ লাখ।

কিন্তু কলকাতা ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। তখন কিছুক্ষণ দুই পক্ষের বিডিং-যুদ্ধে দাম বাড়তে থাকে। এক ধাক্কায় উঠে যায় ৩ কোটি ২০ লাখ। এরপর অবশ্য আর কেউ দাম না হাঁকানোয় সেই দামেই সাকিবকে পেয়ে যায় কলকাতা।

কেন ওঠেনি, সেটির একটা ব্যাখ্যা অবশ্য দিয়েছেন ভারতের ধারাভাষ্যকার ও ক্রিকেট বিশ্লেষক হার্শা ভোগলে। সাকিবকে কলকাতা কিনে নেওয়ার পরই ভোগলে টুইট করেন, ‘সাকিব আল হাসানের জন্য ৩.২ কোটি, কলকাতার জন্য দারুণ সংযুক্তি। টুর্নামেন্টের পুরোটা সময় তিনি থাকবেন কি না, এটা নিয়ে অনিশ্চয়তা না থাকলে আরও বেশি মূল্য হতো তাঁর।’

কিন্তু তাতেই নিশ্চিত হয়ে যায়, ‘জ্যোতিষী’ হিসেবে ব্যর্থ হচ্ছেন নেহরা। ভারতীয় চ্যানেল স্টার স্পোর্টসের অনুষ্ঠান ক্রিকেট কানেক্টেডে নেহরা বলেছিলেন, ‘আরেকটা আইপিএলের নিলাম অনুষ্ঠান আসছে। অনেক বড় নাম আছে নিলামে। কিন্তু আমার চোখে এবারের আইপিএলে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় যিনি হতে পারেন, তিনি হচ্ছেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।’ কেন এমন মনে হয়েছে, সেটির ব্যাখ্যাও দিয়েছেন নেহরা, ‘যেকোনো টি-টোয়েন্টিতে আইপিএলের যেকোনো দলে একটা ভারসাম্য এনে দিতে পারে সে।’

বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খানের মালিকানাধীন দলের জন্য সাকিবকে এত কম দামে পাওয়া বেশ বড় সুখবরই। যদিও কলকাতায় সাকিব খেলার সুযোগ কেমন পাবেন, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই। অধিনায়ক এউইন মরগান, দুই ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্স ও লকি ফার্গুসন আর দুই ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল ও সুনীল নারাইন...সাকিবকে নেওয়ার আগেই কলকাতার বিদেশি খেলোয়াড়ের তালিকা লম্বাই ছিল।

২০১১ সালে আইপিএল ক্যারিয়ার শুরুর পর এখন পর্যন্ত ৬৩ ম্যাচে ২১.৩১ গড়ে ৭৪৬ রান করেছেন সাকিব। সর্বোচ্চ ইনিংস অপরাজিত ৬৬ রানের। আর বল হাতে ২৮ গড়ে ৫৯ উইকেট নিয়েছেন। ২০১৮ সালে কেকেআর তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার পর সানরাইজার্স হায়দরাবাদ কিনে নিয়েছিল সাকিবকে। যদিও নিষেধাজ্ঞার কারণে গত বছরের আইপিএলে খেলা হয়নি বাঁহাতি অলরাউন্ডারের।