সাদমান নিজেই রিভিউ নেননি

ভালো শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি সাদমান ইসলামছবি: শামসুল হক

বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে ছিলেন না। ছিলেন না বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপেও। দেশের শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটাররা যখন সাদা বলের খেলায় ব্যস্ত ছিলেন, তখন সাদমান ইসলাম নিভৃতে চালাচ্ছিলেন তাঁর লড়াই, লাল বলের লড়াই।

সবাই যখন বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে ব্যস্ত, সাদমান তখন ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে একা ব্যাটিং করতেন। মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের জন্য স্টেডিয়ামের উইকেটে পানি দেওয়া যেত না।

এসবের মধ্যেই চলত সাদমানের লড়াই। চোট ও করোনায় এক বছরের বেশি সময় পর খেলতে নেমে দলের বাকি যাঁরা খেলার মধ্যে ছিলেন, তাঁদের তুলনায় ভালোই ব্যাটিং করেছেন সাদমান।

আজ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৯ রান আসে সাদমানের ব্যাট থেকে। ১৫৪ বল খেলে ৬টি চারে এই রান করেন তিনি।

ইনিংসটি আরও লম্বা হতে পারত। জোমেল ওয়ারিক্যানের বাঁহাতি স্পিনে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে আউট হন এই বাঁহাতি ওপেনার। রিভিউ নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু সেই সুযোগ না নিয়েই মাঠ ছাড়েন সাদমান।

ম্যাচ শেষে রিভিউ না নেওয়ার বিষয়ে সাদমান বলছিলেন, ‘হয়তো ভুল শটে আউট হয়েছি। রিভিউ অবশ্যই নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, বল লাইনের ভেতর ছিল। এই জন্য রিভিউ নেওয়া হয়নি। হতাশ ছিলাম, কিন্তু এসব খেলার অংশ। মেনে নিতেই হবে।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পেলেই চওড়া হয়ে ওঠে সাদমানের ব্যাট
ছবি: শামসুল হক

সাদমানের ব্যাটিংয়ের সময় উইকেটের অন্য প্রান্তে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। রিভিউ নেওয়ার ব্যাপার মুশফিকের সঙ্গেও কথা বলেন সাদমান, ‘মুশি ভাই জিজ্ঞেস করেছিল এ ব্যাপারে। আমি বলেছি, আমার মনে হচ্ছে ইন লাইন (স্টাম্পের লাইনের ভেতর)। মনে হয়েছে উইকেটে হিট করবে। তাই আর নেওয়া হয়নি।’

যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন, সাদমানকে বেশ সাবলীল মনে হয়েছে। উইকেটে সময় কাটানো তাঁর শক্তি। বোলারদের একাধিক স্পেলে বল করাতে বাধ্য করেন তিনি।

আজও ঠিক তাই করেছেন। আর কেমার রোচদের ভালোই চেনার কথা এই ওপেনারের। ২০১৮ সালে ঢাকায় অভিষেক টেস্টে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ আক্রমণকেই ক্লান্ত করে আউট হন সাদমান। অভিষেক ইনিংসে সাদমানের ব্যাট থেকে আসে ৭৬ রান।

জুটি বড় করতে পারেননি সাদমান-মুশফিক
ছবি: শামসুল হক

এরপর ১০ ইনিংসে কোনো ফিফটি নেই, কিন্তু ভালো শুরু আছে অনেক। আবার যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্ট ম্যাচে পেলেন, তখনই ছোট্ট টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন সাদমান।

যেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ধীরে ধীরে সাদমানের প্রিয় প্রতিপক্ষে পরিণত হচ্ছে। সাদমান অবশ্য সেভাবে ভাবছেন না, ‘তেমন কিছু না। আমি যে দলের বিপক্ষেই খেলি, চেষ্টা থাকে সবার সঙ্গেই ভালো খেলার। হয়তো এ কদিনের অনুশীলন ভালো হয়েছে। এ জন্যই হয়তো ব্যাটে-বলের পারফরম্যান্সটা বেরিয়ে এসেছে।’

তবে ইনিংসটি বড় করার আক্ষেপ রয়ে গেছে এই বাঁহাতির, ‘অনেক দিন পর খেলেছি। দলের আমার কাছে যা আশা ছিল, নিজের কাছে যে আশা ছিল, সেটা করতে পেরেছি। আমি আমার সেরাটা দিয়েছি। তবে আরেকটু বড় করতে পারলে ভালো হতো।’

সাদমানের মতো ইনিংস বড় করার আক্ষেপ নিশ্চয়ই বাংলাদেশের বাকি ব্যাটসম্যানদেরও থাকবে। বাংলাদেশ চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে ৫ উইকেটে তুলেছে ২৪২ রান। সাকিব আল হাসান (৩৯) ও লিটন দাস (৩৪) অপরাজিত আছেন।

আজ ইনিংস বড় করতে না পারার আক্ষেপ থাকবে সাদমানের
ছবি: শামসুল হক

নাজমুল হোসেন, মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম—প্রত্যেকেই আউট হন উইকেটে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছে।

দিনের পারফরম্যান্স নিয়ে সাদমান বলছিলেন, ‘আমাদের নিজেদের ঘাটতির কারণে সমস্যাটা হয়েছে, উইকেটগুলো পড়েছে। সাকিব ভাই ও লিটন খুব ভালো ব্যাটিং করছে, বুঝে উঠতে পেরেছে কীভাবে ব্যাটিং করতে হয় এখানে। আশা করি কাল এই সমস্যাটা সামলাতে হবে না।’