সেঞ্চুরি ছেড়ে এখন যেন শূন্যের সঙ্গে মিতালি কোহলির

শূন্য রানে আউট হয়ে ফিরছেন কোহলিছবি: এএফপি

অলিম্পিকের সময়ে টোকিওতে একের পর এক অ্যাথলেট সোনা জিতছেন। কিন্তু ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি আপনাকে বলবেন, সোনালি সবকিছুই ভালো নয়। ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টের দ্বিতীয় দিনে যে আজ ‘গোল্ডেন ডাক’ নিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন কোহলি!

কোহলি আর শূন্য নতুন কিছু নয়। অন্তত গত কিছুদিনে টেস্টে কোহলির ব্যাটে শূন্য দেখে হয়তো অভ্যস্তই হয়ে গেছেন ভারতের সমর্থকেরা। একসময়ে যে কোহলির ক্রিজে নামা মানে ছিল সেঞ্চুরির সম্ভাবনা, সেই তাঁর যে এখন শূন্যের সঙ্গেই বেশি সখ্য! আজকের ইনিংস নিয়ে টেস্টে সর্বশেষ ছয় ইনিংসে তৃতীয়বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন কোহলি! যেখানে সেঞ্চুরির দেখা তাঁর ব্যাটে সর্বশেষ মিলেছে পৌনে দুই বছর আগে!

কোহলির শূন্য রানে আরেকবার আউট হওয়ার দিনে ট্রেন্ট ব্রিজের দখল নিয়েছে বৃষ্টি। দুবার বৃষ্টিতে খেলা থেমেছে, শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফার বৃষ্টি আর থামেইনি। পুরো দিনে খেলা হতে পেরেছে মাত্র ২১২ বল! ৪ উইকেটে ১২৫ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে ভারত।

ভারতের হয়ে ক্রিজে আছেন ওপেনার লোকেশ রাহুল ও উইকেটকিপার ঋষভ পন্ত। দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা রাহুল ফিফটি করেছেন, ১৫১ বলে ৫৭ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন। পন্ত ৮ বলে ৭ রান নিয়ে অপরাজিত।

দিনের সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় অবশ্য কোহলির শূন্য রানে আউট হওয়াই! জেমস অ্যান্ডারসনের যে বলটাতে কোহলি আউট হয়েছেন, সেটি অবশ্য এককথায় চোখধাঁধানো। কোহলি খেলেছিলেন ইনসুইং মনে করে, তবে অ্যান্ডারসনের বলটা ধরে রেখেছিল লাইন। তাতেই কট-বিহাইন্ড হয়ে শূন্যতে ফিরতে হয়েছে কোহলিকে। অ্যান্ডারসনের উল্লাসই অনেক কিছু বলে দিচ্ছিল। ছুটতে থাকা ইংল্যান্ড পেসারকে যেন আটকাতেই পারছিলেন না সতীর্থরা!

যেন ফিরে এসেছে ২০১৪ সালের ভূত! সেবার ইংল্যান্ড সফরে অ্যান্ডারসনের বলেই বারবার ধরা পড়েছিলেন কোহলি। মাঝে ২০১৮ সালে ইংল্যান্ড সফরে কোহলি বিধ্বংসী ব্যাটিং করেছিলেন, সেবার অ্যান্ডারসনের বলেও আউট হননি। কিন্তু এবার সফরের প্রথম টেস্টে মুখোমুখি প্রথম বলেই আউট!

অবশ্য ২০১৮ সালের সফরেও টেস্ট সিরিজের শেষ ইনিংসে গোল্ডেন ডাক নিয়ে ফিরেছিলেন কোহলি। তাতে ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোহলির সর্বশেষ দুই ইনিংস দাঁড়াল ০ (১ বল), ০ (১ বল)!

কোহলিকে ফিরিয়ে উচ্ছ্বসিত অ্যান্ডারসন
ছবি: এএফপি

তবে ইংল্যান্ডের মাটিই নয়, সব মিলিয়েই কোহলির শূন্য রানে আউট হওয়ার উদাহরণ বেড়েই চলেছে। এ বছরের শুরুতে নিজেদের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে চার টেস্টে দুবার কোহলি আউট হয়েছেন শূন্য রানে। এরপর আজকের শূন্য নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কোহলির শূন্যের সংখ্যা দাঁড়াল ২৯-এ। টেস্টে ১৩ বার, ওয়ানডেতে ১৩ বার, আর টি-টোয়েন্টিতে ৩ বার।

সব মিলিয়ে ব্যাট হাতে কোহলির ফর্মেই যেন ভাটা পড়েছে। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সময়ে টেস্টে কোহলির গড় মাত্র ২৩.০০। এ সময়ে ১৫ ইনিংসে রান করেছেন ৩৪৫। আর সেঞ্চুরি? একসময়ে কোহলির হাতের মোয়া হয়ে থাকা ব্যাপারটাই এখন যেন নাগালের বাইরে। ২০১৯ সালের নভেম্বরে কলকাতায় বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টের পর আর লাল বলে সেঞ্চুরি পাননি ভারত অধিনায়ক।

আজ কোহলিকে ফেরানোর আগের বলে চেতেশ্বর পুজারাকে ফেরানো অ্যান্ডারসন দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সামনে। ৮ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট নিয়ে দারুণভাবে ম্যাচে ফিরেছিল ইংল্যান্ড, তবে এরপর বাগড়া বাধিয়েছে বৃষ্টি। প্রথম দফায় আলোকস্বল্পতার পর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়, চা–বিরতি এগিয়ে আনা হয়। মাঝে বৃষ্টি এড়িয়ে খেলা শুরু হলেও মাত্র দুই বল হতেই আবার বৃষ্টি। এরপর আর খেলাই হয়নি।

লোকেশ রাহুল ফিফটি করে অপরাজিত আছেন
ছবি: এএফপি

অ্যান্ডারসনের ঝড়ে কোহলিরা ফেরার আগে অবশ্য প্রথম উইকেটের দেখা পেতে ইংল্যান্ডকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল দিনের ২৫তম ওভার পর্যন্ত। বোলিং-সহায়ক কন্ডিশনে অফ স্টাম্পের বাইরের লাইন ধরে বল করেছেন ইংল্যান্ড পেসাররা, তবে রোহিত শর্মা বা রাহুলকে টলাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত মধ্যাহ্নভোজন বিরতির ঠিক আগে ওলি রবিনসনের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছেন রোহিত, ফিরেছেন ১০৭ বলে ৩৬ রান করে।

বিরতির পর পুজারা একবার বেঁচেছেন রিভিউ নিয়ে, তবে শিগগিরই ফিরতে হয়েছে তাঁকে। শুরুতে ভেতরের দিকে ঢুকতে থাকা অ্যান্ডারসনের বলটা শেষ মুহূর্তে দিক পরিবর্তন করছে, ছুঁয়ে গেছে পুজারার ব্যাটের কানা। পরের বলেই কোহলির উইকেটে আরেক দফা উজ্জীবিত হয়েছে ট্রেন্ট ব্রিজ। এরপর রাহুলের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝির পর জনি বেয়ারস্টোর সরাসরি থ্রোতে যখন অজিঙ্কা রাহানেও রানআউট হলেন, হুট করেই চাপে পড়ে যায় ভারত।

অ্যান্ডারসনের বলেই এরপর রাহুলের একটা ক্যাচ ডম সিবলি না ফেললে ভারতের অবস্থা আরও এলোমেলোই হতো। রাহুল অবশ্য এর আগেই পেয়েছেন ফিফটি। প্রায় দুই বছর পর টেস্ট দলে ফেরা এই ওপেনার ছিলেন দারুণ সতর্ক, তবে সুযোগ পেলেই খেলেছেন শট। ৫৭ রানে অপরাজিত থাকা পর্যন্ত ইনিংসে মেরেছেন ৯টি চার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংসঃ ৬৫.৪ ওভারে ১৮৩
ভারত ১ম ইনিংসঃ ৪৬.২ ওভারে ১২৫/৪ (রোহিত ৩৬, রাহুল ৫৭*, পুজারা ৪, রাহানে ৫, পন্ত ৭*; অ্যান্ডারসন ২/১৫, ব্রড ০/৪৫, রবিনসন ১/৩২, কারেন ০/২৫)