সুমনে এলোমেলো নাজমুল একাদশের বীর ইরফান

নাজমুল একাদশের মান বঁচিয়েছেন ইরফান শুক্কুর।ছবি: শামসুল হক

গত বিপিএলের ফাইনালের কথা মনে আছে? মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে রাজশাহী রয়্যালসের হয়ে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ৩৫ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ইরফান শুক্কুর। তিনিই গড়ে দিয়েছিলেন আন্দ্রে রাসেল আর মোহাম্মদ নেওয়াজদের দ্রুত রান তোলার মঞ্চ। ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত জিতে শিরোপা ঘরে তুলেছিল রাজশাহীই।

মিরপুরেই আজ চলছে আরও একটি ফাইনাল—বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের। মাহমুদউল্লাহ একাদশের বিপক্ষে সেই ইরাফানই ফিফটি করে মান বাঁচালেন নাজমুল একাদশের। তাঁর ৭৭ বলে ৭৫ রানের ইনিংসে নাজমুল স্কোরবোর্ডে কোনো মতে তুলেছে ১৭৩।

৭৭ বলে ৭৫ রান করলেন ইরফান।
ছবি: শামসুল হক

টুর্নামেন্টের প্রতি ম্যাচেই ব্যর্থ হয়েছে দলগুলোর টপ অর্ডার। আজও নাজমুল সেটির ব্যতিক্রম ঘটাতে পারেনি। কিন্তু মিডল অর্ডারে মুশফিকুর রহিম আর আফিফ হোসেন এত দিন রান পেলেও আজ তাঁরা ছিলেন ব্যর্থ। মাহমুদউল্লাহ একাদশের পেসাররাই আজ মূল সর্বনাশটা করেছেন নাজমুল একাদশের।

রুবেল হোসেন শুরুটা করেন সাইফ হাসানকে আউট করে। চোখের সমস্যা নিয়ে আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার মাঠ ছাড়েন সাইফের বিদায়ের পরই। ইনিংসের পাঁচ ওভারও তখন পেরোয়নি, মাঠে নামতে হয় মুশফিক-নাজমুলদের। দুজন অবশ্য ভালোই খেলছিলেন। মাহমুদউল্লাহদের সুইং বোলার সুমন খানকে ছেড়ে খেলছিলেন মুশফিক। নাজমুলও শুরুতে খেলছিলেন ঝুঁকিহীন ক্রিকেট। ভিত গড়ে বড় রানের পথে এগোনোর চেষ্টা ছিল দুজনেরই।

তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গে ৭০ রানের জুটি গড়েন ইরফান।
ছবি: শামসুল হক

কিন্তু সুমনের এক স্পেলই এলোমেলো হয়ে যায় সবকিছু। ব্যাটিং পাওয়ার-প্লের শেষে এসে ভেতরের দিকে ঢোকা বলে এলবিডব্লু হন মুশফিক। পরের ওভারে এসে নাজমুলদের আরও সর্বনাশ করে দেন সুমন। লেংথ থেকে বেরিয়ে যাওয়া বলে সুমন আউট করেন সৌম্য ও ফর্মে থাকা আফিফকে। চোখের পলকে নাজমুল একাদশ পরিণত হয় ৪৫/৪-এ।

সুযোগ ছিল নাজমুলের নায়ক হওয়ার। কিন্তু স্পিনারদের বিরুদ্ধে দ্রুত কিছু রান বের করতে গিয়ে ফাঁদে পা দেন তিনি। ২২তম ওভারে মিড অন ফিল্ডারকে পরাস্ত করতে চেয়েও পারেননি; আউট হন দলকে ৬৬ রানে রেখে। ইরফানের বীরত্বের শুরুটা সেখান থেকেই। তৌহিদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে যোগ করেন ৭০ রান। তবে জুটিতে মূল ভূমিকাটা ছিল ইরফানেরই। হৃদয় ফিরে যান ২৬ রানে এরপর অবশ্য নাঈম হাসান, নাসুম আহমেদরা ইরফানকে তেমন সঙ্গ দিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ৭৭ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কা মেরে ৭৫ রানে থামেন ইরফান।

সুমনই ৫ উইকেট নিয়ে সর্বনাশ করেছেন নাজমুল একাদশের।
ছবি: শামসুল হক

ফাইনালে নাজমুল একাদশকে অল্প রানে আটকে রাখার বড় কৃতিত্বটা দিতে হবে সুমনকেই। শুরুতেই দ্রুত ৩ উইকেট তুলে নিয়ে তিনি পাল্টে দিয়েছেন ম্যাচের চেহারা। শেষে ইরফানকেও নিজের ইনিংসটি দীর্ঘ করতে দেননি। আরও ২ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় ৫ উইকেট-কীর্তি তাঁর। ১০ ওভারে ২৭ রান দিয়ে ৫ উইকেট—সুমনের বোলিংই বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে মাহমুদউল্লাহর দলের শিরোপা জয়ের পথটা সহজ করে দিয়েছে।

এখন দেখার, মাহমুদউল্লাহ একাদশের ব্যাটসম্যানরা সেই ‘সহজ’ পথ কতটা সহজে পাড়ি দিতে পারে!