সাকিবদের দর্শক বানিয়ে বল হারানোর খেলা খেললেন ভি ভিলিয়ার্স-ম্যাক্সওয়েল

অবিশ্বাস্য আরেকটি ইনিংসের জন্ম দিলেন ডি ভিলিয়ার্স।ছবি: আইপিএল

সাকিব আল হাসান বোলিংয়ে আসার আগে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু কাঁপছিল বললে অত্যুক্তি হয় না। দ্বিতীয় ওভারে দুই উইকেট হারানো দলটি তখন আসলেই ধুঁকছিল। প্রথম তিন ওভারে বিরাট কোহলি ও রজত পাতিদারকে হারিয়ে মাত্র ১২ রান তুলেছিল বেঙ্গালুরু। সাকিবের প্রথম বলেই চার খেলেন। লাগাম ছাড়ার ইঙ্গিত দেওয়া সে ওভারে এসেছে আরও ৩ রান।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আবার এলেন সাকিব। এবার আর পার পেলেন না। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল প্রথম বলেই মারলেন ছক্কা। ওই ওভারে ম্যাক্সওয়েল ও দেবদূত পাড়িক্কাল আরও দুটি চার বের করে নিলেন। নিজের দ্বিতীয় ওভারে ১৭ রান দিয়ে ফিরলেন সাকিব।

বেঙ্গালুরুর রান আটকানোর চেষ্টার সমাপ্তি সে ওভারেই হলো। ম্যাক্সওয়েলরাও যত সময় গেছে, তত দাপট দেখিয়েছেন। ম্যাক্সওয়েল ও ডি ভিলিয়ার্সের ঝড়ের সামনে পড়ে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলিং লাইনআপ উড়ে গেছে আজ। দুজন মিলে ১৮টি চার ও ৬ ছক্কা মেরেছেন ভাগাভাগি করে। ৪ উইকেটে ২০৪ রান তুলেছে বেঙ্গালুরু।

ঝড়ের শুরুটা করেছেন ম্যাক্সওয়েল।
ছবি: আইপিএল

গত আইপিএলটা ভয়ংকর কেটেছে ম্যাক্সওয়েলের। ১৩ ম্যাচে ১১ ইনিংসে নামতে পেরেছিলেন। ইনিংসপ্রতি ১০ রানও তোলা হয়নি তাঁর। ১০৮ রান করতে পেরেছিলেন, সেটাও ১০১.৮৮ স্ট্রাইকরেটে। পুরো টুর্নামেন্টে একটা ছক্কাও মারতে পারেননি। তবু এবারের আইপিএলে সোয়া ১৪ কোটি রুপিতে তাঁকে টেনে নিয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। গত কয়েকটি আইপিএলের মতো এবারও ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে ভুল করছে তাঁর ফ্র্যাঞ্চাইজি, এমন আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। এবার তাই পণ করেই নেমেছেন অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার। আগের দুই ম্যাচে প্রায় দেড় শ স্ট্রাইকরেটে রান তুলেছেন। ২ ম্যাচে করেছেন ৯৮ রান। এরপরও যাঁদের তাঁর সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ ছিল, তাঁদের কড়া জবাব দিয়ে দিলেন আজ।

ঝড়ের শুরুটা সাকিবের বলে করলেও পরে সেটা সবার বলেই বিলিয়ে দিয়েছেন। কোহলি (৫) ও পাতিদারকে (১) আউট করা বরুণ চক্রবর্তী, প্রসিধ কৃষ্ণ, হরভজন সিং কিংবা প্যাট কামিন্স—বাদ যাননি কেউ।

২২৫ স্ট্রাইকরেটে রান তুলেছেন ডি ভিলিয়ার্স।
ছবি: আইপিএল

এর মাঝে ১২তম ওভারের প্রথম বলে পাড়িক্কাল (২৮ বলে ২৫) বিদায় হয়ে কলকাতার বিপদ যেন উল্টো বাড়িয়ে দিলেন। কারণ, তখন উইকেটে নেমেছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। একদিকে ২৮ বলেই পঞ্চাশের দেখা পাওয়া ম্যাক্সওয়েল, অন্যদিকে ডি ভিলিয়ার্স। যেকোনো বোলিং লাইনআপের জন্যই দুঃস্বপ্ন।

একদিকে ডি ভিলিয়ার্সকে পেয়ে একটু শান্ত হলেন ম্যাক্সওয়েল। ওদিকে ঝড় তুললেন ডি ভিলিয়ার্স। ১৭ ওভারের শেষ বলে ম্যাক্সওয়েল আউট হয়ে গেলেও স্বস্তি ফিরে পায়নি কলকাতা। ৪৯ বলে ৭৮ রানের ইনিংস খেলে ম্যাক্সওয়েল ফিরেছেন বটে। কিন্তু অন্যদিকে যে ২০ বলে ৩৩ রান করে থিতু হয়ে গেছেন ডি ভিলিয়ার্স।

ম্যাক্সওয়েলের বিদায়ের সময় ৪ উইকেটে ১৪৮ রান ছিল বেঙ্গালুরুর। সেটা তিন ওভার শেষে ২০৪ হয়ে গেল। এই ৫৬ রানের মধ্যে ১১ রান কাইল জেমিসনের। বাকি ৪৩ রান ডি ভিলিয়ার্স নিয়েছেন ১৪ বলে! ২৬ বলে ৫০ পেরোনো ডি ভিলিয়ার্স অপরাজিত ছিলেন ৩৪ বলে ৭৬ রান করে।

পাওয়ার প্লেতে দুই ওভার করা সাকিব আর বোলিং পাননি ইনিংসের বাকিটায়। তাঁর চেয়ে বেশি খরুচে ছিলেন শুধু আর একজনই। ১৮ ও ২০তম ওভারে বল করতে আসা রাসেল পড়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্সের রণমূর্তির সামনে, ২ ওভারে দিয়েছেন ৩৮ রান।