পাঞ্জাব কিংসকে ৬ রানে হারিয়ে বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু কাল তৃতীয় দল হিসেবে আইপিএলের প্লে-অফে জায়গা নিশ্চিত করে নিয়েছে। আইপিএলে প্রতিটি দলের আর এক-দুটি করে ম্যাচ বাকি। প্লে-অফের জায়গা বাকি আর একটি। যেটির জন্য লড়ছে চার দল। শেষ পর্যন্ত কে যাবে প্লে-অফে?
১২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার তলানিতে থাকা সানরাইজার্স হায়দরাবাদ এরই মধ্যে প্লে-অফের সমীকরণ থেকে বাদ পড়েছে। দৌড়ে আছে এখন বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের দল কলকাতা নাইট রাইডার্স, মোস্তাফিজুর রহমানের দল রাজস্থান রয়্যালস, পাঞ্জাব কিংস ও সর্বশেষ দুই মৌসুমের শিরোপাজয়ী মুম্বাই ইন্ডিয়ানস।
সাকিবের দল কলকাতা কাল হায়দরাবাদের বিপক্ষে ৬ উইকেটে জিতে উঠে এসেছে পয়েন্ট তালিকার চার নম্বরে। এই মুহূর্তে পয়েন্ট তালিকার যা অবস্থা, তাতে কলকাতাই দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে। তবে মোস্তাফিজের রাজস্থানের জন্যও এখনো সবকিছু নিজেদের হাতেই আছে।
১৩ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট কলকাতার। প্লে-অফের দৌড়ে থাকা বাকি তিন দলেরই পয়েন্ট ১০ করে! চার দলেরই ১২ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ পর্ব শেষ করার সম্ভাবনা আছে। তবে চার দলের মধ্যে রান রেট ধনাত্মক শুধু কলকাতারই।
তবে রাজস্থানের জন্য সুবিধা হলো, তাদের রান রেটের দিকে তাকানোরই দরকার নেই। নিজেদের বাকি দুই ম্যাচ জিতলেই যে আর কোনো দিকে তাকাতে হবে না রাজস্থানকে! পাঞ্জাবের আবার শুধু নিজেরা জিতলেই চলবে না, অন্যদের দিকেও তাকাতে হবে।
অবশ্য শুধু কী প্লে-অফে ওঠার সমীকরণ? এরই মধ্যে প্লে-অফ নিশ্চিত করে ফেলা তিন দলের মধ্যেও তো কে ‘প্রথম কোয়ালিফায়ারে’ আর কে ‘এলিমিনেটরে’ খেলবে সেই হিসাব করতে হবে! গ্রুপ পর্ব শেষে পয়েন্ট তালিকায় প্রথম দুই দল খেলবে প্রথম কোয়ালিফায়ারে, তৃতীয় ও চতুর্থ দল এলিমিনেটরে।
প্রথম কোয়ালিফায়ারে যারা জিতবে, তারা উঠে যাবে ফাইনালে। হারলেও সুযোগ থাকবে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে জিতে ফাইনালে যাওয়ার। আর এলিমিনেটরে যারা খেলবে, তারা হারলেই বাদ পড়বে, জিতলে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে খেলবে প্রথম কোয়ালিফায়ারে হেরে আসা দলের বিপক্ষে।
আইপিএলের গ্রুপ পর্বের শেষ লড়াইয়ে নামার আগে প্রতিটি দলের ক্ষেত্রে সেই হিসাবটা দেখে নেওয়া যাক -
চেন্নাই সুপার কিংস
পরের দুই ম্যাচ—আজ খেলবে দিল্লির বিপক্ষে, ৭ অক্টোবর পাঞ্জাবের বিপক্ষে।
এই দুই ম্যাচের কোনো একটিতে জিতলেই সেরা দুই দলের একটি হয়ে কোয়ালিফায়ারে খেলা বলতে গেলে নিশ্চিত হয়ে যাবে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাইয়ের। তাদের নেট রান রেট (+) ০.৮২৯! যেখানে তিনে থাকা বেঙ্গালুরুর (-) ০.১৫৭।
চেন্নাই দুই ম্যাচের একটি জিতলে তাদের পয়েন্ট হবে ২০, বেঙ্গালুরু নিজেদের বাকি দুই ম্যাচেই জিতলে তাদেরও পয়েন্ট হবে ২০। কিন্তু রান রেটে ০.৯৮৬ ব্যবধান ঘোচানো বেঙ্গালুরুর পক্ষে অসম্ভবই হবে!
দিল্লি ক্যাপিট্যালস
পরের দুই ম্যাচ: আজ চেন্নাইয়ের বিপক্ষে, ৮ অক্টোবর বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে।
দিল্লির হিসাবটাও চেন্নাইয়ের মতোই—দুই ম্যাচের একটিতে জিতলেই সেরা দুইয়ে থেকে কোয়ালিফায়ারে খেলা বলতে গেলে নিশ্চিত। তিনে থাকা বেঙ্গালুরুর চেয়ে রান রেটে এই মুহূর্তে ০.৭০৮ ব্যবধানে এগিয়ে দিল্লি।
৮ অক্টোবর বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে দিলে অবশ্য একেবারে নিশ্চিতই হয়ে যাবে দিল্লির কোয়ালিফায়ারে খেলা।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু
সামনের দুই ম্যাচ: ৬ অক্টোবর হায়দরাবাদের বিপক্ষে, ৮ অক্টোবর দিল্লির বিপক্ষে।
সেরা দুইয়ে থাকতে হলে এই দুই ম্যাচেই বড় ব্যবধানে জিততে হবে কোহলির বেঙ্গালুরুকে, পাশাপাশি আশায় থাকতে হবে যাতে চেন্নাই ও দিল্লির কেউ তাদের দুই ম্যাচের দুটিতেই হারে।
চেন্নাই ও দিল্লি তাদের দুই ম্যাচের অন্তত একটিতে হারলেও অবশ্য সুযোগ থাকবে বেঙ্গালুরুর, কিন্তু সে ক্ষেত্রে রান রেটের প্রায় অসম্ভব ব্যবধান ঘোচাতে হবে কোহলিদের।
কলকাতা নাইট রাইডার্স
আর একটিই ম্যাচ বাকি তাদের—৭ অক্টোবর রাজস্থানের বিপক্ষে।
কোয়ালিফায়ারে খেলার আর সুযোগ নেই কলকাতার, তাদের হিসাব শুধু প্লে-অফে ওঠার। রাজস্থানের বিপক্ষে জিতলেই কলকাতার প্লে-অফে খেলা প্রায় নিশ্চিত। আর জয়টা বড় ব্যবধানের হলে কলকাতার আর কোনো দিকে তাকাতে হবে না।
কলকাতার জন্য সুবিধা হলো, একদিকে তাদের রান রেট অনেক বেশি। তার ওপর পয়েন্ট তালিকায় তাদের নিচে থাকা যে তিন দল প্লে-অফের দৌড়ে আছে, তাদের মধ্যে রাজস্থান ও মুম্বাই বাকি দুই ম্যাচের একটিতে নিজেরাই একে অন্যের মুখোমুখি হবে। অর্থাৎ এই দুই দলের কোনো একটি সর্বোচ্চ ১৪ পয়েন্ট পেতে পারে (কলকাতা বাকি ম্যাচটি জিতলে তাদেরও পয়েন্ট হবে ১৪)। রাজস্থান ও মুম্বাইয়ের বাইরে অন্য দল পাঞ্জাবের ম্যাচই বাকি একটি, তাদের পক্ষেও ১২ পয়েন্টের বেশি পাওয়া সম্ভব নয়।
পাঞ্জাব কিংস
পরের ম্যাচ: ৭ অক্টোবর চেন্নাইয়ের বিপক্ষে।
প্লে-অফের দৌড়ে থাকা বাকি তিন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৪ পয়েন্ট পাওয়া সম্ভব হলেও পাঞ্জাবের পক্ষে ১২ পয়েন্টের বেশি পাওয়া সম্ভব নয়। নিজেদের ভাগ্য তাই পাঞ্জাবের হাতে নেই।
আপাতত চেন্নাইকে বড় ব্যবধানে হারাতে হবে তাদের। এরপর প্রার্থনায় থাকতে হবে যেন কলকাতা তাদের শেষ ম্যাচে রাজস্থানের কাছে হারে, এরপর রাজস্থান আবার ৫ অক্টোবর মুম্বাইয়ের কাছে বড় ব্যবধানে হারে। পাশাপাশি মুম্বাইও যেন হায়দরাবাদের বিপক্ষে তাদের অন্য ম্যাচটিতে বিশাল ব্যবধানে হেরে যায়!
অসম্ভব সমীকরণ বললেও কম বলা হয়!
রাজস্থান রয়্যালস
পরের দুই ম্যাচ: ৫ অক্টোবর মুম্বাইয়ের বিপক্ষে, ৭ অক্টোবর কলকাতার বিপক্ষে।
কলকাতার মতো রাজস্থানেরও নিজেদের ভাগ্য নিজেদেরই হাতে। কারণ, তারা প্লে-অফের দৌড়ে তাদের সরাসরি প্রতিপক্ষেরই মুখোমুখি হচ্ছে। মোস্তাফিজের দলের জন্য সমীকরণটা সহজই—দুই ম্যাচে মুম্বাই ও কলকাতাকে হারাও, প্লে-অফে খেলো।
মুম্বাই ইন্ডিয়ানস
পরের দুই ম্যাচ: ৫ অক্টোবর রাজস্থানের বিপক্ষে, ৮ অক্টোবর প্রতিপক্ষ হায়দরাবাদ।
প্লে-অফে থাকা চার দলের মধ্যে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের রান রেটই সবচেয়ে খারাপ (-০.৪৫৩)। পরের দুই ম্যাচে তো মুম্বাইকে জিততে হবেই, এত বড় ব্যবধানেই জিততে হবে যাতে রান রেটের এই ব্যবধান ঘুচিয়ে প্লে-অফে যাওয়া যায়।