সেই কলকাতাই নিল সাকিবকে

আবার কলকাতাতে দেখা যাবে সাকিবকে।
ছবি: টুইটার

তাঁর আইপিএল ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স দিয়ে। ২০১১ থেকে ২০১৭ আইপিএল পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। ছয় মৌসুমে সেখানে দুবার আইপিএল জিতেছেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু ২০১৮ আইপিএলে সে সম্পর্কে ছেদ ঘটে। কলকাতা ছেড়ে দেওয়ার পর সানরাইজার্স হায়দরাবাদ লুফে নেয় তাঁকে। দুই মৌসুম সেখানে খেলার পর গত মৌসুমে ছিলেন না সাকিব। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পরই আবার আইপিএলে দেখা যাবে সাকিবকে। পুরোনো দল কলকাতাই কিনেছে তাঁকে।

আইপিএলের নিলামে আজ সাকিবকে ৩ কোটি ২০ লাখ রুপিতে কিনেছে কলকাতা। তাঁর ভিত্তিমূল্য ছিল ২ কোটি। নিলামে তাঁকে প্রথমে ডাকে কলকাতা। এরপর তাঁকে পাওয়ার চেষ্টা করে পাঞ্জাব কিংস (আগের কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব)। কিছুক্ষণ টানাটানির পর ৩ কোটি ২০ লাখ রুপি দাম ওঠার পর হাল ছেড়ে দেয় পাঞ্জাব।

২০১৬ আইপিএল জয়ের পর সাকিব আল হাসান।
ছবি: টুইটার

২০১৭ সালে সাকিবকে কলকাতা যেভাবে বিদায় দিয়েছিল সেটা অনেকেরই মনঃপূত হয়নি। ছয় বছরের সম্পর্ক শেষে কোনো বিদায় বার্তা দেয়নি ফ্র্যাঞ্চাইজি, কোনো ধন্যবাদও দেয়নি। এরপর নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি হায়দরাবাদের হয়ে কলকাতায় খেলতে গিয়েই বাজিমাত করেছেন। হায়দরাবাদের স্পিন আক্রমণের সঙ্গী হয়ে কলকাতাকে কলকাতার মাঠে হারিয়েছেন। সে ম্যাচের পর কলকাতার সংবাদমাধ্যমই একে দেখেছিল প্রতিশোধ হিসেবে। যে দলের হয়ে ছয় বছর খেলেছেন, তাদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সম্মান না পাওয়ার প্রতিশোধ হিসেবেই সেটাকে দেখিয়েছিল কলকাতার সংবাদমাধ্যম।

মাঝে তিন বছর কেটে গেছে। এর মধ্যে অনেক কিছু বদলে গেছে। এর মধ্যে সাকিব এক বছর খেলেননি আইপিএলে। নিষেধাজ্ঞার কারণে সাকিবের অনুপস্থিতির বছরটিতেই আইপিএল ভারতে হতে পারেনি। করোনাভাইরাস সবাইকে বাধ্য করেছিল দর্শকবিহীন এক আইপিএলে দেখতে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে জৈব সুরক্ষাবলয়ে সেই আইপিএলের পর আবার ভারতে ফিরছে আইপিএল। এমন এক প্রত্যাবর্তনে আরেক প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখল কলকাতা। আজ নিলামে সুযোগ পেয়েই সাকিবকে কিনে নিয়েছে তারা।

সাকিবকে দলে নেওয়ার জন্য কলকাতা ছাড়া শুধু পাঞ্জাবই আগ্রহ দেখিয়েছিল। এতে ২০০৯ আইপিএলের স্মৃতিও ফিরে এসেছিল। সেবার মাশরাফি বিন মুর্তজাকে পেতে মুখোমুখি লড়াইয়ে নেমেছিল কলকাতা ও পাঞ্জাব। ব্যাপারটাকে দুই দলের সহ-স্বত্বাধিকারী নায়িকার লড়াই বলা হয়েছিল। একদিকে কলকাতার জুহি চাওলা, অন্যদিকে পাঞ্জাবের প্রীতি জিনতা। বহুদিন ধরেই জুহিকে আর নিলামে দেখা যায় না। আজও ছিলেন না। প্রীতি জিনতাও সাকিব আল হাসানের দর ৩ কোটি ২০ লাখ রুপি ওঠার পরই হাল ছেড়ে দিয়েছেন। তাই তিন বছর পর কলকাতাতেই ফেরা হলো সাকিবের।

সর্বশেষ যখন কলকাতায় খেলেছিলেন সাকিব।
ছবি: টুইটার

নিলামে অন্য বিদেশি অলরাউন্ডারদের তুলনায় কম মূল্যই উঠেছে সাকিবের। এর পেছনে অবশ্য একটি কারণ খুঁজে পাচ্ছেন ভারতীয় ধারাভাষ্যকার ও ক্রিকেট বিশ্লেষক হার্শা ভোগলে, ‘সাকিব আল হাসানের জন্য ৩.২ কোটি, কলকাতার জন্য দারুণ সংযুক্তি। টুর্নামেন্টের পুরোটা সময় তিনি থাকবেন কি না, এটা নিয়ে অনিশ্চয়তা না থাকলে আরও বেশি মূল্য হতো তাঁর।’

কলকাতা সাকিবের ফেরার খবর জানিয়েছে টানা কয়েকটি টুইট দিয়ে। প্রথমেই টুইট করেছে এভাবে, ‘সাকিব আসছেন কলকাতায়!’ সাকিবকে তারা কতটা ভালো জানে, সেটা জানিয়েছে পরের টুইটে। সেখানে সাকিবের প্রায় ভুলে যাওয়া ডাকনামটা সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছে তারা, ‘আমাদের ময়না ঘরে ফিরে আসছে।’ সাকিবকে দিয়ে তাদের দল গোছানোর কাজটা কতটা এগিয়েছে সেটাও জানিয়েছে তারা পরের টুইটে, ‘আইপিএলের নিলামে প্রথম নাইট নিয়ে নিয়েছি আমরা।’

২০১৪ সালে সর্বশেষ আইপিএল জেতা কলকাতা আশা করছে সাকিবের ফেরায় চ্যাম্পিয়ন-ভাগ্যও ফিরে আসবে তাদের। সাকিবের প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে লিখেছে,

‘২০১২-শিরোপা

২০১৪-শিরোপা

এবার তিন নম্বর শিরোপার জন্য ফিরছেন সাকিব আল হাসান

স্বাগত, ময়না।’

কলকাতায় বিদেশি খেলোয়াড়দের তালিকায় অধিনায়ক এউইন মরগান আছেন। আছেন দুই ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্স, লকি ফার্গুসন আর দুই ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল ও সুনীল নারাইন। তাই প্রত্যাবর্তন হলেও সাকিবের একাদশে জায়গা পাওয়া কঠিনই হবে।