সেঞ্চুরির এক দিন

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জয় দিয়ে শুরু করা বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লজ্জাজনক হার নিয়ে তার উচ্চাভিলাষী বিশ্বকাপ মিশন শেষ করায় আমি অসম্মানিত, অপমানিত এবং খুবই দুঃখিত বোধ করেছি। 

তাই বলে চলমান দ্বাদশ বিশ্বকাপ ক্রিকেট থেকে ‘অভিমানে’ মুখ ফিরিয়ে নিইনি। আমার ক্রিকেট সেন্স দিয়ে আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম, বাংলাদেশ এখনো বিশ্বকাপের সেমিতে খেলার যোগ্য দল হয়ে ওঠেনি। 

তারপরও দলকে উজ্জীবিত করার জন্য আমি আমার কলামে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সমালোচনা না করে অকাতরে তাদের প্রশংসাই করেছিলাম।

আবারও প্রমাণিত হলো, বেশি বাড়লে অভাব বাড়ে। প্রশংসায়, মিষ্টি কথায় চিড়া ভেজে না।

মাঠের খেলা মাঠেই খেলতে হয়। 

আমি পরশুর দুটো খেলাই দারুণ উপভোগ করেছি। গুরুত্বহীন শুধু এই বিচারে যে এই খেলা দুটোর ফল যা–ই হোক না কেন, তাতে কারও সেমির আসন টলত না। তবে হার–জিতের কারণে অলরেডি সেমিতে পৌঁছে যাওয়া দলগুলোর মধ্যকার অবস্থান বদলে যেতে পারত এবং পেরেছেও। 

অপেক্ষাকৃত দুর্বল নিউজিল্যান্ডকে সঙ্গোপনে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পেতে চেয়েছে অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্ডিয়া—এই দুই দলই। 

ফলে এই দুটি শীর্ষ দলের ভেতরে একটা গোপন লড়াই চলছিল। সেই লড়াইটাই ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ।

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ইন্ডিয়া ছিল ফেবারিট এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ফেবারিট ছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ক্রিকেট যে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা, সেই প্রবাদটাকে পুনর্জীবন দান করার জন্যই যেন পরশু দক্ষিণ আফ্রিকা অস্ট্রেলিয়ার উড়ন্ত জয়রথকে ধুলায় নামিয়ে এনে, দেশে ফেরার আগে ক্রিকেট বিশ্বকে এই বার্তাটাই দিয়ে গেল, আমরা বিশ্বকাপ জয় করার জন্য ক্রিকেট খেলি না। আমরা খেলার জন্য খেলি। 

শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটকে রাঙিয়ে দিয়েই গেল বটে। আমরা যা পারিনি, ওরা তা পারল। অভিনন্দন নেলসন ম্যান্ডেলা। কপাল কিছুটা হলেও পুড়ল অস্ট্রেলিয়ার। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকাটা আর হলো না তার।

ম্যান্ডেলার দেশটির নিজেদের অবস্থানের উন্নতিও হলো। পয়েন্ট তালিকায় বাংলাদেশকে এক ধাপ নিচে নামিয়ে দিয়ে সে উঠে গেল সপ্তম স্থানে। মনে হলো তারা যেন সূচনাপর্বে তাদের পরাজয়ের মধুর বদলা নিয়েছে। 

অন্য ম্যাচে জয়ী ইন্ডিয়াকেও অভিনন্দন জানাতে হয়। অস্ট্রেলিয়ার মতো ইন্ডিয়াও যদি গতকাল শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে বসত, তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের ফসল সে তার ঘরে তুলতে পারত না। 

পরশু শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে খুব সহজ বিজয় পেয়েছে ইন্ডিয়া। সেই বিজয়ের নায়ক যথারীতি রোহিত শর্মা। একই বিশ্বকাপে পঞ্চমবারের মতো সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ‘বাংলাদেশের বিশ্বকাপ’ সাকিব আল হাসানের সর্বোচ্চ (৬০৬) রানের রেকর্ড ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভেঙে দিলেন রোহিত শর্মা। বিশ্বকাপে ৫ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়লেন। ১০৩ রানে তিনি যে লোপ্পা ক্যাচ তুলে দিলেন মিড উইকেটে, সেখানে বোলার বা ফিল্ডারের কোনো কৃতিত্ব ছিল না। 

দর্শক গ্যালারিতে ওর উল্লসিত স্ত্রী ও নির্বিকার রাজকন্যার সানন্দ উপস্থিতিতে রোহিতের ধ্যানভঙ্গ হয়েছিল বলেই আমার মনে হয়।

এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি থাকার পরও রোহিত শর্মাকে যারা আন্ডার এস্টিমেট করত, এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে রোহিত শর্মা তাদের লজ্জায় ফেলছেন। 

পরশু ছিল সেঞ্চুরি দিবস। পরশু সেঞ্চুরি হয়েছে মোট পাঁচটি। ইন্ডিয়ার পক্ষে দুটি। শ্রীলঙ্কার পক্ষে একটি। দক্ষিণ আফ্রিকার এবং অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে
একটি করে।

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রানের মালিক প্রতিটি ম্যাচে যেভাবে বদল হচ্ছে, তাতে শচীন টেন্ডুলকার ও ম্যাথু হেইডেনের রেকর্ড ভাঙল বলে। 

রোহিত শর্মা এবং ডেভিড ওয়ার্নার ৭০০ রানের দেয়াল টপকে ৮০০ রানের ঘরে প্রবেশ করলেও অবাক হব না। আমি প্রস্তুত। আপনি?