সৌরভের চোখে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে যেখানে কোহলিরা এগিয়ে

বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী ও ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলিফাইল ছবি: এএফপি

জীবন সৌরভকে অনেক কিছুই শিখিয়েছে। তিনি উত্থান যেমন দেখেছেন, দেখেছেন খারাপ সময়। ১৯ বছর বয়সে ভারতীয় ক্রিকেট দলে অভিষেক হওয়ার পর একটা ম্যাচ খেলেই হারিয়ে যেতে বসেছিলেন। তাঁর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় সেটি হতে দেয়নি। চার বছর পর জাতীয় দলে ফিরেই নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন নিজেকে।

অভিষেক হওয়ার আট বছরের মাথায় হয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে যখন সাফল্যের শিখরে, তখনই আবার ঝোড়ো হাওয়ার তোড়ে এলোমেলো হয়েছিলেন। অধিনায়কত্ব হারিয়েছিলেন, দল থেকেও বাদ পড়ে গিয়েছিলেন। প্রত্যাবর্তন করেছেন রাজকীয় ঢঙে। ক্রিকেট ছেড়েছেনও রাজার মতোই। নিজেকে তুলে নিয়ে গেছেন কিংবদন্তির পর্যায়ে। জীবনটা আসলে কেমন, সেটি সৌরভ ছাড়া ভালো বলতে পারবেন আর কেই–বা!

সৌরভের জীবনদর্শন নিয়ে এত কথা কেন? ভারতীয় গণমাধ্যমে আইপিএলের জৈব সুরক্ষাবলয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সৌরভ নিজেই বনে গেছেন ‘দার্শনিক’। সে সাক্ষাৎকারেই আবার ইংলিশ ও অস্ট্রেলিয়ানদের চেয়ে ভারতীয়দের একটা জায়গায় এগিয়ে থাকার কথা বললেন ভারতের কিংবদন্তি অধিনায়ক। কোন জায়গায়? জৈব সুরক্ষাবলয়ে থাকার সময়ে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মার মতো ভারতীয় ক্রিকেটাররা অনেক এগিয়ে।

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি এখন সৌরভ গাঙ্গুলী। মাঝেমধ্যে তিনি হয়তো ১৯৯২ সালের শুরুর দিকেই সেই দিনগুলোর দিকে ফিরে তাকান। যখন তিনি লড়াই করছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলে পায়ের নিচে একটু শক্ত মাটি পাওয়ার আশায়। কিংবা তাঁর খুব করে মনে পড়ে ১৯৯৬ সালের জুন মাসের কথা। লর্ডসে পরদিন টেস্ট, তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে টেস্ট অভিষেকের খবর। তিনি তখনো জানেন না, কী দারুণ সাফল্য অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য। ক্যারিয়ারের প্রথম দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করে তিনি স্থায়ী হয়েছিলেন ভারতীয় দলে।

কদিন আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছেন কোহলিরা।
ছবি: এএফপি

সৌরভের নিশ্চয়ই মনে পড়ে সেই দিনগুলো। জীবন তাঁকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে। সৌরভের তাই উপলব্ধি, জীবন কখনো একভাবে মানুষের সামনে হাজির হবে না। কেউ এর ভালো দিকটা দেখবে, কেউ খারাপ, আবার খারাপ দিক দেখা মানুষই কিছুদিন পরে ঘুরে দাঁড়িয়ে তা উপভোগ করবে—এটাই জীবন।

ভারতীয় গণমাধ্যমকে আইপিএলের জৈব সুরক্ষাবলয় নিয়ে বলার সময়ই এমন ‘দার্শনিক’ সৌরভ গাঙ্গুলী। তাঁর মতে, জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই, ‘কেউ খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত থাকুক কিংবা ব্যবসা করুক, চাকরি-বাকরি নিয়েই থাকুক, জীবনে উত্থান-পতন থাকবেই। লড়াই করে যেতে হবে দাঁতে দাঁত চেপে। জীবনের পরতে পরতে চাপ আসবে, আসবে খারাপ সময়। সেগুলো মেনে নিতে হবে। একেকটা চাপ একেক রকম।’

সাফল্যের জীবনেও চাপ থাকে। সাফল্য পেয়ে যাওয়ার পরেও লড়ে যেতে হয়, সেটি সৌরভ খুব ভালোই বোঝেন, ‘প্রথম টেস্টে কোনো খেলোয়াড় হয়তো নিজেকে প্রমাণ করেছে। সে হয়তো দারুণ করেছেও। কিন্তু এর পরের চাপটা অন্য রকম। সেটা হচ্ছে অবস্থানটা ধরে রাখার চাপ। নিজের সেরাটাকে সে সময় প্রতিনিয়ত ছাপিয়ে এগিয়ে যেতে হয়।’

হোটেল রুম থেকে মাঠে যাওয়া, খেলার চাপ সামলানো, আবার হোটেল, আবার মাঠ। এরই মধ্যে পারফরম্যান্স নিয়ে চিন্তা। খুবই চাপের। এটা সম্পূর্ণ অন্য এক জীবন।
জৈব সুরক্ষা বলয়ের চাপ নিয়ে বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী

সৌরভ মনে করেন, এখন ক্রিকেটারদের জন্য বড় চাপ জৈব সুরক্ষাবলয়ে থেকে খেলা। করোনার এই সময়ে সুস্থও থাকতে হবে, ক্রিকেটীয় কার্যক্রমও চালিয়ে যেতে হবে। সেটি করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তবে সৌরভ মনে করেন, এই চাপ সামলাতে ভারতীয়দের জুড়ি নেই। করোনার এই সময় সেটি প্রমাণিত হয়ে গেছে, ‘বিদেশি ক্রিকেটার, বিশেষ করে ইংলিশ ও অস্ট্রেলিয়ানদের চেয়ে ভারতীয়রা জৈব সুরক্ষাবলয়ের চাপ নেওয়ার ক্ষেত্রে মানসিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী। ভারতীয় ক্রিকেটারদেরই সহ্যশক্তি অনেক বেশি। আমি নিজে ইংলিশ, অস্ট্রেলিয়ান কিংবা ক্যারিবীয়দের দেখেছি, এ ধরনের পরিস্থিতিতে চাপে পড়লে তারা একেবারে শেষ হয়ে যায়।’

আইপিএলের মতো একটা টুর্নামেন্টে জৈব সুরক্ষাবলয় নিয়ে অনেক বেশি কড়াকড়ি। এটা অবশ্য এখন সব জায়গাতেই। করোনার সংক্রমণের এই সময়ে ক্রিকেট মাঠে রাখতে এর বিকল্পও নেই। দিনের পর দিন মাঠ, হোটেল আর অনুশীলনের নেট—এরই মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ে ক্রিকেটারদের জীবন। বাইরের জগৎ, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কটা টিকে থাকে ভার্চ্যুয়ালি। ব্যাপারটা অনেক কঠিন।

করোনাকে পাশ কাটিয়ে শুরু হচ্ছে আইপিএল।
ছবি: টুইটার

কিন্তু সারা দুনিয়াতেই তো পরিস্থিতি কঠিন। এই সময় সৌরভের পরামর্শ একটাই, ‘ইতিবাচক থাকতে হবে সব সময়। গত ছয় থেকে সাত মাসে জৈব সুরক্ষাবলয়ের মধ্যে প্রচুর ক্রিকেট খেলতে হয়েছে। এটা খুবই কঠিন। হোটেল রুম থেকে মাঠে যাওয়া, খেলার চাপ সামলানো, আবার হোটেল, আবার মাঠ। এরই মধ্যে পারফরম্যান্স নিয়ে চিন্তা। খুবই চাপের। এটা সম্পূর্ণ অন্য এক জীবন।’

এই জীবনের অভিজ্ঞতা অবশ্য সৌরভের নেই। মাঠে নামার আগে করোনার মতো অদৃশ্য কোনো শত্রুর বিরুদ্ধে তো আর তাঁদের সময়ে লড়তে হয়নি!