সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভাসছে ভারত-স্তুতিতে

এ ইনিংসের কথা আজীবন মনে থাকবে পন্তের।ছবি: এএফপি

অবিশ্বাস্য! দুর্দান্ত! চমকপ্রদ!

ঠিক কী বিশেষণে ভারতের এই অনন্য অর্জনকে বিশেষায়িত করবেন আপনি? প্রশ্ন উঠতে পারে, এমন অনবদ্য অর্জনকে কি আদৌ কোনো বিশেষণে বিশেষায়িত করা সম্ভব? যে মাঠে অস্ট্রেলিয়া ৩২ বছর ধরে ছিল অপরাজিত, সে মাঠেই বর্তমান সময়ে নিজেদের দুর্বলতম দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে এল ভারত। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির মালিকানাও ধরে রাখল। ঠিক এক মাস আগে যে দলটা ৩৬ রানে অলআউট হয়ে কাঁপছিল, ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের চূড়ান্ত বিজ্ঞাপন দেখিয়ে তারাই অস্ট্রেলিয়ার মুখ বন্ধ করে দিয়ে এল তাদের দেশেই।

স্বাভাবিকভাবেই ধন্য ধন্য রব পড়ে গেছে চারদিকে। শুভমান গিল, চেতেশ্বর পূজারা, ঋষভ পন্ত, মোহাম্মদ সিরাজ, শার্দুল ঠাকুর, ওয়াশিংটন সুন্দর—প্রত্যেকেই প্রশংসার তোড়ে ভেসে যাচ্ছেন। আর এই প্রশংসা প্রকাশ করার মাধ্যম হিসেবে সবাই বেছে নিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে। বীরেন্দর শেবাগ যেন মানতেই পারছেন না দুদিন আগে যে ঋষভ পন্ত আর ওয়াশিংটন সুন্দর অনূর্ধ্ব-১৯ খেলছিলেন, তাঁরাই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দেশের হয়ে ইতিহাস গড়লেন, ‘কয়েক বছর আগে এই পন্ত আর সুন্দর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলেছিল। কে ভেবেছিল, এই দুজনই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এভাবে দেশের হয়ে অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটা জয় এনে দেবে!’

ওদিকে গোটা দলের চারিত্রিক দৃঢ়তা মুগ্ধ করছে টেন্ডুলকারকে, ‘প্রতিটি সেশন নতুন নায়কের জন্ম দিয়েছে। প্রতিবার আমরা যখনই আঘাত পেয়েছি, নিজেদের সামলে উঠে দাঁড়িয়েছি। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করেছি শেষ পর্যন্ত, দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে খেলিনি। প্রতিটি চোট ও অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়াই করেছি বুক চিতিয়ে, সাহসিকতার সঙ্গে। ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম টেস্ট সিরিজ জয়ের মধ্যে একটা অবশ্যই! অভিনন্দন ভারত।’

অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছেন পন্ত।
ছবি: এএফপি

পন্তের প্রশংসায় পঞ্চমুখ দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্সও, ‘কী দুর্দান্ত এক টেস্ট ম্যাচ! ভারতের এই স্কোয়াডের গভীরতা ভয় জাগায়। ঋষভ পন্ত, নম্বর ১৭, দুর্দান্ত খেলেছ তুমি! টেস্ট ক্রিকেটের সেরা বিজ্ঞাপন এটা।’

ইংলিশ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রডের চোখে অবশ্য চোখে পড়েছে টেস্ট ক্রিকেটের আবেদন, ‘টেস্ট ক্রিকেট এখনো ভালোভাবে টিকে আছে। অসাধারণ জয় ছিল এটা। উপভোগ করার জন্য দুর্দান্ত এক সিরিজ। গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়া ১৯৮৮ সালের পর কখনো বলে হারেনি, ভাবা যায়! দুর্দান্ত অর্জন ভারতের!’

ওদিকে মাইকেল ভন যেন নিজের কথা নিজেই গিলছেন। কিছুদিন আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এই ভারত হোয়াইটওয়াশ হবে। ভারত যেন ভনের মতো সব সংশয়বাদীর মুখ বন্ধ করে দিয়েছে, ‘টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সিরিজ জয়। ভারতকে অভিনন্দন, তোমরা ইংল্যান্ডকে দেখালে কীভাবে এই বছরের শেষে অ্যাশেজ জিততে হবে! ব্রিটেনে আমি এখন লজ্জায় মুখ লুকাচ্ছি, কিন্তু ভারতের এই দলের সাহসিকতা আর স্কিল দেখে আমি মুগ্ধ, যা তাদের অনেক আছে। ঋষভ পন্ত আর শুভমান গিল এই দলের ভবিষ্যৎ তারকা।’

পিটারসেনের মতেও পন্ত নিজেকে তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন এই ম্যাচে, ‘ব্রিসবেনে এভাবে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে ভারত, এটাই গোটা ব্যাপারকে আরও মহিমান্বিত করে তুলেছে। ব্রিসবেনের মতো শহরের এমন উপলক্ষ প্রাপ্য নয়। হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছি! পন্ত, আজ তার কিশোর থেকে পুরুষ হওয়ার দিন, অবশ্যই ক্রিকেটীয় হিসাবে!’

শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শেন ওয়ার্নও, ‘ভারতীয় দলকে অভিনন্দন, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এটা আমার দেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিরিজ জয়। ৩৬ রানে অলআউট হওয়ার পরেও চোটাক্রান্ত একটা স্কোয়াড নিয়ে যেভাবে তারা জিতল, তাদের অদম্য মানসিকতারই প্রমাণ সেটা।’