সৌম্যর নতুন শুরুতে পুরোনো ছন্দের আশা

আবারও ব্যাট হাতে ফিরতে পেরে সৌম্য সরকারে মুখে তৃপ্তির হাসি। ছবি: প্রথম আলো
আবারও ব্যাট হাতে ফিরতে পেরে সৌম্য সরকারে মুখে তৃপ্তির হাসি। ছবি: প্রথম আলো
>অনেকে অনুশীলন শুরু করেছেন ঈদের আগেই। সৌম্য সরকার মাঠে ফিরেছেন ঈদের পর। সাড়ে চার মাসের বিরতির পর বাঁহাতি ওপেনার কাল শুরু করেছেন ব্যাটিং অনুশীলন।

জায়গাটা সৌম্য সরকারের খুবই পছন্দ। সাতক্ষীরা গেলে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ছুটে যান শহর থেকে ২১ কিলোমিটার দূরের সে জায়গায়। বর্ষায় উপচে পড়া জলে এখানে মাছের ঘেরগুলো যেন রূপ নেয় সমুদ্রে। গোধূলির সময়টাতে প্রকৃতি পায় অন্য রূপ। প্রকৃতির সেই রূপ দেখাতেই কিছুদিন আগে স্ত্রী প্রিয়ন্তি দেবনাথকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন সৌম্য।

কিন্তু অনেক দিন পর জায়গাটাতে গিয়ে হতাশই হতে হয়েছে সৌম্যকে। আগের সৌন্দর্যটা আর নেই। এবড়োখেবড়ো রাস্তা, ঘেরগুলো খণ্ডবিখণ্ড! সৌম্য ভাবেন, সময়ের স্রোতে সবকিছু বুঝি এভাবেই বদলায়। অবশ্য গত পাঁচ মাসে করোনাধাক্কায় পৃথিবীটাই কি কম বদলেছে! বদলে গেছে ক্রিকেটও।

সৌম্যর কাছে এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, সেই ক্রিকেটেই কতটা ভালোভাবে ফেরা যায়। ফেরার কাজটা শুরুও করেছেন। কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ইনডোরের নেটে সাড়ে চার মাস পর ব্যাটিংয়ে ফিরেছেন। লম্বা বিরতির পর ব্যাটিংয়ে ফেরার চেয়ে বাঁহাতি ওপেনারের কাছে বেশি রোমাঞ্চকর মনে হয়েছে ক্রিকেট সরঞ্জামাদির ব্যাগ গোছানোটা, ‘অনুশীলনের চেয়ে রোমাঞ্চকর ছিল আগের দিন ব্যাগ গোছানো। কত দিন পর নিজের কাজটা করতে পারছি-এই অনুভূতি অন্য রকম।’

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম থেকে সৌম্যর ফ্ল্যাট ঢিল ছোড়া দূরত্বে। চাইলে তিনি ঈদের আগেই যোগ দিতে পারতেন ব্যক্তিগত অনুশীলনে। কেন সেটা করেননি, তার ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন সৌম্য, ‘ছুটিতে সাতক্ষীরায় ছিলাম। ঈদের আগে ভাবলাম, এখন অনুশীলন শুরু করলে তো কদিন করেই বন্ধ হয়ে যাবে। ভাবলাম ঈদের পর একেবারে গুছিয়ে আসি। আর আগে ছিলাম একা। এখন ঢাকায় ফিরলে স্ত্রীকেও সঙ্গে আসতে হয়। চাইলেই হুট করে আসা যায় না।’

করোনায় অপ্রত্যাশিত বিরতি শুরুর কিছুদিন আগেই জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন সৌম্য। পৃথিবীতে করোনাভাইরাস নামের এই অদৃশ্য শত্রু হানা না দিলে এত দিনে মধুচন্দ্র্রিমাও সেরে ফেলতে পারতেন সৌম্য-প্রিয়ন্তি। সেটি সম্ভব না হলেও বিরতিটা অন্যভাবে ধরা দিয়েছে তাঁদের কাছে। নিজেদের চেনাজানার ভালো সুযোগ হয়েছে, ক্রিকেটীয় ব্যস্ততা থাকলে যেটি সম্ভব হতো না। সৌম্য অবশ্য বিষয়টি দুভাবেই দেখছেন, ‘খেলায় ব্যস্ত থাকলে হয়তো সেভাবে সময় দেওয়া হতো না। এখন যেটা দেওয়া গেছে। আবার উল্টো দিকও আছে। ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেলে ও ভাবতে পারে আগে তো অনেক সময় দিত, এখন দেয় না! তবে ভালোটাই বেশি। বিয়ের পর তাকে ভালোভাবে সময় দিতে পেরেছি। একে অপরকে জানাশোনার সুযোগ হয়েছে।’

ব্যক্তিগত জীবনে করোনার এ উপকারটুকু বাদ দিলে বিরতিটাকে কিছুতেই ইতিবাচকভাবে নিতে পারছেন না সৌম্য, ‘মাঠের মানুষ মাঠে না থাকতে পারলে কীভাবে ভালো লাগে! একজন সাংবাদিক যদি সংবাদ লিখতে না পারেন, তাঁর কেমন লাগবে? যার যেটা কাজ, সেটা করতে না পারলে ভালো লাগবে না। বসে থাকা আমার জন্য খুবই কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা। বিরতির আগে খুব ভালো ছন্দেও ছিলাম।’

করোনায় সব থেমে যাওয়ার আগে মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে দারুণ ছন্দে ছিলেন সৌম্য। মিরপুরে দুটি ম্যাচেই ছিলেন অপরাজিত। সিরিজের প্রথম ম্যাচে অপরাজিত ৬২ রান করে হন ম্যাচসেরা। কিন্তু করোনা দুর্যোগ সবই থামিয়ে দেয় হঠাৎ করে। তবে এখন আবার যেখানে থেমেছিলেন, শুরুটা সেখান থেকেই করতে চান সৌম্য, ‘ছন্দে থাকা অবস্থায় থেমে যাওয়া সব সময় কষ্টদায়ক। এখনো খেলা শুরু হয়নি। চেষ্টা করব যেখানে থেমেছি, সেখান থেকেই শুরু করতে। নতুন শুরুটা ভালো হোক, এটাই আশা।’