সাকিবের ছুটির সময় ঠিক করেছে বিসিবি–ই

বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানফাইল ছবি: প্রথম আলো

এপ্রিল–মে মাসে শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের হয়ে দুই টেস্টের সিরিজ না খেলার সিদ্ধান্ত সাকিব আল হাসানের নয়, সিদ্ধান্তটা নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সাকিবের আইপিএলে খেলতে চাওয়ার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বিসিবি–ই ঠিক করেছে আইপিএলের কোন সময়টায় তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে ছুটিতে থাকবেন।

আগামী ৯ এপ্রিল আইপিএল শুরু হয়ে চলবে ৩০ মে পর্যন্ত। এই সময়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি সিরিজ আছে বাংলাদেশ দলের। প্রথমে দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে ১২ এপ্রিল বাংলাদেশ দল যাবে শ্রীলঙ্কায়। সূচি অনুযায়ী ক্যান্ডিতে টেস্ট দুটি শুরু হবে ২১ ও ২৯ এপ্রিল থেকে। এরপর মে মাসের ২০ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে তিন ওয়ানডের সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসবে শ্রীলঙ্কা দল।

আইপিএল খেলার অনাপত্তিপত্র চেয়ে বিসিবিকে দেওয়া ১৭ ফেব্রুয়ারির চিঠিতে সাকিব ছুটির জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ করেননি। এটাও বলেননি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট খেলার সময়ই তাঁকে ছুটি দিতে হবে। তবে আইপিএলের সময় যে বিসিবি শ্রীলঙ্কা সফর করার পরিকল্পনা করছে, সেটি তাঁর জানা বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন সাকিব।

সাকিব আল হাসান।
প্রথম আলো

সাকিব যেহেতু ছুটির জন্য নির্দিষ্ট সময় বলে দেননি এবং বিসিবিও শেষ পর্যন্ত তাঁকে পুরো আইপিএলের জন্য ছুটি দেয়নি, তারা চাইলে টেস্ট সিরিজের সময়টা বাদ দিয়েও সাকিবকে ছুটি দিতে পারত। সাকিবের টেস্টে খেলা গুরুত্বপূর্ণ মনে করলে সেটিই করা উচিত ছিল বিসিবির।

কিন্তু বিসিবি তা না করে ১৮ ফেব্রুয়ারি দেওয়া অনাপত্তিপত্রে সাকিবকে ১ এপ্রিল থেকে ১৮ মে পর্যন্ত ছুটি দেয়, যে সময়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ দল। টেস্টের সূচি সাকিবকে ছুটি দেওয়ার পর চূড়ান্ত হলেও টেস্ট দুটি কবে হতে পারে, সে সম্পর্কে বিসিবির আগেই ধারণা থাকার কথা। দুই বোর্ডের মধ্যে এ নিয়ে আরও আগে থেকেই আলোচনা চলছিল।

বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তুলনায় ওয়ানডে সুপার লিগ বাংলাদেশের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেই বিসিবি চেয়েছে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের সময় সাকিব দেশের হয়ে খেলার জন্য উন্মুক্ত থাকুন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩–০তে সিরিজ জয়ের পর ওয়ানডে সুপার লিগে বাংলাদেশের এখন ৩০ পয়েন্ট। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজেও প্রতিটি ম্যাচ জিতলে ১০ পয়েন্ট করে পাবে বাংলাদেশ দল।

১০০ কেজি ওজন যদি একজনকে তুলতে বলা হয় সেটা তার পক্ষে কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু সেই ১০০ কেজি যখন ১০ জন মিলে তোলে, একজনের ভাগে মাত্র ১০ কেজি করে পড়ে। কাজটা তখন সবার জন্যই সহজ হয়
সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশ অলরাউন্ডার

অন্যদিকে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পয়েন্টশূন্য বাংলাদেশ আছে একেবারে তলানিতে। চ্যাম্পিয়নশিপের চলতি চক্রে বাংলাদেশের বাকি শুধু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট দুটিই, যেখানে জিতলেও পয়েন্ট তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানের খুব বেশি হেরফের হবে না। আবার হারলেও হারানোর তেমন কিছু থাকবে না।

এই বিবেচনায় সাকিবকে টেস্টের সময় আইপিএল খেলতে দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সঠিকই নিয়েছে বিসিবি। সাকিবও সিদ্ধান্তের জন্য বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে ধন্যবাদ দিয়ে আজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মনে করি পাপন ভাই (নাজমুল হাসান) ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন।’

জানা গেছে, ছুটির ব্যাপারে বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে সাকিবের আলোচনায়ও গুরুত্ব পেয়েছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাঁর ওয়ানডে সিরিজে খেলার ব্যাপারটিই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান আকরাম খান অবশ্য বলেছেন, ‘সাকিব টেস্টের সময়ের জন্যই ছুটি চেয়েছে। সে জন্যই আমরা ওকে টেস্টের সময় আইপিএলে খেলার অনুমতি দিয়েছি।’

এর আগে গত পরশু রাতে এক ফেসবুক লাইভে সাকিব দাবি করেন, বিসিবি তাঁর চিঠির ভুল ব্যাখ্যা করেছে। টেস্ট খেলতে চান না, এমন কিছু বিসিবিকে দেওয়া চিঠিতে বলেননি তিনি। এরপর কাল সন্ধ্যায় বিসিবি সভাপতির বাসভবনে বোর্ড কর্মকর্তাদের এক সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান।
ছবি: প্রথম আলো

সভার পর আকরাম খান একটু ক্ষোভের সঙ্গেই বলেছেন, ‘আমরা তার চিঠি পড়ে ভুল বুঝতে পারি। সে হয়তো টেস্ট খেলতে চায়। আগ্রহ থাকলে অবশ্যই সে টেস্ট খেলবে। সে ক্ষেত্রে তাকে দেওয়া আইপিএলের অনাপত্তিপত্রটি আমরা পুনর্বিবেচনা করব।’ তবে পরে আবার বলেছেন, ‘ও (সাকিব) যে সময়ের জন্য ছুটি চেয়েছে, সে সময়ে শ্রীলঙ্কায় আমাদের দুটি টেস্টই খেলতে যাওয়ার কথা। ওয়ানডে বা টি–টোয়েন্টি নয়। সাকিব তো ওই সিরিজটা না খেলেই আইপিএল খেলতে চেয়েছে।’

আপাদৃষ্টিতে বিষয়টিকে ‘সাকিব বনাম বিসিবি’ বা ‘সাকিব বনাম আকরাম’ লড়াই–ই মনে হচ্ছে। তবে সাকিব নিজে বিষয়টিকে সেভাবে দেখতে চান না। প্রথম আলোকে তিনি বলেছেন, ‘এখানে কাউকে দোষ দেওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশ দল যখন জেতে তখন সেটা ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ, বিসিবি, খেলোয়াড়, বাংলাদেশের মানুষ—সবারই জয়। হারলেও সেটাই হওয়া উচিত। ব্যর্থতার দায়ও সবার। ১০০ কেজি ওজন যদি একজনকে তুলতে বলা হয় সেটা তার পক্ষে কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু সেই ১০০ কেজি যখন ১০ জন মিলে তোলে, একজনের ভাগে মাত্র ১০ কেজি করে পড়ে। কাজটা তখন সবার জন্যই সহজ হয়।’