সাকিবের মতো ভুল করছেন না তাঁরা

পাকিস্তানের ন্যাশনাল টি-২০ কাপের একটি ম্যাচের মুহূর্ত।ছবি: পিসিবি

বাজিকরের কাছ থেকে পাওয়া ফিক্সিংয়ের প্রস্তাবের কথা আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগকে না জানানোর মাশুল দিয়ে এখনো ক্রিকেটের বাইরে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। তবে একই ভুল করেননি ভারতীয় এক ক্রিকেটার। চলতি আইপিএলের সময় ভারতীয় এক ক্রিকেটার কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন বাজিকরদের কাছে থেকে পাওয়া প্রস্তাবের কথা।

ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তান থেকেও এসেছে একই ধরনের খবর। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) আজ জানিয়েছে তাদেরও এক ক্রিকেটার বাজিকরের কাছ থেকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার কথা জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষকে।

পাকিস্তানে এখন চলছে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপ। ওই টুর্নামেন্টে খেলা এক খেলোয়াড়ই জানিয়েছেন বাজিকরের কাছ থেকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার কথা। পিসিবি ওই খেলোয়াড়ের নাম না জানালেও বলেছে ক্রিকেটাররা নিজ থেকেই এগিয়ে আসায় বেশ খুশি তারা।

ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপের একটি মুহূর্ত।
ছবি: পিসিবি

পিসিবির দুর্নীতিবিরোধী ও নিরাপত্তা বিষয়ক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবঃ) আসিফ মেহমুদ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন ওই খেলোয়াড়কে ধন্যবাদ দিয়েছেন তারা, ‘আমি ওই খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলেছি। পিসিবি দুর্নীতি-বিরোধী ধারা মানায় এবং প্রস্তাব পাওয়ার কথা দুর্নীতি-বিরোধী কর্মকর্তাকে জানানোয় তার প্রশংসা করার পাশাপাশি আমরা তাঁকে ধন্যবাদও দিয়েছি।’

পিসিবি এখন এ বিষয়ে কী করছে সেটিও বলেছেন মেহমুদ, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর পিসিবির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট তদন্ত শুরু করেছে। এ পর্যন্ত কিছু স্পর্শকাতর তথ্যও পাওয়া গেছে যা এফআইএকে (পাকিস্তানের সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা) পাঠানো হয়েছে। তদন্তের স্বার্থেই আমরা এখন বিস্তারিত কিছু জানাচ্ছি না। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে আইসিসিকে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানানো হচ্ছে ও তথ্য আদানপ্রদান তরা হচ্ছে।’

ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার তথ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানোর ঘটনায় পাকিস্তানের ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের খুশি হওয়ারই কথা। দেশটির ক্রিকেট ইতিহাসকে কলঙ্কিত করার মতো ঘটনার তো কমতি নেই পাকিস্তানে। গত দুই যুগে ম্যাচ পাতানো ও স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে কত ক্রিকেটারের!

২০০০ সালে সাবেক অধিনায়ক সেলিম মালিক ও পেসার আতাউর রেহমান আজীবন নিষিদ্ধ হন ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে। অস্ট্রেলিয়ার তিন ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন, মার্ক ওয়াহ ও টিম মে অভিযোগ করেছিলেন, ১৯৯৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার পাকিস্তান সফরের সময় তাঁদের ঘুষ সেধেছিলেন মালিক। ওই অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে আরও বড় ফিক্সিংয়ের সন্ধান পায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত সংস্থা। নিষিদ্ধ না হলেও জরিমানা গুনতে হয়েছিল ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস ও ইনজামাম-উল-হকের মতো তারকাদের।

স্পট ফিক্সিংয়ের কলঙ্ক কাটিয়ে আর পাকিস্তান দলে ফেরা হয়নি সালমান-আসিফের।
ছবি: এএফপি

২০১০ সালে পাকিস্তানের ইংল্যান্ড সফরের স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারি তো কাঁপিয়ে দেয় দেশটির পুরো ক্রিকেট কাঠামোকেই। সে সময়ের দলটির টেস্ট অধিনায়ক সালমান বাট ও দুই পেসার মোহাম্মদ আসিফ এবং মোহাম্মদ আমির শুধু নিষিদ্ধই হননি, জেলও খেটেছেন। ওই বছরই ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত হন পাকিস্তানের সাবেক লেগ স্পিনার দানিশ কানেরিয়া। পরে আজীবন নিষিদ্ধ হন তিনি।

২০১৭ সালে পাকিস্তান সুপার লিগ বড় ধাক্কা খায় ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে। এবার বিভিন্ন মেয়াদে নিষিদ্ধ হন শারজিল খান, খালিদ লতিফ, শাহজাইব হাসান ও নাসির জামশেদের মতো জাতীয় দলে খেলা ক্রিকেটাররা। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে তো ইংল্যান্ডে জেলই হয়ে যায় জামশেদের। সাবেক ওপেনারকে সম্ভবত আগামী সপ্তাহে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিতে পারে যুক্তরাজ্য সরকার।

কলঙ্কিত এসব ইতিহাস মাথায় রেখে পিসিবি ফিক্সিংকে ফৌজদারি আইনের অধীনে আনার চেষ্টা করেছে।