সৌম্য যখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন...

ঢাকা টেস্টের আগে অনুশীলনে সৌম্যর সঙ্গে আলাপে কোচ রাসেল ডমিঙ্গো।ছবি: শামসুল হক

বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার’ হিসেবে সাধারণত সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, কিংবা মুমিনুল হকদের নাম আসবে। কিন্তু আজ যদি মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কেউ জাতীয় দলের অনুশীলন দেখেন, তাহলে মনে প্রশ্ন আসতে পারে, সৌম্য সরকারই কি দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার?

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট দলে ছিলেন না সৌম্য। সাকিবের চোটের কারণে হুট করেই সিরিজের শেষ টেস্টে দলে এসেছেন তিনি। অথচ এই সৌম্য সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন সেই ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে। শেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। লাল বল চোখেই দেখেছেন এক বছর আগে, সেই সৌম্যরই ঢাকা টেস্টে খেলার সম্ভাবনা প্রবলই।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ছিলেন তিনি। তাঁকে টিম ম্যানেজমেন্ট সাদা বলের ক্রিকেটার হিসেবেই দেখেছে। টেস্টে খেলার পরিকল্পনা ছিল না এই সেদিন পর্যন্তও। তাঁকে ৭ নম্বরে নেমে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ের জন্যই তৈরি করা হচ্ছিল। এখন টেস্ট দলে এসেছেন। তিনি যদি ঢাকা টেস্টে খেলেন, তাহলে কয়েকটা নেট সেশন করেই তিনি খেলে ফেলবেন টেস্ট!

এত অল্প সময়ের মধ্যে কোনো ক্রিকেটারের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা সম্ভব কি না, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু জাতীয় দলের কোচিং স্টাফদের চেষ্টার তারিফ করতেই হয়।

সৌম্যকে টেস্ট খেলতে হতে পারে সঠিক প্রস্তুতি ছাড়াই।
ছবি: শামসুল হক

বাস্তবে এক সেশন নেটে ব্যাটিং করেই টেস্টের জন্য প্রস্তুত হওয়া সম্ভব না হলেও জাতীয় দলের কোচদের চেষ্টার তারিফ করতেই হয়। প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোই যেমন শুরু থেকেই গভীর মনোযোগে দেখছিলেন সৌম্যর ব্যাটিং। টুকটাক পরামর্শ দিচ্ছিলেন। পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসনেরও আগ্রহের শেষ নেই। ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুকের চোখও সৌম্যর ব্যাটিংয়ে। এক পাশে তামিম, আরেক পাশে মুমিনুল ব্যাটিং করছেন। তাঁদের নিয়ে আগ্রহ কিন্তু তেমন দেখা গেল না। কোচরা সৌম্যর ব্যাটিং শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। সৌম্য নেট ছাড়ার আগে কোচিং স্টাফের কেউই নেট ছাড়লেন না। এরপর ইনডোর থেকে ড্রেসিং রুম পর্যন্ত রাস্তাটা সৌম্যর সঙ্গে কথা বলতে বলতে গেলেন ডমিঙ্গো।

সৌম্যর জন্য অবশ্য এসব নতুন কিছু না। অনেকবারই মূল দলে না থেকে হুট করে ডাক পাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের মূল দলে ছিলেন না সৌম্য। চোটের কারণে টুর্নামেন্টের মাঝপথে সৌম্যকে যেতে হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এক বছর পর নিউজিল্যান্ড সফরে সাকিব খেলতে পারেননি চোটের কারণে। সেখানেও টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন অপ্রত্যাশিতভাবে। হ্যামিল্টন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে খেলেছেন ১৪৯ রানের দারুণ এক ইনিংস।

এবারও গল্পটা প্রায় একই। সাকিব নেই। চোটের কারণে ছিটকে গেছেন টেস্ট ওপেনার সাদমান ইসলাম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এক টেস্টে শূন্যস্থান পূরণের জন্য সৌম্যকে ডাকতে হলো টিম ম্যানেজমেন্টের। অথচ টেস্ট দলে কিন্তু ওপেনার হিসেবে ছিলেন সাইফ হাসান। সেই ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে টেস্ট দলের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন সাইফ। খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে। সাদমান চোটে পড়লে প্রক্রিয়া অনুযায়ী সুযোগটা পাওয়ার কথা সাইফের। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া এখন গেল কোথায়!