সাকিবদের খেলা দেখে ‘বিরক্ত’ লাগছে শেবাগের

ছয় ম্যাচ খেলে মাত্র দুটিতে জিতেছে কলকাতা।ছবি : আইপিএল ওয়েবসাইট

চার ম্যাচ হারের পর এক ম্যাচে জয়। এরপর আবারও হারের বৃত্তে। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হার যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সাকিব আল হাসানদের ফ্র্যাঞ্চাইজির দুরবস্থা। ম্যাচ হারছে তো বটেই, তাদের খেলার ধরন দেখেও মনে হচ্ছে না জেতার কোনো তাগিদ আছে। আর এটাই বিরক্ত করছে সাবেক কিংবদন্তি ওপেনার বীরেন্দর শেবাগকে। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, কলকাতার খেলা দেখতে তাঁর ভালো লাগে না।

কলকাতার ব্যাটিং অর্ডারের কোনো আগামাথা খুঁজে পান না শেবাগ। নিতীশ রানা-শুভমান গিলের জুটি কলকাতাকে প্রত্যাশিত সাফল্য এনে দিতে পারবে না বলেও মনে করেন তিনি, ‘কলকাতা নাইট রাইডার্সের ব্যাটিং অর্ডার দেখে আমি খুশি নই, কারণ নীতিশ রানা এখনো ওপেন করতে নামছে। ইনিংসের শুরুটা যেমন হওয়া উচিত তারা সেটা করতে পারছে না। শুভমান গিলেরও ফর্ম নেই। সেদিন দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে ৪০ করল, কিন্তু সেই রান করতে গিয়ে এন্তার বল খরচ করল।’

শুভমান গিলের ফর্ম নেই।
ছবি : আইপিএল ওয়েবসাইট

শেবাগ মনে করেন, গিলের পাশে ওপেনার হিসেবে এমন একজনের থাকা উচিত, যিনি খুনে মেজাজে ব্যাটিং করতে পারেন, ‘সেটাও সমস্যা হয় না, যদি সে এমন একজনের সঙ্গে ওপেন করতে নামে, যে রানের চাকা সচল রাখে। এমন কাউকে যদি কলকাতা ওপেনার হিসেবে পায়, যে রানরেট ধীরে ধীরে বাড়াতে পারে, তাহলে সেটা কলকাতার জন্যই মঙ্গল।’

প্রথম ম্যাচের পর থেকে প্রতি ম্যাচেই ইনিংসের কোনো না পর্যায়ে ধস নেমেছে কলকাতা ইনিংসে।
ছবি : আইপিএল ওয়েবসাইট

এবারের আইপিএলের অর্ধেক মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। প্রথম ছয় ম্যাচে কলকাতাকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে ব্যাটিং। প্রথম ম্যাচের পর থেকে প্রতি ম্যাচেই ইনিংসের কোনো না পর্যায়ে ধস নেমেছে কলকাতা ইনিংসে। আর প্রায় প্রতি ম্যাচেই ধীরগতিতে শুরু করেছে দল। এরই মূল্য চুকিয়েছে একের এক পর ম্যাচ হেরে। ম্যাচের পর ম্যাচ হারের পরেও কলকাতা তাদের ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আনছে না, এটাই আরও বিরক্ত করছে শেবাগকে, ‘তারা তাদের ব্যাটিং অর্ডারে একটুও পরিবর্তন আনছে না, এ ব্যাপারটা হজম হয় না। আমি যখন আমার মোবাইল, ল্যাপটপ বা কোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সিনেমা দেখি, সিনেমার যে অংশটা আমার কাছে বিরক্ত লাগে, সে অংশটা এড়িয়ে সামনে এগিয়ে যাই। এই টুর্নামেন্টে কলকাতা নাইট রাইডার্সের খেলা দেখেও আমার ওরকমই বিরক্ত লাগছে। খেলা দেখার সময় আমি যথাসম্ভব এড়িয়ে যাই, কারণ ওরা খেলা দেখার বিষয়টা বিরক্তিকর করে তুলেছে।’

ভারতের সাবেক ওপেনার বীরেন্দর শেবাগ
ফাইল ছবি

কিছুদিন আগেও গিল-রানার ব্যাটিং নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন শেবাগ। সঙ্গে টোটকা দিয়েছিলেন, কাকে কাকে দিয়ে কলকাতার ব্যাটিং অর্ডার সাজানো উচিত, ‘আমার কাছে গিলকে এমন একজন ওপেনার মনে হয়, যে ওয়ানডে আর টেস্টের জন্য কার্যকর। টি-টোয়েন্টিতে আপনার এমন একজন ওপেনার দরকার, যে ইচ্ছেমতো চার-ছয় পেটাতে পারে। তার সঙ্গী হিসেবে এমন একজনকে দরকার, যে এক প্রান্ত আগলে রাখতে পারে। এ জন্য আমি গিলকে ইনিংস ধরে রাখার ভূমিকায় দেখতে চাইছি। ওর সঙ্গে এমন একজনকে নামানো উচিত, যে পাওয়ার প্লেতে চার-ছয় মেরে রান তুলতে পারে। সুনীল নারাইন কিংবা রাহুল ত্রিপাঠির মতো কেউ পালন করতে পারে সেই ভূমিকা। আর নিতীশ রানা নেমে গেল চারে।’

ভুল থেকে শিক্ষা নিচ্ছেন না সাকিবরা, এমনটাই মত শেবাগের, ‘একই ভুল তারা বারবার করে চলেছে। রান তোলার সময়ে একই ভুল, রান তাড়া করার সময়েও একই ভুল। আমার মনে হয় কলকাতার ম্যানেজমেন্ট সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। ওদের কপাল ভালো পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে মরগান রান করতে পেরেছিল না হয় সে ম্যাচেও তারা হারত।’

সাকিব আল হাসান।
ফাইল ছবি

শেবাগের মতো কলকাতার কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামও যে চিন্তায়, সেটা বোঝা গেছে দিল্লির বিপক্ষে ম্যাচটার পরেই। সাবেক এই কিউই অধিনায়ক পরিবর্তন আনতে চেয়েছেন কলকাতার টপ অর্ডারে। দ্রুত রান তুলতে পারেন এমন ব্যাটসম্যানদেরই খেলাতে চান ম্যাককালাম, ‘ধীরগতির উইকেটে নতুন বল ও ফিল্ডিংয়ের বাধ্যবাধকতার নিয়ম কাজে লাগাতে হয়। আমাদের একটা জিনিস মাথায় গেঁথে নিতে হবে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পুরোনো সেই মানসিকতা ঝেড়ে ফেলতে হবে যে একটা বাউন্ডারির পরের বলে একটা সিঙ্গেল নিতে হবে। যদি একটি বাউন্ডারি পান, তবে আরেকটা মারার কথা ভাবতে হবে এবং এরপর আরেকটা। যদি সেটা করতে পারেন, তাহলেই প্রতিপক্ষ বোলার অনেক চাপে পড়বে এবং তখন সাধারণত যা হয়, তারা পরিকল্পনা আর কাজে লাগাতে পারে না। এটা খুবই হতাশাজনক; কারণ, বারবার বলেছি আমাদের আরও আক্রমণাত্মক হতে হবে এবং আরও বেশি আগ্রাসী হতে হবে, খেলাটাকে ধরতে হবে। কিন্তু আমরা সেটা করছিই না। তার মানে আমাদের কিছু বদল আনতেই হচ্ছে।’

রাসেলের ওপর প্রতি ম্যাচেই চাপ পড়ছে।
ছবি : আইপিএল ওয়েবসাইট

ছয় ম্যাচ খেলে মাত্র দুটিতে জিতেছে কলকাতা। আগামী সোমবার বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে খেলতে নামবেন সাকিবরা। বাকি ম্যাচগুলোয় ঘুরে না দাঁড়াতে পারলে প্লে-অফের আশা করে লাভ নেই। সে ঘুরে দাঁড়ানোর শুরুটা কি কোহলিদের বিপক্ষে ম্যাচটা দিয়েই হবে?