সৌরভের ‘নিউ নরমাল’ জীবনের উপলব্ধি

করোনা-পরবর্তী বিশ্বকে বলা হচ্ছে ‘নিউ নরমাল’। যদিও দুনিয়া থেকে করোনাভাইরাস এখনো বিদায় নেয়নি। প্রতিদিন পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এ ভাইরাসে। মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। এ ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা না এলে আগের জীবনে ফিরে যাওয়া হয়তো সম্ভব হবে না।

করোনার মধ্যেই খেলাধুলা ফিরেছে মাঠে। ফুটবল, ক্রিকেটসহ সব খেলাই হচ্ছে, তবে আগের মতো করে নয়। জৈব সুরক্ষার ব্যবস্থা করে, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলছে খেলা। মাঠে খেলোয়াড়দের পদচারণ থাকলেও গ্যালারিতে দর্শকদের হল্লা-চিৎকার নেই। নিউ নরমালে খেলার মাঠে দর্শক ফিরতেও থাকতে হচ্ছে টিকার অপেক্ষায়। সে দিন কবে আসবে, নির্দিষ্ট করে জানা নেই কারওরই।

ভারতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এখনো চলছে। কিন্তু করোনার মধ্যেই মাঠে গড়াচ্ছে আইপিএলের আসর। নিজেদের মাটিতে আয়োজন সম্ভব নয় বলেই আয়োজনের মঞ্চ হিসেবে এবার বেছে নেওয়া হয়েছে করোনায় তুলনামূলক কম বিপর্যস্ত দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতকে। ভারতে না হলেও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি হিসেবে সৌরভ গাঙ্গুলীর জন্য ব্যাপারটা স্বস্তিরই। গত মার্চের ২৯ তারিখ আইপিএল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে যায় পৃথিবীর সবচেয়ে অর্থকরী এ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা। আইপিএল না হলে হাজার হাজার কোটি রুপি ক্ষতির শঙ্কা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত বিদেশের মাটিতে আয়োজন করা স্বস্তির ব্যাপারই।

সৌরভ সে স্বস্তি নিয়েই দুবাই গেছেন। কিন্তু যাত্রার সময় তিনি ঠিকই বুঝলেন সময়টা ঠিক আগের মতো নেই। সেই অনুভূতিটা ছড়িয়ে দিলেন সবার মধ্যেই। করোনা থেকে বাঁচতে ফেস শিল্ড, এর নিচে ফেস মাস্ক পরা সৌরভ নিজের একটা ছবিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রামে। তিনি লিখেছেন, ‘ছয় মাসের মধ্যে এটাই আমার প্রথম উড়োজাহাজ যাত্রা। আইপিএলের জন্য যাচ্ছি। জীবনযাত্রা অনেকটাই বদলে গেছে।’

আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে আমিরাতে। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে আইপিএল। জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করা হবে আইপিএলের প্রতিটি ম্যাচে। তবে আমিরাতে গিয়েই কাজে নেমে পড়তে পারবেন না সৌরভ। থাকতে হবে ৬ দিনের কোয়ারেন্টিনে। করোনার এই সময় জীবনযাত্রা বদলে যাওয়ার যে উপলব্ধি সৌরভের, সেটি কোয়ারেন্টিনে থেকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন ভারতের সাবেক এ অধিনায়ক।

গত অক্টোবরে বিসিসিআই সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর সৌরভের জন্য এটাই প্রথম আইপিএল। করোনার সময় এ টুর্নামেন্ট সফলভাবে আয়োজন করা তাঁর জন্য অন্য এক চ্যালেঞ্জ। অনেক কাঠখড় পুড়িয়েই যে মাঠে গড়াচ্ছে এ আসর।

করোনার সঙ্গে আইপিএলকে এবার পেরোতে হয়েছে চীনের বাধাও। সেটি যেন বিসিসিআইয়ের কাছে চীনের প্রাচীর পেরোনোর মতোই কঠিন কাজ ছিল। গত জুনে ভারত-চীন সীমান্তে এক সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর থেকেই ভারতজুড়ে চীন বিরোধী মনোভাব তুঙ্গে। সে মনোভাবের প্রতি সম্মান জানিয়েই সরিয়ে ফেলতে হয়েছে দারুণ লাভজনক টাইটেল স্পনসর। নতুন করে টাইটেল স্পনসর খুঁজেই মাঠে ফেরাতে হয়েছে আইপিএল। চীনা স্পনসর নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় বিসিসিআই ও সৌরভকে।

করোনার সময়টা কঠিনই ছিল সৌরভের জন্য। তাঁর পরিবারেও হানা দিয়েছিল এ ভাইরাস। আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁর বড় ভাই স্নেহাশিস গাঙ্গুলী। আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কায় ছিলেন তিনিও। যদিও পরীক্ষা করিয়ে ‘নেগেটিভ’ প্রমাণিত হয়েছেন তিনি। গত মে মাসে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আম্পানে পশ্চিমবঙ্গসহ কলকাতা শহরে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হলে রেহাই পায়নি সৌরভ গাঙ্গুলীদের পৈতৃক আবাসও।