সিরাজকে এবার ‘নর্দমার কীট’ ডেকেছেন অস্ট্রেলিয়ানরা?

সিরাজের এমন উল্লাস হয়তো দর্শকদের বর্ণবাদী আচরণের পর আর থাকেনি।ছবি: রয়টার্স

কী লাভ হলো সিডনিতে এত হইচই করে? অস্ট্রেলিয়ান দর্শকদের আচরণ তো বদলায়নি। আরও একবার ঠিকই ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সিরাজের উদ্দেশে বর্ণবাদী মন্তব্য করেছেন অস্ট্রেলিয়ান দর্শকরা।

ব্রিসবেনের গ্যাবায় কাল ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে চার টেস্ট সিরিজের চতুর্থটি শুরু হয়েছে। টেস্টটা ঘিরে এমনিতেই বিতর্কের শেষ ছিল না, এবার তাতে যোগ হলো নতুন বিতর্ক। সিডনিতে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে সিরাজকে উদ্দেশ করেই গ্যালারির দর্শকেরা বর্ণবাদী ডাক ডেকেছিলেন।

এরপর কত সমালোচনা, কত উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতিই ছিল। কিন্তু এত কিছু করেও বিকৃত মানসিকতার দর্শকদের বুঝি ঠেকানো গেল না। গ্যাবায় কাল আবার সিরাজকে উদ্দেশ করে বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ উঠেছে।

শুধু সিরাজই নন, এই টেস্টে অভিষিক্ত ভারতীয় অফ স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দরকে উদ্দেশ করেও দর্শকেরা বর্ণবাদী মন্তব্য করেছেন—এমন অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগের কথা প্রথম প্রচারে এনেছে অস্ট্রেলিয়ারই সংবাদমাধ্যম সিডনি মর্নিং হেরাল্ড। সিরাজ ও সুন্দরকে নাকি ‘নর্দমার কীট’ ডাকা হয়েছে!

‘আমার পেছনে থাকা দর্শকেরা ওয়াশিংটন ও সিরাজ দুজনকেই “নর্দমার কীট” বলে ডাকছিল। চিৎকার করছিল”—কেইট নামের এক দর্শক সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে এমনটাই বলেছেন বলে লিখেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।

ওয়াশিংটন সুন্দরকেও বর্ণবাদী আচরণের শিকার হতে হয়েছে।
ছবি: টুইটার

সিডনিতে সিরিজের তৃতীয় টেস্টের চতুর্থ দিনে ‘কে সেরা সেরা’ গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ‘কে সিরাজ সিরাজ’ বলে গেয়েছিলেন দর্শকেরা। সেটি দিয়েই কাল গ্যাবার দর্শকেরাও শুরু করেছিলেন বলে জানিয়েছেন কেইট নামের ওই দর্শক, ‘মূলত সিরাজকে উদ্দেশ করেই কথাগুলো বলা হচ্ছিল। এসসিজিতে (সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড) যেসব বলে চিৎকার করা হয়েছিল, সেটির সঙ্গে মিল ছিল।’

সিডনি টেস্টে সিরাজ তাঁর বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ আনার পর কম জল ঘোলা হয়নি। অভিযোগের পর ১০ মিনিট খেলা বন্ধ ছিল। ছয় দর্শককে তখন মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হয়। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) ম্যাচ রেফারির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে।

অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) জানিয়েছিল, অভিযুক্তদের কড়া শাস্তি দেওয়া হবে। ভারতের কাছে ক্ষমাও চেয়েছে তারা। এসসিজিতে তাদের আজীবন নিষিদ্ধ করা হবে বলেও জানায় সিএ।

বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাও (আইসিসি) এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সিএ-র কাছে দ্রুত এর বিরুদ্ধে বিচারের ব্যবস্থা করে সেটির প্রতিবেদন দিতেও বলেছিল।

কেইট নামের ওই দর্শকের মনে হচ্ছে, সিডনির ঘটনা ও এর প্রতিক্রিয়ার জেরেই এখন সিরাজকে ‘টার্গেট’ বানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার দর্শকেরা। ‘এবার সিরাজকেই উদ্দেশ করে বেশি বলা হচ্ছিল। আমার ধারণা এটা এমনি এমনি হচ্ছে না, এসসিজিতে যা হয়েছে সেটার কারণেই সিরাজকে লক্ষ্য বানানো হচ্ছে।’

সিডনি মর্নিং হেরাল্ড লিখেছে, এভাবে সিরাজকে নিয়ে স্লেজিংয়ের একটা পর্যায়ে দর্শকদের ভিড়ের মধ্য থেকে এক দর্শককে চিৎকার করে বলতে শোনা যাচ্ছিল, ‘সিরাজ, আমাদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়াও। হাত নাড়াও আমাদের দিকে তাকিয়ে। সিরাজ! আস্ত একটা নর্দমার কীট!’

এমনিতেই ব্রিসবেন টেস্ট নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল।

ব্রিসবেন যে অঞ্চলের শহর, সেই কুইন্সল্যান্ড রাজ্যে গত কিছুদিনে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। সে কারণে সিডনি টেস্ট শুরু হওয়ার আগে কুইন্সল্যান্ড সরকার জানিয়ে দেয়, ভারতীয়দের ব্রিসবেনে এলে আবার কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় এসে সিরিজের আগেই একবার ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকা ভারতীয় দল সে প্রস্তাবে রাজি হয়নি। তারা জানিয়ে দিয়েছিল, এভাবে কোয়ারেন্টিন করতে হলে তারা খেলবেই না! ওদিকে কুইন্সল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিয়ম মানতে না পারলে ভারতের ব্রিসবেনে আসার দরকার নেই।

এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটাররা বলতে থাকেন, ব্রিসবেনের গ্যাবায় সাধারণত অস্ট্রেলিয়া হারে না। এই রেকর্ডে ভয়ের কারণেই ভারতীয় দল ব্রিসবেন আসতে চাইছে না। এ নিয়ে দুই বোর্ডের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সিরিজের শেষ টেস্টটি না হওয়ার শঙ্কাও জেগেছিল। কিন্তু সব ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত টেস্টটা কাল ঠিক সময়েই শুরু হয়েছে।

কিন্তু বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে শুরু হওয়া টেস্টের প্রথম দিনেই আবার বিতর্ক এসে বাসা বেঁধেছে! এবার এই বর্ণবাদের অভিযোগ নিয়ে জল কত দূর গড়ায়, সেটিই দেখার।