সেই তেওয়াতিয়ায় এবার পিষ্ট ওয়ার্নারের হায়দরাবাদ

তেওয়াতিয়ার ব্যাটে আবার ঝড়।ছবি: আইপিএল

সেদিন ছক্কার ঝড় তুলেছিলেন। আজ ছক্কা কম, চার বেশি। সেদিন সঙ্গে পেয়েছিলেন সঞ্জু স্যামসনকে, আজ পেলেন রিয়ান পরাগকে। কিন্তু প্রশ্ন যখন চাপের মুহূর্তে পাল্টা আক্রমণে দলকে জেতানোর, রাহুল তেওয়াতিয়া রইলেন একই!

গত ২৭ সেপ্টেম্বর কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে ৭ ছক্কায় ৩১ বলে ৫৩ রান করেছিলেন, মূলত শেষ তিন ওভারে ঝড় তুলে সেদিন পাঞ্জাবের ২২৩ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে রাজস্থান রয়্যালসকে রেকর্ডগড়া জয় এনে দিয়েছিলেন তেওয়াতিয়া।

আজ রেকর্ড-টেকর্ড হওয়ার সুযোগ ছিল না, আগে ব্যাট করে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ করেছিল ১৫৮ রান। কিন্তু সেটির জবাবে ৭৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে রাজস্থান। সেখান থেকে দলকে জেতালেন তেওয়াতিয়া ও পরাগ। দুজনের ঝোড়ো দুই ইনিংসে ১ বল হাতে রেখে ডেভিড ওয়ার্নারের হায়দরাবাদকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে রাজস্থান।

তেওয়াতিয়া-পরাগ দুজনেরই ইনিংসে স্ট্রাইক রেট ১৬০-এর ওপর। ২৬ বলে ২ চার ২ ছক্কায় ৪২ রান পরাগের, ২৮ বলে ৪ চার ২ ছক্কায় তেওয়াতিয়ার রান ৪৫। দুজন মিলে ৪৭ বলে অবিচ্ছিন্ন ৮৫ রানের জুটিতে শেষ ২৪ বলে তুলেছেন ৬৪ রান!

৪৭ বলে অবিচ্ছিন্ন ৮৫ রানের জুটি গড়েছেন তেওয়াতিয়া ও পরাগ।
ছবি: আইপিএল

দলে বেন স্টোকস, স্টিভ স্মিথ, জস বাটলার আছেন। সঞ্জু স্যামসনেরও ছক্কা-টক্কা মারায় খ্যাতি আছে। কিন্তু এবারের আইপিএলে দারুণ রোমাঞ্চকর দুই ম্যাচে জিতিয়ে রাজস্থানের নায়ক বনে যাচ্ছেন তেওয়াতিয়া!

১২তম ওভারের শেষ বলে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে সঞ্জু স্যামসন আউট হওয়ার পর যখন ক্রিজে নামেন তেওয়াতিয়া, তখনো রাজস্থানের দরকার ৪৮ বলে ৮০ রান। ক্রিজের অন্যপ্রান্তে ততক্ষণে রিয়ান পরাগও যে খুব একটা থিতু হয়েছেন, তা-ও নয়। তেওয়াতিয়া যখন নামছেন, দশম ওভারের প্রথম বলে রবিন উথাপ্পা আউট হওয়ার পর ক্রিজে নামা পরাগের রান তখন ৭ বলে ৫!

তাঁদের পর আর সেভাবে ব্যাটসম্যান নেই, জফরা আর্চার একটু-আধটু ব্যাট চালাতে পারেন। তেওয়াতিয়া-পরাগ মিলেই তাই দায়িত্বটা তুলে নেন ম্যাচ শেষ করে আসার। কী দারুণভাবেই না সেটি করেছেন দুজন! ১১.৬ থেকে ১৫.৫—প্রথম ২৩ বলে দুজনে তেমন ঝুঁকিই নেননি, মারেননি কোনো চার-ছক্কা। ওই ২৩ বলে তেওয়াতিয়া-পরাগের জুটিতে রান এসেছে মাত্র ২১টি।

জয় নিশ্চিত হওয়ার পর নাচ পরাগের।
ছবি: আইপিএল

১৬তম ওভারের শেষ বলে খলিল আহমেদের শর্ট বলে ৯৭ মিটার লম্বা এক ছক্কা মেরে ‘বাউন্ডারি খরা’ ঘোচান ওই ওভারের তৃতীয় বলেই ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া পরাগ। ওই ওভার শেষে রাজস্থানের দরকার ছিল ২৪ বলে ৫৪ রান। এক ওভার আগেও যে সমীকরণ ছিল—৫ ওভারে দরকার ৬৫ রান।

আগে ব্যাটিং করা সানরাইজার্সের হয়ে মনিশ পান্ডে, কেন উইলিয়ামসন ও প্রিয়ম গার্গ ঝড় তুলে শেষ ৫ ওভারে তুলেছিলেন ৬২ রান। তেওয়াতিয়া-পরাগ ঝড় তুলতে পারলে তাই সমীকরণটা একেবারে অসম্ভব ছিল না। ১৬তম ওভারের শেষ বলে পরাগের ওই ছক্কাই যেন বুঝিয়ে দিল, তেমনই পরিকল্পনা তেওয়াতিয়া-পরাগের। পেছন তাকিয়ে বোঝা যায়, ওই ছক্কাই পূর্বাভাস দিল—ঝড় আসছে! ম্যাচের পর পরাগও জানিয়েছেন, ১৬তম ওভার থেকেই আক্রমণের পরিকল্পনা ছিল তাঁদের।

পরাগ আগের ওভারের শেষ বলে ছক্কা মেরেছেন, তেওয়াতিয়া ১৭তম ওভারের প্রথম বলে সন্দীপ শর্মাকে উড়িয়ে মারলেন লং-অন গ্যালারিতে। ওই ওভারে পরাগের দুটি চার মিলে এল ১৮ রান। সমীকরণ ১৮ বলে দরকার ৩৬ রান। কিন্তু তখনো আগের ৩ ওভারে ১১ রানে ২ উইকেট নেওয়া রশিদ খানের এক ওভার বাকি, এক ওভার বাকি ৩ ওভারে ২৫ রানে ২ উইকেট নেওয়া খলিল আহমেদেরও। হায়দরাবাদের হয়ে উইকেট পেয়েছেন শুধু এই দুই বোলারই।

হায়দরাবাদ অধিনায়ক ওয়ার্নার ১৮তম ওভারটা দিলেন রশিদকেই। কিন্তু ঝড়ের মুডে থাকা তেওয়াতিয়া যে পাত্তাই দিলেন না আফগান লেগস্পিনারকে! টানা তিন বলে চার মারলেন তেওয়াতিয়া, ওই ওভারে এল ১৪ রান। টানা তিন চার মারার পর পঞ্চম বলে অবশ্য ভাগ্যও সঙ্গ দিয়েছে তেওয়াতিয়াকে, উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে তো বেঁচেছেনই, সেই সঙ্গে তাঁকে স্টাম্পিংয়ের সুযোগও হারিয়েছেন হায়দরাবাদ উইকেটকিপার বাটলার।

১৯তম ওভারে আবার তেওয়াতিয়ার এক চার ও এক ছক্কা মিলে এল ১৪ রান। শেষ ওভারে তাই সমীকরণটা অনেক সহজ হয়ে যায়—৬ বলে দরকার ৮ রান। খলিল আহমেদের করা প্রথম চার বলেই এল ৬ রান। পঞ্চম বলে স্ট্রাইকে থাকা পরাগকে অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল টস দেন খলিল, ওই মুহূর্তে ওসব ডেলিভারি কি আর পাত্তা পাওয়ার মতো! ইনসাইড-আউটে কাভার বাউণ্ডারির ওপর দিয়ে বিশাল ছক্কায় জয় নিশ্চিত করেন পরাগ।

এর আগে ডেভিড ওয়ার্নারের ৩৮ বলে ৪৮, মনিশ পান্ডের ৪৪ বলে ৫৪ ও উইলিয়ামসনের ১২ বলে ২২ রানের সৌজন্যে ১৫৮ রান করে হায়দরাবাদ। জবাবে স্টোকস (৫), বাটলার (১৬), স্মিথ (৫) হলেন ব্যর্থ, ভালো করতে পারেননি স্যামসন (২৬) ও উথাপ্পাও (১৮)। অবশ্য তাঁরা ভালো করতে পারেননি বলেই তো তেওয়াতিয়া-পরাগের ইনিংস দুটি এত রোমাঞ্চ ছড়াল!