সাকিবের ফেরার টেস্টে একাদশ কেমন হবে বাংলাদেশের

ঢাকা টেস্টে ফিরছেন সাকিবছবি: শামসুল হক

চোটের কারণে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ হতে না–হতেই ছিটকে গিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। হ্যামস্ট্রিংয়ের সেই চোট তাঁকে খেলতে দেয়নি ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজে। টেস্ট সিরিজে ফেরার কথা থাকলেও চট্টগ্রামের প্রথম টেস্টেও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। তবে শনিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া ঢাকায় সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে খেলবেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার মিরপুর স্টেডিয়ামে দুই দফা অনুশীলন করেছেন সাকিব। প্রথমে একাই কিছুক্ষণ নেটে অনুশীলন করেছেন। পরে কোভিড পরীক্ষা করিয়ে নেগেটিভ সনদ নিয়ে আবার দলের সঙ্গে অনুশীলন করেন। সাকিবের ফেরাটা যে বাংলাদেশ দলকে অন্য রকম শক্তি আর প্রেরণা জোগাবে, সেটি না বললেও চলছে। কাল সাকিব দলে ফিরলে বাংলাদেশের একাদশ কেমন হতে যাচ্ছে?

সাকিবের সঙ্গে ফিরছেন তাসকিনও?
ছবি: শামসুল হক

সাকিবের মতো অলরাউন্ডারের উপস্থিতি যেকোনো দলকেই অনেক নির্ভার করে। তিনি দলে থাকা মানেই দুই বিশেষজ্ঞ ক্রিকেটারের সেবা পাওয়া। তাঁর থাকা মানেই, দলের প্রয়োজন অনুযায়ী বাড়তি একজন ব্যাটসম্যান কিংবা একজন বোলার অন্তর্ভুক্তির সুযোগ। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ব্যাটিংয়ে বড় ভোগা ভুগেছে বাংলাদেশ দল। টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যান—সাদমান ইসলাম, সাইফ হাসান, মুমিনুল হক আর নাজমুল হোসেন ছিলেন আগাগোড়াই ব্যর্থ। ঢাকা টেস্টের আগেই টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে ছিটকে গেছেন সাইফ। সাকিব দলে ফেরায় বাংলাদেশকে এখন ভাবতে হচ্ছে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে। সাদমানের সঙ্গী কে হবেন। ২০ জনের অদ্ভুত স্কোয়াডে একাধিক বিকল্প থাকলেও (মোহাম্মদ নাঈম ও মাহমুদুল হাসান) তাঁদের খেলানোর কোনো কারণ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে টেস্ট ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে না খেলা নাজমুল হোসেন সাদমানের সঙ্গী হতে পারেন। সাকিব খেললে তাঁরই সাদমানের সঙ্গে ওপেন করার সম্ভাবনা বেশি বলেই দলীয় সূত্রে মনে হচ্ছে।

সাকিব ফিরলে বোলিং–শক্তি অনেক বাড়বে
ছবি: শামসুল হক

চট্টগ্রাম টেস্টে তাইজুল ইসলাম তাঁর বাঁহাতি স্পিন দিয়ে দুর্দান্ত করেছেন। তাঁর ৭ উইকেট শিকারেই প্রথম ইনিংসে ৩৩০ রান করেও ৪৪ রানে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। তাইজুলের বোলিং–সাফল্য আক্ষেপ ছড়িয়েছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে—তাইজুলের সঙ্গে সাকিব যদি থাকতেন! তবে অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ মোটামুটি বোলিং করলেও উইকেট তোলার কাজটা সেভাবে করতে পারেননি। তাই, ঢাকা টেস্টে সাকিব দলে ঢুকলে বোলিং আক্রমণ যে বিরাট শক্তি পাবে, সেটি না বললেও চলছে।

পেস বোলিং চিরদিনই টেস্টে ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। চট্টগ্রামেও সেটির ব্যতিক্রম হয়নি। নখদন্তহীন, নির্বিষ পেস বোলিং পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের কোনো সমস্যার মুখে ফেলতে পারেনি। দুই ওপেনার আবিদ আলী আর আবদুল্লাহ শফিক পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থেকে দলের ব্যাটিং এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আবিদ তো দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন। শফিক দুই ইনিংসেই পেয়েছেন ফিফটি। ঢাকা টেস্টে পেস বোলিং বিভাগে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা আছে। চোট কাটিয়েছেন কয়েক মাস ধরে টেস্টে ভালো বোলিং করা তাসকিন আহমেদ। চট্টগ্রামে আবু জায়েদ যেমন বোলিং করেছেন, তাতে ঢাকা টেস্টে তাঁর বাদ পড়ার সম্ভাবনা আছে। ইবাদত পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের জন্য বড় হুমকি হতে না পারলেও দুটি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। সে কারণে হয়তো ঢাকা টেস্টে তাঁকে রেখেই একাদশ সাজানো হতে পারে। তবে দলে থাকা অন্য দুই পেসার তরুণ রেজাউর রহমান ও খালেদ আহমেদ আছেন। রেজাউর রহমানকে খেলানোর ব্যাপারটি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

অনুশীলনে দলের দুই অভিজ্ঞতম
ছবি: শামসুল হক

সাদমানের সঙ্গে নাজমুলকে ধরলে তিন নম্বরে খেলবেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। চট্টগ্রামে ভালো করেননি। তবে ঢাকায় তিনি নিজেকে মেলে ধরতেই চাইবেন। চারে মুশফিকুর রহিম খেলবেন—এটা নিশ্চিত। পাঁচে খেলবেন সাকিব। ছয় আর সাত লিটন দাস ও ইয়াসির আলীর জন্য। জায়গা অদলবদল করে অথবা ইয়াসিরকে সাতে পাঠানো হতে পারে। এরপর আটে থাকবেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাইজুলের জায়গা নয় নম্বরে। দশ ও এগারোতে দুই পেসার হিসেবে তাসকিন ঢুকে পড়তে পারেন আবু জায়েদের জায়গায়। আরেক পেসার হিসেবে ইবাদতেরই যে খেলার সম্ভাবনা বেশি, সেটি আগেই বলা হয়েছে।

সাকিব–তাসকিনের অন্তর্ভুক্তিতে ঢাকায় বাংলাদেশ দল অন্য চেহারায় দেখা দিতে পারে কি না, এটাই এখন দেখার।