সাব্বির রহমান

নাম

সাব্বির রহমান

জন্ম

নভেম্বর ২২, ১৯৯১

ধরন

ডান হাতি ব্যাটসম্যান, লেগ স্পিনার

অভিষেক

বনাম জিম্বাবুয়ে, নভেম্বর ২১, ২০১৪

‘গেইল, ডি ভিলিয়ার্স—কী পাওয়ার ওদের খেলায়! জাতিগতভাবেই আমরা শারীরিকভাবে ওদের চেয়ে পিছিয়ে’, কথাটা সাকিব যখন বলেছিলেন, তাঁর ভেতরের আক্ষেপটা টের পাওয়া যাচ্ছিল স্পষ্ট। বাংলাদেশের ক্রিকেটে একজন পাওয়ার-হিটারের আকাঙ্ক্ষা তো আর কম দিনের নয়। ইনচনে সাব্বির রহমানের ১৮ বলে ৩০ রানের ইনিংস তাই এ দেশের ক্রিকেটে এসেছিল এক পশলা স্বস্তির বৃষ্টি ঝরিয়ে। একজন বাংলাদেশিও বলকে অবলীলায় সীমানাছাড়া করতে পারেন, এমন স্বপ্ন দেখিয়ে।

জন্মেছিলেন ১৯৯১ সালের ২২ নভেম্বর, রাজশাহীতে। ক্রিকেটকে ভালোবেসেছিলেন জীবনের শুরুতেই, শহীদ আফ্রিদির রেকর্ড গড়া ৩৭ বলের শতক দেখে। ক্রিকেট খেলার শুরুও তখন থেকেই। ক্লাস সেভেনে পড়াকালীন, রাজশাহী মডেল স্কুলের কাকলি মাঠের এক ম্যাচে ব্যাটিং করতে নেমে তিনি চোখে পড়ে যান রশিদ নামের এক স্থানীয় কোচের৷ সাব্বিরের ব্যাটিং তাকে এতটাই মুগ্ধ করেছিল, পরদিনই ডেকে নেন নিজের ক্লাবে, ফ্রেন্ডস আইডিয়াল ক্রিকেট স্কুলে। রশিদ যে হিরে চিনতে ভুল করেননি তার প্রমাণ মেলে বছরখানেক পরে।

ব্যাটে-বলে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে রাজশাহীর বিভাগীয় দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন মাত্র ১৬ বছর বয়সে। ক্যারিয়ারে বাঁকবদলের মুহূর্ত এসেছিল ২০১০ এশিয়ান গেমসের ফাইনালে। শেষ পাঁচ ওভারে যখন বাংলাদেশের দরকার ছিল ৪৪ রান, সাব্বির তখনই খেলেছিলেন ওই ৩০ রানের ক্যামিও। দলের জয়ের সঙ্গে সঙ্গে সাব্বিরকে নিয়েও ক্রিকেটপাড়ায় শুরু হয়েছিল আলোচনা।

তবে আলোচনা মিইয়ে যেতেও সময় লাগেনি। চার দিনের ম্যাচ, লিস্ট-এ-ক্রিকেট, নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন বরাবরই। যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট তাকে আলোচনায় এনেছিল, সেখানে আলো ছড়াচ্ছিলেন ঠিকই। বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে ১৪৫ স্ট্রাইক রেটে রান তুলে জায়গা করে নেন ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দলে। শুরুর ম্যাচগুলোতে নিজেকে চেনানোর সুযোগ পাননি তেমন। তবে মারকাটারি ব্যাটিং আর ক্ষিপ্রগতির ফিল্ডিংয়ে যতটুকু চিনিয়েছিলেন, ওয়ানডে দলে জায়গা করে নেওয়ার জন্য তা-ই হয়েছিল যথেষ্ট।

২০১৪ সালের নভেম্বরেই নির্বাচকেরা তাঁকে দিয়েছিলেন ওয়ানডে খেলার স্বাদ। নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দিতে সময় নেননি একদমই। অভিষেক ম্যাচের চাপ-টাপ তুড়িতে উড়িয়ে খেলেছিলেন ২৫ বলে ৪৪ রানের ইনিংস। পুরস্কারটাও পেয়েছিলেন, মাত্র পাঁচ ম্যাচের অভিজ্ঞতা নিয়েই খেলে ফেলেছিলেন ২০১৫ বিশ্বকাপ। ওই বিশ্বকাপের ছয় ম্যাচে ১৮২ রান বলছে, পারফরম্যান্স ছিল গড়পড়তা, তবে তার ৯৮ ছাড়ানো স্ট্রাইক রেট বলছিল, নিজের কাজটুকু করেছিলেন ঠিকঠাকই।

সাব্বিরকে ঘিরে প্রত্যাশার পারদ চড়তে শুরু করেছিল অমন পারফরম্যান্সের পরেই। সাব্বির রহমান পূরণ করতে পেরেছেন সেই প্রত্যাশার সামান্যই। ৬১ ওয়ানডে খেলার পরেও ব্যাটিং গড় মোটে ২৫.৯৪, স্ট্রাইক রেটও কমতে শুরু করেছিল দিনে দিনে। মাঝের এই সময়টায় মাঠের চেয়ে মাঠের বাইরের নেতিবাচক খবরই তাকে টেনে এনেছিল আলোচনায়। কখনো দর্শক পিটিয়ে, কখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দর্শকদের সঙ্গে অসদাচরণ করে জাতীয় দল থেকে নিষিদ্ধ হয়ে কিংবা দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ করে জরিমানা দিয়ে, সাব্বির রহমান যেন হয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের ‘ব্যাড বয়’।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অনবদ্য ৮০ রানের ইনিংস কিংবা নিদাহাস ট্রফির ফাইনালের ফিফটিকেও তাই মনে হচ্ছে, অনেক কাল আগের কথা। কিংবা নিউজিল্যান্ডে সেই স্রোতের বিপরীতে সাঁতরে করা সেঞ্চুরির ইনিংসটিও। সব আঁধার সরিয়ে সাব্বির রহমানকে ফিরতে হবে আলোয়। সাব্বির কি পারবেন?

[সব তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান এই বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত]