সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভের ঝড়

আইসিসি এখন ‘ইন্ডিয়ান’ ক্রিকেট কাউন্সিল! ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি
আইসিসি এখন ‘ইন্ডিয়ান’ ক্রিকেট কাউন্সিল! ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি

বাংলাদেশের ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপের সমাপ্তি ঘটল আজ। ভারতের কাছে ১০৯ রানের বড় ব্যবধানে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে মাশরাফিদের। এই ম্যাচে সবচেয়ে বেশি আলোচিত, কিংবা বলা ভালো ‘সমালোচিত’ ছিল আম্পায়ারদের একাধিক প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত। এ সবকিছু মিলিয়েই এখন বেশ উত্তপ্ত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো। কেউ ক্ষোভে ফুঁসছেন, কেউ বা আবার দলের পরাজয়ের শোকে মুহ্যমান। বাজে আম্পায়ারিংয়ের প্রতিবাদে খোলা হয়েছে একাধিক প্রতিবাদ ইভেন্টও।
আইসিসির সভাপতি এখন বাংলাদেশেরই একজন। তাঁর নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। অনেকেই তো আবার আবেগের আতিশয্যে আইসিসি বয়কটের ডাক দিয়ে বসেছেন। আম্পায়ারদের কুশপুত্তলিকা জ্বালানোর ইভেন্টও তৈরি হয়ে গেছে এরই মধ্যে।
এভারেস্টজয়ী ওয়াসফিয়া নাজরিন ফেসবুকে তাঁর স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘একজন ক্রীড়াবিদ হয়ে আমি চাইব যে ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা হিসেবে আইসিসি থাকবে সৎ এবং নিরপেক্ষ। কারও ব্যবসায় একক আধিপত্য বিস্তারে সহায়তা, পক্ষপাত কিংবা দুর্নীতিতে সাহায্য করা আইসিসির কাজ নয়। ফলাফল যদি পূর্ব নির্ধারিতই হয়ে থাকে তাহলে ক্রিকেট খেলব কেন আমরা? একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমি আমার দলের সকল খেলোয়াড়কে ‘স্যালুট’ জানাতে চাই। নক-আউটের চাপ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ ম্যাচটিতেও তারা সত্যিকারের খেলোয়াড়ি মানসিকতা এবং সততার পরিচয় দিয়েছে।’

চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও একাধিক স্ট্যাটাসে বাজে আম্পায়ারিং এবং তাদের পক্ষপাতদুষ্ট স্বভাব নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন। তবে নিজ দলের ব্যাটিং নিয়েও সন্তুষ্ট নন তিনি, ‘এমন ব্যাটিংয়ের পর কোনো অজুহাত দেওয়া চলে না। যা হোক, দারুণ এক বিশ্বকাপ কাটানোর জন্য অভিনন্দন টাইগারদের। অভিনন্দন ভারতকেও! আমি নিশ্চিত মাঠের ভেতরে-বাইরে এত বিতর্কের জন্ম না দিলে জয়টা তোমাদের জন্য আরও আনন্দের হতো।’
কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের স্ট্যাটাসে মাত্র একটি বাক্যেই ঝরে পড়েছে রাজ্যের হতাশা। তিনি লিখেছেন, ‘সব কিছুই ব্যবসা রে ভাই।’

আইসিসিতে ভারতীয় আগ্রাসনের কানাঘুষা তো বেশ পুরোনোই। অনেকে কটাক্ষ করতে ভোলেননি সেটাও। এই যেমন সুব্রত দেব নাথ নামের একজন লিখেছেন, ‘ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, ইতালির সাত জনমের ভাগ্য যে ভারত ফুটবল বিশ্বকাপ খেলে না। কথাসাহিত্যিক মইনুল আহসান সাবের লিখেছেন, ‘সম্ভবত ইন্ডিয়ান ক্রিকেটাররাই বোর্ড থেকে ম্যাচপ্রতি সবচেয়ে বেশি টাকা পায়। তবে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তাদের চেয়েও হয়তো বেশি টাকা পায় অনফিল্ড আম্পায়ার এবং টিভি আম্পায়াররা।’
অনেকে তো আম্পায়ারদের সরাসরি ‘প্রতিপক্ষ’ বানিয়ে ভারতের একাদশকে ‘চৌদ্দ’জনের বানিয়ে ফেলেছেন। বিরাট কোহলির ক্যাচটি মুশফিক লুফে নেওয়ার পর আম্পায়রকে ব্যঙ্গ করে সিমু নাসের লেখেন, ‘এইটা কেমনে আউট হয়? উইকেট কিপার তো গ্লাভস পরে ক্যাচ ধরল!’ একজন তো ঠাট্টা করে বলেই ফেলেছেন, ‘বুঝতে পারছি না ভারত বাকি বিশ্বকাপগুলো হাতছাড়া করল কেমনে?’

হেরে গেলেও দর্শকদের সমর্থন পাচ্ছেন মাশরাফি-মুশফিকরা। জনপ্রিয় রেডিও উপস্থাপক কিবরিয়া সরকার লিখেছেন ‘টাইগারস, তোমরা শুধু ১১ জন ইন্ডিয়ান খেলোয়াড়ের বিপক্ষেই লড়ছ না। লড়ছ আম্পায়ার, আবহাওয়া, আইসিসি এবং ভাগ্যের বিরুদ্ধেও।’ জিনাত জোয়ার্দার রিপা লিখেছেন, ‘তবুও আমরা ফুল নিয়ে বিমানবন্দরে যাব।’
মাঠে মাশরাফিরা হেরেছে, কিন্তু সমর্থকদের মনে তো তাদের জয় হয়ে গেছে সেই কবেই!