সেই ‘৩৬’ কোহলির কাছে শিক্ষা, মনের ক্ষত নয়

অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩৬ রানে অলআউট হওয়ার দুঃস্বপ্ন ভুলে গেছেন কোহলিরা।ছবি: বিসিসিআই

প্রথম টেস্টে জো রুটের ব্যাটে উজ্জ্বল ইংল্যান্ড ধরাশায়ী করেছে ভারতকে। দ্বিতীয় টেস্টে আবার ভারত দিয়েছে পাল্টা জবাব। চার টেস্টের সিরিজ দুই টেস্ট শেষে দারুণ সমতায়। ১-১ সমতায় থেকেই আজ আহমেদাবাদে তৃতীয় টেস্টে নামছে বিরাট কোহলির ভারত ও ইংল্যান্ড।

দারুণ একটা উপলক্ষও বটে ম্যাচটা। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিমন্ত্রণ করে এনে যে স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, নিজের রাজ্য গুজরাটে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম বানানোর যে স্বপ্ন ছিল মোদির, সেই স্টেডিয়ামেই আজ প্রথমবারের মতো খেলতে নামছে ভারত। আহমেদাবাদের সরদার প্যাটেল স্টেডিয়ামে এই টেস্ট আবার দিবারাত্রির।

কিন্তু দিবারাত্রির টেস্ট বলেই দারুণ এই উপলক্ষের মধ্যে বিস্বাদের একটা স্মৃতি ফিরে আসছে কোহলিদের। সর্বশেষ যেবার দিবারাত্রির টেস্ট খেলেছিল ভারত, সেটি যে তাদের টেস্ট ইতিহাসেরই এক কলঙ্ক উপহার দিয়েছে! অ্যাডিলেডে গত ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইনিংসে ৩৬ রানে অলআউট হয়েছিল ভারত। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আজকের ম্যাচের আগে কোহলি বলছেন, ওই ‘৩৬’ দুঃস্বপ্ন তাঁদের কাছে কোনো ক্ষত নয়, বরং এটিকে অভিজ্ঞতা হিসেবেই দেখছেন ভারত অধিনায়ক।

কোহলির জন্য ব্যক্তিগতভাবে অ্যাডিলেডের সেই টেস্ট ছিল বিশেষ এক উপলক্ষ। অস্ট্রেলিয়ায় ভারত চার টেস্টের সিরিজ খেলেছে, অ্যাডিলেড ছিল সিরিজের প্রথম টেস্ট। ওই টেস্ট খেলেই ভারতে ফিরে আসবেন কোহলি, সন্তানসম্ভবা স্ত্রী আনুশকা শর্মার পাশে থাকবেন, প্রথম সন্তানের জন্মের মুহূর্তটার সাক্ষী হবেন—এমনটাই ছিল পরিকল্পনা।

অনুশীলনে ভারত দল।
ছবি: টুইটার

সবকিছু পরিকল্পনামতোই হয়েছে। কোহলি দেশে ফিরে প্রথম সন্তানের জন্মের সময় স্ত্রীর পাশেই ছিলেন। কিন্তু দেশে ফেরার আগে ক্রিকেট মাঠ তাঁকে দিয়েছে তেতো স্বাদ।
অ্যাডিলেডে প্রথম ইনিংস শেষে অবশ্য ভারতই এগিয়ে ছিল। ভারতের ২৪৪ রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়া করেছিল ১৯১ রান। কিন্তু তৃতীয় দিন বিকালে প্রথম সেশনেই ধস! ভারত অলআউট ৩৬ রানে! নিজেদের ইতিহাসে এক ইনিংসে সবচেয়ে কম রানের এই ইনিংসের পথে ভারতের কোনো ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্ক পেরোতে পারেননি। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৯০ রানের লক্ষ্য পাওয়া অস্ট্রেলিয়া টেস্টটা শেষ পর্যন্ত জেতে ৮ উইকেটে।

কোহলি সেই টেস্টের পর ফিরে এলেও এরপর তাঁকে ছাড়াই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভারত। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টানা দ্বিতীয় সিরিজ জিতে দেশে ফিরেছে। এখন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজেও প্রথম টেস্টে হারের পর দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তৃতীয় টেস্টটা দিবারাত্রির হওয়াতেই ভারতের ‘৩৬’ লজ্জা ফিরে ফিরে আসছে।

অবশ্য শুধু ভারতই কেন, ইংল্যান্ডের সর্বশেষ দিবারাত্রির টেস্টও তো লজ্জার এক ইনিংসই মনে করিয়ে দেয় রুটদের। ২০১৮ সালের মার্চে অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসেই ৫৮ রানে অলআউট হয়েছিল ইংলিশরা। আহমেদাবাদ টেস্টের আগে স্বাভাবিকভাবেই তাই সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন হয়েছে দুই দলের সর্বশেষ দিবারাত্রির টেস্টের স্মৃতি নিয়ে।

কোহলি অবশ্য এসব দুঃসহ স্মৃতিকে পাত্তা দিচ্ছেন না, ‘দুটি ইনিংসই দারুণ দুটি দলের জন্য অদ্ভুত দুই অভিজ্ঞতা। আপনি যদি ইংল্যান্ড দলকে একই প্রশ্ন করেন যে ওরা ভাবে কি না, ওরা আরেকবার এভাবে ৫০ রানে অলআউট হয়ে যাবে, ওদের উত্তর হবে “না”। কারণ আমরা বুঝি, কোনো কোনো দিন এমন হয় যে ঘটনাগুলো তাদের নিজেদের মতো করে ঘটতে থাকে। আপনি যত যা-ই করার চেষ্টা করুন না কেন, সবকিছু আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকবে, মনে হবে কোনো কিছুই ঠিক হচ্ছে না। অ্যাডিলেডে আমাদের সঙ্গে ঠিক এমনটাই হয়েছিল।’

অ্যাডিলেডের সেই ইনিংস তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না কোহলি, ‘ওই ৪৫ মিনিটের বাজে ক্রিকেট বাদ দিলে ওই টেস্টটাতেও আমরা দাপট দেখিয়েছিলাম। গোলাপি বলে খেলার ধরনে আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে। এমনকি অস্ট্রেলিয়াতে, যেখানে পিচ ওদের বোলারদের সাহায্য করে, সেখানেও ওরা ম্যাচজুড়ে চাপে ছিল।’

গোলাপি বলে কোহলির ব্যাটিং অনুশীলন।
ছবি: টুইটার

সিরিজের পরের তিন টেস্টে অজিঙ্কা রাহানের অধীনে দল দারুণ ক্রিকেট খেলায় অ্যাডিলেডের ওই ইনিংস ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীদের মন থেকে হয়তো মুছে গেছে। কোহলিও বলছেন, ‘৩৬’ দুঃস্বপ্নকে আকড়ে ধরে পড়ে না থেকে সেটি থেকে তাঁরা শিখেছেন, ‘ড্রেসিংরুমে আমরা সবকিছু যত খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করি, বাইরে থেকে সবকিছু সেভাবে বোঝা যায় না। তবে সেদিন কী হয়েছিল, সেটা আমরা বুঝতে পেরেছি। সেটিকে একপাশে সরিয়ে দেওয়া দরকার ছিল, সেটা মেলবোর্নে (অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট) দল দারুণভাবেই করেছে। এগুলো আসলে শিক্ষা, মনের ক্ষত নয়। মানসিক বাধা নয়। এগুলো এমন কিছু, যেটা থেকে আপনি শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যান।’

অস্ট্রেলিয়ায় ভারত সিরিজটা হেরে গেলে কি এত সহজে ‘৩৬’ দুঃস্বপ্নটা এড়িয়ে যেতে পারতেন কোহলিরা?